Abdul Momen

দুবাইয়ে বিনিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি

আব্দুল মোমেন: ইউটিউবে দুবাইকে অনেক রঙ্গিন মনে হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সাদাকালোর চেয়েও অস্বচ্ছ! কিন্তু কেন?

দুবাই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজনেস হাব। বড় বড় অট্টালিকা, দালান-কোঠা, রাস্তাঘাট দেখে মনে হবে এখানে শুধু টাকা আর টাকা। সারা বিশ্বের ধনকুবেরা দুবাই আসছেন ইনভেস্ট করার জন্য কারণ এখানে Return of Investment(ROI) অনেক ভালো।

বিশ্বের সব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির অফিস আছে দুবাইতে। কয়েক লক্ষ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ওয়্যারহাউস আছে। বিশ্বের নামি দামি কর্পোরেট জগতের সিইওরা বিজনেস গেট টুগেদার করেন এখানে। বিজনেস নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য দুবাই বিশ্বসেরা।

এগুলো সব ঠিক আছে, কিন্তু সবার জন্য নয়।

যেহেতু, স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই নেটওয়ার্কিং করতে ভালো লাগে, তাই সারা বিশ্বব্যাপী আমার অনেক শুভাকাঙ্খী আছেন। যারা প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করেন দুবাইতে ইনভেস্ট করলে কেমন হয়?

বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে সত্য কথা বললে আমার উপর মন খারাপ করেন। কেননা, আমি নিজে ভিকটিম কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে। তাই চাই না কেউ আমার মত ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তারপরও যারা দুবাইতে ইনভেস্ট করতে চান তারা যদি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখেন তাহলে অবশ্যই লাভবান হবেন ইনশআল্লাহ।

১. যারা চাকুরীর জন্য আসবেন অবশ্যই নিজেকে দক্ষ, স্মার্ট, যুগোপযোগী, বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী, আইটি, মার্কেটিং ও টেকনিক্যালি অত্যন্ত সাউন্ড হয়ে আসতে হবে। এদেশে এসে শিখবেন এই সুযোগ কোনো কর্পোরেট অফিস আপনাকে দিবে না।

২. অবশ্যই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে নতুবা ইন্টারভিউ বোর্ডে ডিসকোয়ালিফাই হতে পারেন।

৩. পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলন, কথাবার্তায় বিনয়ী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে।

৪. সাহসী ও কনফিডেন্ট হতে হবে।

৫. শত কষ্টের মাঝেও হাসিমুখে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

আর যারা ব্যবসা করতে চান তাদেরকে মাথায় রাখতে হবে, যে প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস করতে চাচ্ছেন উক্ত প্রোডাক্টস/বিজনেস সম্পর্কে আপনার পুরোপুরি ধারণা আছে কিনা? এমপ্লয়ী কিংবা পার্টনারের উপর ডিপেন্ড করবেন তো মরবেন। মনে রাখবেন, বাস-ট্রাকের মালিক হতে হলে আগে আপনাকে হেল্পার হতে হবে। নচেৎ মাছের লেজ খেতে হবে।

৬. অনেকেই এদেশে এসে সুপার শপ, গ্রোচারী শপ, গাড়ির গ্যারেজ দিতে চান। মনে রাখবেন, যারা উক্ত বিজনেসে সফল হয়েছেন তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে যেটা আপনি অনেক টাকা ইনভেস্ট করলেও তাদের মত ফায়দা পাবেন না।

স্বল্পশিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা যেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন আপনি উচ্চ শিক্ষিত হয়েও যদি একই জায়গায় ইনভেস্ট করেন তাহলে কিন্তু সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তারা যে লোড নিতে পারেন সেটা আপনি পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

যেমন- দুবাইতে সবচেয়ে দামি ও লাভবান বিজনেস হচ্ছে আইটি, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, প্রপার্টি বাই-সেল-রেন্ট, চিকিৎসা, ব্লকচেইন, সাপ্লাইচেইন এবং মার্কেটিং সেক্টর।

অনেকেই মাসে এক থেকে তিন লক্ষ দেরহাম ইনকাম করেন উক্ত বিজনেসগুলো থেকে! আমার সৌভাগ্য হয়েছে বিভিন্ন বিজনেস নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রামে তাদের সফলতার গল্প শোনার।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু ফাইনান্সিয়ালি সলভেন্ট।

তারা উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন, At Sight LC, Back to Back LC, Upass LC, Deferred LC, BG, SBLC ও অন্যান্য।

আপনি যদি উক্ত ফ্যাসালিটিসগুলো উপভোগ করতে না পারেন তাহলে কিন্তু কম্পিটিটরদের কাছে সবদিক দিয়ে হেরে যাবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো নিতে হলে কিন্তু শর্টকাট পদ্ধতি এপ্লাই করলে চলবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সহি পথ অবলম্বন করতে হবে।

তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ কারো অসত্য প্ররোচনায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে দেউলিয়া হবেন না।

লেখক: দুবাই প্রবাসী উদ্যোক্তা ও বিজনেস এ্যাডভাইজর।


Comment As:

Comment (0)