নিলামতত্ব গবেষনায় অর্থনীতির নোবেল পুরষ্কার

শিক্ষকের মানমর্যাদা রক্ষা কি রাষ্ট্রের দায় নয়

ড: মিহির কুমার রায়: শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড এবং শিক্ষক হলেন তার বাহক। শিক্ষক শব্দটির সঙ্গে জ্ঞান, দক্ষতা, সততা, আদর্শ, মূল্যবোধ শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর মাঝে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয়ে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে তুলে। পিতা-মাতা একজন শিক্ষার্থীর জৈবিক জন্ম দাতা; কিন্তু একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানবিক পিতা। একজন শত শত বছর ধরে শিক্ষক এ মহান ও গুরুদায়িত্বটি পালন করেন বলেই, মানব সভ্যতায় শিক্ষকের ‘সামাজিক মর্যাদা’ বলে একটা বিষয় সমাজে রয়েছে। আমরা যে যত বড়ই হইনা কেন, আমরা সবাই কোনো না কোনো শিক্ষকের শিক্ষা নিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি। সুতরাং শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য এবং অবিস্মরণীয়। তাই শিক্ষকের মর্যাদার জায়গাটি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এ রকম অসংখ্য উদাহরন রয়েছে। 

প্রফেসর আব্দুস সালাম একজন পাকিস্থানি গবেষক যিনি ১৯৭৯ সালে পদার্থ বিদ্যায় নোভেল পুরস্কার পান যৌথভাবে। প্রফেসর সালাম এর জন্ম লাহোরে এবং ধর্ম্মীয়ভাবে তিনি আহম্মদিয়া সম্প্রদায়ের লোক। লাহোরের সনাতন হিন্দু কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় গণিতের শিক্ষক অনিলেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক গণিতের শিক্ষকের কাছে ১৯৩৪ সন থেকে ১৯৩৮ সন পর্যন্ত গণিত শিখেছিলেন যা তার গবেষনায় গণিতের ভিত রচনায় এক বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। এই স্মৃতিটি স্মরন করেই ১৯৮১ সালের ১৯শে জানুয়ারি তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দীরা গান্দীর সহযোগিতায় কলকাতায় এসে অনিলেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়ের বাসায় দেখা করতে যান যখন তিনি বিছানায় শয্যাশায়ী। প্রফেসর সালাম নোবেল পুরস্কারের ক্রেষ্টটি তার শিক্ষকের হাতে দিয়ে বলেন এই পুরস্কারের অংশিদার আমার চেয়ে আপনার বেশী। কারন আপনি আমাকে অংকের প্রতি যে ভালবাসা তৈরী করে দিয়ে ছিলেন পরবর্তিতে তা আমাকে গবেষনার কাজে অনুপ্রাণিত করেছিল। তারপর প্রফেসর  সালাম সেখান থেকে বিদায় নিয়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যা বিভাগে তার শিক্ষকের সাথে দেখা করতে এসে পায়ে ছুয়ে ছালাম করেন এবং তখন কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দ বাজার পত্রিকার ক্যামেরা ম্যান ফটো তুলে পরেরদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপিয়ে দেন “শিক্ষকের সন্মান” এই  শীরোনামে।

আবু হানিফা (রাহ.) শিক্ষকের প্রতি তার শ্রদ্ধার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমার শিক্ষক ইমাম হাম্মাদ (রাহ.) যত দিন বেঁচেছিলেন, তত দিন আমি তার বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। আমার মনে হতো, এতে যদি শিক্ষকের প্রতি আমার অসম্মান হয়ে যায়। স্বভাবতই শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। মহান আল্লাহতায়ালাও শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন। ফলে মুসলিম সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। মহানবী (সা.) ঐশী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মানবজাতিকে সৃষ্টিকর্তা, মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের নীতিমালা শিক্ষাদান করেছেন। তিনি নিজেই এ পরিচয় তুলে ধরে ঘোষণা করেছেন - ‘শিক্ষক হিসাবে আমি প্রেরিত হয়েছি (ইবনু মাজাহ: ২২৫)।’ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শিখ এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর, তাকে সম্মান কর’। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানও শিক্ষকদের সম্মানের চোখে দেখতেন। শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল ফজল লিখেছেন ‘৬৯-এর নভেম্বর মাসে ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘শক্ত কেন্দ্র কেন ও কার জন্য’ শিরোনামে প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু অভিনন্দন জানিয়ে তাকে পত্র লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পত্রের জবাবে অধ্যাপক আবুল ফজল যে পত্র লিখেছিলেন তার উত্তরে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন আপনার মতো জ্ঞানী, গুণী ও দেশপ্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে পারলে খুবই আনন্দিত হতাম। আবার যখন চট্টগ্রামে যাব, সাহিত্য নিকেতনে যেয়ে নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে দেখা করব। অধ্যাপক আবুল ফজলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফোন করে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক আবুল ফজলের অনুমতি নিয়েছিলেন বলে আবুল ফজল তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। সর্বজনবিদিত বিষয় যে, শিক্ষকের মর্যাদা অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে বেশি যা আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ। শিক্ষকের এ মর্যাদার বিষয়টি হুট করে আকাশ থেকে পড়েনি কিংবা মাটি থেকে হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেনি। সমাজের অভ্যন্তর থেকে শত শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় আমরা শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়টি আমাদের নীতি নৈতিকতার বোধ এবং উপলব্ধিতে প্রতিষ্ঠিত করেছি। 

কিন্তু আমরা যদি বর্তমান সমাজের দিকে তাকাই তবে দেখা যায়- সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। আগে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ভয় করত; কিন্তু এখন শিক্ষক ভয় করেন শিক্ষার্থীদের। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে বটে। সম্প্রতি শিক্ষকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘৃণিত, ন্যক্কারজনক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- ছাত্রনেতার লাথি, কিল-ঘুষির আঘাতে আহত হন শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের প্রভাষক, ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ১৯ দিন জেল খাটেন বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল, নড়াইল মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মিথ্যা অভিযোগে প্রশাসনের সামনে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। ভাবতেও অবাক লাগে কোন পরিস্থিতিতে আছে শিক্ষাগুরুর মর্যাদা। সর্বশেষ শিক্ষক লাঞ্ছনার যে ঘটনাটি ঘটে তা কোনো লাঞ্ছনা নয়, এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড! চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র, সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারের (দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কর্তৃক) নৃশংস হত্যা করা কি জাতির বিবেককে নাড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়! জানা যায়, অভিযুক্ত কুলাঙ্গার ছাত্রটি কলেজ মালিকের আত্মীয়। এতে বুঝতে পারা যায় এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো শক্তিও জড়িত থাকতে পারে। এখন দেখার বিষয় এর শাস্তি কী হয়, নাকি অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে পার পেয়ে যায়! ভাবতেও অবাক লাগে যে, কী ভয়ানক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সমাজ! শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষকের মৃত্যুর চেয়ে আর কি কোনো মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা আছে? বিশেষ করে, আশুলিয়ায় একজন শিক্ষার্থী একজন শিক্ষককে যখন পিটিয়ে হত্যা করল, তখন একজন শিক্ষক হিসেবে ভীষণ অসহায় বোধ করলাম। আমরা কোথায় আছি? আমরা কোথায় যাচ্ছি? সমাজের পতন কতটা হলে একজন শিক্ষার্থী তার নিজের শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলে এসব ভেবে ভেতরে ভেতরে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি! সত্যিকার অর্থে পুরো বিষয়টি ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আরো কষ্ট দিচ্ছে, এটা ভেবে যে, সাভারের আশুলিয়ার চিত্রশালায় এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা করার প্রতিবাদ করছেন শুধু শিক্ষকরা; কিন্তু কেন? সমাজের সর্বস্তর থেকে কেন এর তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে না? ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ পিয়ার সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে সবার সামনে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। সমাজের সর্বস্তর থেকে এ ঘটনার তুমুল প্রতিবাদ উঠে আসে এবং আমরা তখন লক্ষ করেছিলাম, সমাজে এখনো ‘শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা’ বলে কিছু একটা আছে। তাই একজন শিক্ষক অপমানিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছিল, গোটা সমাজ অপমানিত হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলা সে ঘটনার পর আমরা আশা করেছিলাম ভবিষ্যতে শিক্ষকদের অপমান করার বিষয়টি সমাজের অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিধিবাম! আমরা দেখলাম, একের পর এক শিক্ষকদের নানাভাবে অপমান করা, লাঞ্ছিত করা, জেলে পুরে দেয়া, এমনকি হত্যার ঘটনা ঘটছে। কিছু দিন আগে আমরা ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শিক্ষিকার টিপকান্ড, নওগাঁয় স্কুলে ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার ঘটনা, মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জেল খাটার ঘটনা দেখেছি। মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের ঘটনা আমরা জানি। হৃদয় মন্ডলকে জেলে পুরে রাখা হয়েছিল। অতিসম্প্রতি নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে ব্যাখ্যাতীত অপমান করা হয়েছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি? সর্বশেষ ঘটনা হচ্ছে, আশুলিয়ায় একজন শিক্ষার্থী তার নিজের শিক্ষককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ লেখা যখন লিখছি, তখন খবর পেলাম, কক্সবাজারের পেকুয়ায় ক্লাস চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসায় ঢুকে একজন শিক্ষিকাকে ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে এক দুর্বৃত্ত। তার অর্থ হচ্ছে, শিক্ষকরা ক্লাসের ভেতরও নিরাপদ না। অথচ একজন শিক্ষকের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হওয়ার কথা ছিল তার শ্রেণিকক্ষ। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হওয়ার কথা তার শিক্ষার্থী। অথচ সে শিক্ষার্থীর হাতেই একজন শিক্ষককে তার জীবন দিতে হয়েছে। পুরো ঘটনাটাই অত্যন্ত বেদনার, লজ্জার এবং ঘৃণার।

উৎপল কুমার সরকারের অপরাধ কী ছিল? বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, উৎপল কুমার সরকার স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান। হত্যাকারী ছাত্র আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ছিল। উৎপল কুমার আশরাফুলকে ইভটিজিং না করার জন্য কাউন্সিলিং করেছিলেন। শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ এজন্য একজন শিক্ষার্থী তার নিজের শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। যে শিক্ষার্থীই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা হওয়ার কথা সেখানে সে শিক্ষার্থীর হাতেই একজন শিক্ষককে জীবন দিতে হলো। তাই, এটাকে কেবলই একটি বিচ্ছিন্ন এবং সাধারণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনায় নিলে আমরা সমাজের ক্রমপতনশীল নৈতিক অধঃপতনকে কখনই বুঝতে পারব না। এটাকে সমাজের পতনের একটা নগদ নমুনা হিসেবে দেখতে হবে। ২৮ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎপল কুমার সরকার হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচার চেয়ে একটা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইচ্চারিত হয়েছিল আমরা সভ্যতার একটি চরম অন্ধকার পর্যায়ে বাস করছি, যেখানে একজন ছাত্রের হাতে একজন শিক্ষককে খুন হওয়ার চিত্র দেখতে হয়। এ ঘটনা শুধু সাধারণ কোনো অপরাধমূলক ঘটনা নয়। সভ্যতার অগ্রগতিকে টেনে-হিঁচডে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটা নিদর্শন হিসেবে এটাকে দেখতে হবে। তাই কেবল দোষীকে গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ সমাজকে নতুন করে রূপান্তরের পরিকল্পনা করতে হবে যেখানে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষকের মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে। একজন শিক্ষার্থী তার নিজের শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, এটা অত্যন্ত লজ্জার, ঘৃণার এবং অপমানের। এ লজ্জা শুধু উৎপল কুমার সরকারের একার নয়, এ লজ্জা শুধু শিক্ষক সমাজের নয়; বরঞ্চ এ লজ্জা এদেশের ১৭ কোটি মানুষের।

শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যতামূলক আচরণ করতে এখনকার অনেক শিক্ষার্থীদের বুক কাঁপে না। নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবস্থানে আছি আমরা। অথচ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষকরা হলেন পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। শিক্ষকতা শুধুই পেশা নয়, একটি মহান ব্রত। শিক্ষকের অপমান ও অশ্রদ্ধা কোনো জাতির জন্যই মঙ্গলজনক নয়। এভাবেই যদি শিক্ষকের অমর্যাদা চলতে থাকে তাহলে শিক্ষকদের মাঝে গুনগত শিক্ষা দেওয়ার তাগিদ, শক্তি কিংবা স্বদিচ্ছা কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। যার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে তার আন্দাজ করা যায় নিচের আলোচনা থেকেই -
শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি, দেশব্যাপী শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা এবং শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি। একজন শিক্ষক নিজের জ্ঞান-গরিমা, চলন-বলন, নীতি-নৈতিকতায় শুধু নয়, সমাজের দৃষ্টিতেও যত উঁচুতে উঠবেন, তিনি তত বড় শিক্ষক হবেন। সত্যিকারভাবে একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার জ্ঞানের আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজকে আলোকিত করতে। দেশ ও জাতি গঠনে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে। তাই আমাদের উচিৎ আমাদের শিক্ষাগুরুদের মন থেকে সম্মান করা, তাঁদের মন থেকে ভালোবাসা। আমি আমার সব শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমার শিক্ষাজীবনে আমাকে সর্বদা অনুপ্রাণিত করেছেন। সেই সাথে আমি শ্রদ্ধা জানাই দেশের সব স্তরের শিক্ষকগণের প্রতি, যারা অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও জাতির ভবিষ্যতের মজবুত ভিত্তি গঠনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের ওপর যেসব নিগ্রহ চলছে, নিষ্ঠুরতা দেখানো হচ্ছে, তার কয়েকটা সংযুক্তি আছে। একটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, যার সহজ শিকার সংখ্যালঘু শিক্ষকেরা। তাঁদের ওপর হামলা হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়, সাম্প্রদায়িকতার স্রোতটা প্রবল রাখা যায়, আবার শিক্ষকদের অবস্থানটা দুর্বল করে দেওয়া যায়। শিক্ষকদের অবস্থান দুর্বল করে কার লাভ? প্রশ্নটা তুলে আমরা যদি সেই অবিশ্বাস্য সময়ের দিকে তাকাই, যখন পাকিস্তানিরা জানত শিক্ষকেরাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ তৈরি করেছেন তাদের পথে, তাহলে উত্তরটা পেয়ে যাব। আলোচনা, সমালোচনা হবে- হোক। কিন্তু এসব ঘটনা সামনে রেখে আমাদের তো সমাজ, সামাজিকতা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়েও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এটাও চিন্তা করতে হবে যে, সামগ্রিকভাবে সমাজকে এরূপ প্রবণতার দিকে কোনো ক্রমেই ঠেলে দেয়া যাবে না। সমাজ যেন অধঃপতনের দিকে ধাবিত না হয় সেজন্য গভীর দরদ ও মর্মসহ চিন্তা করতে হবে। সুস্থ চিন্তার মধ্য দিয়ে সংকটের এই ঘোর আবর্ত থেকে সামগ্রিকভাবে মুক্তির যথাযথ উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে দেরি করাটাই হবে অন্তর্ঘাতমূলক। কেননা এসব চর্চার মধ্য দিয়ে একটি বিকারগ্রস্ত প্রজন্মই তৈরি হবে মাত্র! যারা সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কোনোভাবেই হিতকরি নয়।

‘শিক্ষা-সংস্কার’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ একদা বলেছিলেন: ‘দেশের লোককে শিশুকাল হইতে মানুষ করিবার সদুপায় যদি নিজে উদ্ভাবন এবং তাহার উদ্যোগ যদি নিজে না করি, তবে আমরা সর্বপ্রকারে বিনাশপ্রাপ্ত হইব- অন্নে মরিব, স্বাস্থ্যে মরিব, বুদ্ধিতে মরিব, চরিত্রে মরিব- ইহা নিশ্চয়। বস্তুত আমরা প্রত্যহই মরিতেছি অথচ তাহার প্রতিকারের উপযুক্ত চেষ্টা মাত্র করিতেছি না, তাহার চিন্তা মাত্র যথার্থরূপে আমাদের মনেও উদয় হইতেছে না, এই-যে নিবিড় মোহাবৃত নিরুদ্যম ও চরিত্রবিকার- বাল্যকাল হইতে প্রকৃত শিক্ষা ব্যতীত কোনো অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ইহা নিবারণের কোনো উপায় নাই।’ শিশুদের প্রতি আমাদের অবহেলা, অযত্ন আর উদাসীনতাই বেশি কাজ করে। পারিবারিক আবহের মধ্যে শিশুর যে মনন ও মানস গড়ে ওঠে পরিণত বয়সে তারই প্রতিফলন সমাজে প্রকাশিত হয়। চরিত্র গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থাকলেও পরিবারই শিশুর প্রধান শিক্ষালয়। কিন্তু এ কথা আমরা মনেই রাখি না কিংবা ক্বচিৎ মনে রাখলেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখি না। মনে রাখি না বলেই শিশুদের প্রতি পরিবারের প্রাথমিক দায়দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শিশুর মানস গঠনের দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত থাকার অভ্যাস আমাদের চরিত্রে বদ্ধমূল। শিশুদের মানস গঠনে পরিবারের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে চলার ফলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের মানুষের মতো মানুষরূপে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিবারের সামগ্রিক আবহ থেকে উন্মূল হয়ে বিচ্ছিন্ন এক জগতের তথাকথিত মানুষরূপেই বড় হয়ে উঠছে তারা। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ সর্বোপরি একজন সফল সামাজিক মানুষ হিসেবে কোথাও স্থানও করে নিতে পারে না। সমাজের মধ্যে থেকেও অসামাজিক এক গলগ্রহ হিসেবে ভাসমান জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়। শিশুদের নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং শিশুদের পরিবারের সব সদস্যের পক্ষ থেকে যথার্থ সময় দিতে হবে যাকে বলে ‘কোয়ালিটি টাইম’। কেননা বিপন্ন শৈশব থেকেই বিপর্যস্ত তারুণ্য- যা কেবল উচ্ছৃঙ্খলতার জন্ম দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্রকে ভারাক্রান্ত করে চলে।

কিছু দিন আগে আমরা ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শিক্ষিকার টিপকাণ্ড, নওগাঁয় স্কুলে ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার ঘটনা, মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জেল খাটার ঘটনা দেখেছি। দেখেছি সামাজিক নানা ধরনের প্রতিবাদও। তবু ভিন্ন আঙ্গিকে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। কোনো কিছু থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই যেন গ্রহণ করতে পারি না। তাই নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে কিংবা সাভারে শিক্ষার্থীর স্টাম্পের আঘাতে শিক্ষককে মৃত্যুবরণ করতে হয়! এসব ঘটনা লৌকিক কিংবা অলৌকিক যেভাবেই ঘটুক না কেন প্রতিটি ঘটনার শিকার শিক্ষক। আবার ঘটনার নিকটবর্তী হলে, কাছাকাছি গেলে, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এসব অমানবিক, অসামাজিক এবং অসমর্থনযোগ্য ঘটনাগুলোর প্রতিটিরই শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষক। এ রকম একেকটি কাণ্ড বাংলাদেশের একেক প্রান্তে একেক সময়ে ঘটলেও সেসব যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা তা আমরা মনে করতে পারি না, খুব সহজে মেনেও নিতে পারি না। দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন বলে আমরা যদি সরলীকরণ করে ফেলি তাহলে এসব অন্যায় অপরাধের প্রবণতা আরো বিস্তৃত হবে এবং এর সুষ্ঠু বিচার পাওয়াও সম্ভব হবে না কোনোদিন। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কি ন্যক্কারজনক এসব ঘটনার বিচার আদৌ চাই কি না?
অন্যান্য বহুবিধ পেশার মানুষের চেয়ে শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদার প্রকৃতি ও স্বরূপ একেবারেই যেন ভিন্ন। বাহ্যিক চাকচিক্য, জাঁকজমক এবং জৌলুসের বিপরীতে তা অদৃশ্য বটে কিন্তু অসীম। বাহ্যিক চাকচিক্য, জাঁকজমক ও জৌলুস নেই- কিন্তু অন্তর্গত অনুভবে শিক্ষকরা এসব লাভের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়েই শিক্ষক হন। দারিদ্র্যকে বরণের মধ্য দিয়ে মহত্ত্বকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে তোলেন। অর্থাৎ এসব আড়ম্বরপূর্ণ সহস্র চাহিদাকে জয় করে মানবিক ঐশ্বর্যেই সমাজে শিক্ষকরা বসবাস করেন- শিক্ষার্থীদের কর্মময় জীবনের আদর্শ, রুচি, সংস্কার-সংস্কৃতি এমনকি জীবনযাপনের অন্তর্গত অনুভব হয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে বিরাজ করেন। ‘বিরাজ’ শব্দটির ওপর আমরা বিশেষ জোর দিতে চাই- শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের অদৃশ্য গুণাবলির অস্তিত্ব সদাসর্বদাই অনুভব করে। যেসব শিক্ষকের কাছে আমাদের হাতেখড়ি, যাদের সৃষ্টিগুণ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকবর্তিকার মাধ্যমে আমরা মানুষ, সমাজ, ধর্মকর্ম, জ্ঞানবিজ্ঞান ও দর্শনের বোধ অর্জন করি সেসব শিক্ষকই আমাদের অন্তর্জগতে ব্যাপক অস্তিত্ব নিয়ে সদাই বিরাজমান। শৈশবের শিক্ষকরা তাই এখনো বর্তমান, শারীরিকভাবে মৃতরাও আমাদের কাছে আদর্শিকভাবে জীবন্ত ও উজ্জ্বল। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যকার এই সম্পর্কের ভেতর সাম্প্রদায়িকতার কোনো বাছবিচার নেই, নেই অবৈজ্ঞানিক চিন্তাপ্রসূত কোনো বিকারও। কেননা, তাদের জ্ঞান, দর্শন ও আদর্শের সূর্য আলোক-রশ্মি এখনো আমাদের জীবন চলার পথের পাথেয়। আমরা জীবন যুদ্ধের প্রাত্যহিক সংগ্রামে ব্যস্ত থাকলেও কোনো না কোনো সময় কোনো না কোনো শিক্ষকের অদৃশ্য মূর্তির সামনে দাঁড়াই- মুখোমুখি হই। শিক্ষকেরই জ্ঞানের দ্যূতি, দর্শনের আলো, বিজ্ঞানের যৌক্তিকতা জীবনযুদ্ধের সংগ্রামে আমাদের নিয়তই ভরসা যুগিয়ে চলে, পথ দেখিয়ে নেয়। আমরাও আশ্বস্ত হয়ে সংগ্রামশীল জীবনটাকে উদযাপন করি। নানা বর্ণের বর্ণিল উদযাপনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

প্রাচীনকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি সমাজে শিক্ষকরা আদর্শিক এক উচ্চতা নিয়ে অনন্য অবস্থানে বসবাস করেন। সেখানে বিত্তের বৈভব হয়তো নেই- অন্তরের অনাবিল ঐশ্বর্য আছে যা যুগ যুগান্তরকে আলোকিত করে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। আমরা মহামতি আলেকজান্ডারের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা সবাই জানি। তিনি শিক্ষকের মর্যাদাকে সম্মানিত করেছিলেন এই বলে যে, ‘আমি আমার জীবনের জন্য পিতার নিকট ঋণী আর জীবনকে কীভাবে যাপন করতে হয় সেই শিক্ষার জন্য এরিস্টটলের নিকট ঋণী।’ বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদাকে সর্বোচ্চে নির্দেশ করেছিলেন। কবি কাদের নেওয়াজের লেখা ‘ওস্তাদের কদর’ কবিতাটির কথাও আমরা অনেকে জানি। সেখানে বাদশা আলমগীর দেখেছিলেন রাজপুত্র শিক্ষকের পায়ে পানি ঢালছেন আর শিক্ষক নিজ হাতে নিজের পা প্রক্ষালন করছেন। এজন্য বাদশা আলমগীর শিক্ষককে নিরালায় ডেকে আনেন। কবিতায় তারপরের অংশ এরূপ : ‘সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে/ নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন/ পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ/ নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে/ ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে’/ উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে/ কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-/ ‘আজি হতে চির-উন্নত হল শিক্ষা গুরুর শির/ সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।’ সাম্প্রতিককালে আমরা নানাভাবে শিক্ষকদের ওপর আঘাত আসতে দেখছি, আঘাত আসছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপরও। একজন বিদগ্ধ ব্যক্তি তির্যকভাবে শ্লেষের সঙ্গে বলেছিলেন ‘মারতে মারতে সংখ্যালঘু যখন শেষ হয়ে যাবে তখন কিন্তু আঘাতগুলো সংখ্যাগুরুর ওপরই আসবে। কারণ মারণে-অলারা তাদেরকে টার্গেট করেছে যারা প্রগতির কথা বলে, বিজ্ঞানের কথা বলে, ন্যায়ের কথা বলে। সংখ্যালঘু দিয়ে শুরু, শেষটা হবে কিন্তু সংখ্যাগুরু দিয়েই।’ তাৎক্ষণিক আলাপচারিতায় এরূপ লঘু বক্তব্য একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবলে এ কথার গভীর সারবত্তা অনুভব করা যায় বৈকি। তাহলে কি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা ও আদর্শের ওপর ক্রমাগত আঘাতই আসতে থাকবে?

ভাবতে হবে এই আঘাত কীভাবে প্রতিহত করা সম্ভব? আমরা কীভাবে এ আঘাত প্রতিরোধ করব? শিক্ষকরা কি শিক্ষার্থীর প্রতিপক্ষ অবস্থানে দাঁড়াবেন? কোনো শিক্ষক কখনোই তা পারবেন না। শিক্ষার্থীর কল্যাণের জন্যই শিক্ষক কখনো বা কঠোরতা দেখান, কঠোর হন, এক ধরনের চাপ দিয়ে শিক্ষার্থীর ভেতরকার অকল্যাণ বিনাশের মাধ্যমে কল্যাণ ও মঙ্গলের আবাহন করেন।

লেখক: অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাভার, ঢাকা ও সিন্ডিকেট সদস্য।


Comment As:

Comment (0)