মিহির

ব্যাংক ঋণ, কৃষকের স্বার্থ ও খাদ্য নিরাপত্তা

ড: মিহির কুমার রায়: অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক সভায় বলেন ব্যাংক খাতে কৃষককে ঋণ সহায়তা দেয়া সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ যার ফলে কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে কৃষিকাজে অধিক মনোযোগী হয়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখতে পারছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষকের পাশে দাঁড়াবে, সেটিই অর্থনীতি-সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।

উল্লেখ্য, প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং লক্ষ্যমাত্রার যে পরিমাণ  ঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করতে পারে, সে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমা নিয়ে নেয়। এ অর্থের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের সুদ দেয় না বিধায় পরবর্তী বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে অর্থ ফেরত পায় বাণিজ্যিক ব্যাংক। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরাসরি ও বিভিন্ন এনজিও বা সংস্থার মাধ্যমে ঋণ  বিতরণের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ব্যাংকগুলোকে সরাসরি বিতরণ করতে হয়। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশই অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার সুযোগ থাকে। এবারের বৈঠকে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ৩০ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ৫০ শতাংশে উন্নীত করার তাগিদ দেন গভর্নর এই যুক্তি দিয়ে যে ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করলে ৮ শতাংশ সুদে কৃষক পর্যায়ে ঋণ পৌঁছানো সম্ভব হয়, অথচ এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করলে ২২-২৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হয় কৃষককে। বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ কৃষকের হাতে সরাসরি সহজ শর্তে ঋণ পৌঁছে দিলে তাতে কৃষকেরই উপকার হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে কৃষকের জন্য কৃষি কাজে ঋণের টাকা ব্যয় করায় ভোগান্তি থাকে না। কারণ এনজিওগুলো অনেক বেশি সুদে কৃষকের কাছে ঋণ বিতরণ করে। এমনিতেই কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না, এমন অভিযোগ কঠিনভাবেই রয়েছে। এর সঙ্গে সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকের জন্য ফসল উৎপাদনের  ব্যয় অনেক বাড়িয়ে তুলেছে। এ অবস্থায় কৃষি কাজের খরচ বেড়ে গেলে কৃষক যেন উৎপাদন বিমুখ হয়ে না পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই এনজিওর মাধ্যমে বেশি সুদে ঋণ নিলে সেটি কৃষকের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না। মূলত এ জায়গাটি বিবেচনা করেই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এ আহ্বান। কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে, যা  বর্তমানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রতি বছরই কৃষি ও কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ  বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থ বছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারী ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট  ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.৫৬ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের  (এমএফআই) মাধ্যমে ১০ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২ জন নারী। এছাড়া গত অর্থবছরে ২৪ লাখ ৯৯  হাজার ৯৪৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা এবং চর, হাওড় প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৪ হাজার ৭৩ জন কৃষক প্রায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে সারাদেশে ১০ হাজার ৭৩৯টি ব্যাংক শাখা রয়েছে যা ৪৮% গ্রাম এলাকায় অবস্থিত।  তারপরও দেশের মোট বিনিয়োগের মাত্র ১০% এখন পর্যন্ত গ্রামীন অর্থনীতিতে কৃষি/অকৃষি কাজে ব্যায়িত হয়। নীতিমালায় বলা হয়, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কৃষকদের কাছে কৃষি ঋণ  সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচীতে বেশ কিছু বিষয় সংযোজিত হয়েছে। তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে ভূমিকা রাখলেও কৃষক বরাবরই বঞ্চিত ও উপেক্ষিত থেকেছেন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব নীতি নেয়া হয়, তার সুফল কৃষকদের কাছে পৌঁছায় না। নির্দিষ্ট  অংকের ব্যাংক ঋণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন বিশেষ প্রণোদনা ও রেয়াতি সুদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও ঘোষণা করা হচ্ছে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষিতে বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকারও। এসব নীতির সুফল কৃষকদের আর্থিক দীনতা কাটাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে ভূমিকা রাখলেও কৃষক বরাবরই বঞ্চিত ও উপেক্ষিত থেকেছেন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব নীতি নেয়া হয়, তার সুফল প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌঁছায় না। 

ব্যাংক খাতের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের কর্মকর্তারা মনে করেন প্রান্তিক পর্যায়ের এ ঋণ তুলনামূলক ঝুঁকিমুক্ত যা খেলাপি হয় না এবং মনে রাখতে হবে  কৃষককে অবহেলা করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় যার জন্য কৃষি ঋণ বিতরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।  অথচ সরল বিশ্বাসের মেহনতী কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যা প্রত্যাশিত ভাবে হয়নি। যাই হোক, অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যে কোনো সিদ্ধান্তই পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও কৃষিখাতে ঋণ প্রদানের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছে।  সব মিলিয়ে উদ্দেশ্য যেহেতু কৃষককে ঋণ সহায়তা দেয়া, তাই এটি যতটা সহজলভ্য হিসেবে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ কৃষির উন্নয়নের জন্য যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেটি যথার্থ এবং অনাবৃষ্ঠি/খরা থাকলেও আমন উৎপাদন বাম্পার হয়েছে, কৃষকের মুখে হাসি বিধায় বেশি উৎপাদন করতে পেরেছে, এখন চ্যালেঞ্জ, হচ্ছে বোরো যার উৎপাদন ঠিকমতো করতে হবে  সেচের ব্যবস্থার মাধ্যমে যেখানে  বিদ্যুৎ সংযুগের প্রয়্জোন হবে; আরও একটি চ্যালেঞ্জ সেটি হচ্ছে রাসায়নিক সার তা যেন কৃষককে সময়মতো দেয়া যায়; তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে কৃষক যেন আমন ধানের যথার্থ মূল্য পায়। অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য হলো এটি আশার কথা যে গ্রামে ঋণ প্রবাহ বেশি বাড়ছে ও এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে গ্রামকে অর্থনৈতিক  কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় শহর থেকে যে কারণে শহরে ঋণ ও আমানত দুটোই বেশি। কিন্তু  কৃষি বা শিল্প উৎপাদন সবই গ্রাম কেন্দ্রিক, কেননা শিল্পের বেশিরভাগ কারখানাই গ্রামে তথা কৃষি উৎপাদন তো পুরোটাই গ্রামভিত্তিক। আগে গ্রামে আমানত বেড়েছে; কিন্তু ঋণ বাড়েনি। ফলে গ্রামের টাকা শহরে চলে এসেছে। এখন গ্রামে আমানত বাড়ার পাশাপাশি ঋণও বাড়তে শুরু করায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়বে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে সহায়ক হবে।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় গ্রামে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ  নেওয়া হলেও তা বাড়নো যাচ্ছিল না। কারণ গ্রামে ঋণের চাহিদা কম। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়, খাদ্য  আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়ে। তাই বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে কম সুদে ঋণ দিতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। তৈল বীজ উৎপাদনে গঠন করা হয়েছে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকার পল্লি ও কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আরও কিছু তহবিলের আওতায় গ্রামে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে।

এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারী/সরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। এখন আমাদের ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে যেতে জিডিপি প্রবৃদ্দি ৮.৫ শতাংশ থেকে ১০.০ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন রয়েছে যা কেবল গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিচালিত গ্রাম্য পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমেই সম্ভব যার বেশীরভাগ খাদ্য পণ্য যার সাথে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে।

এখন আমাদের সময় এসেছে এই সকল বিষয়গুলোতে বহুমাত্রিক চিন্তা ভাবনা করার। যেমন-

এক: আমাদের নিবিড় চাষবাস বিশেষত:  কৃষি যান্ত্রীকিকরণের মাধ্যমেই করতে হবে এবং এই দায়িত্বটি সনাতনী কৃষকের দ্বারা পালন সম্ভব হবেনা। তাই কৃষি উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে প্রশিক্ষিত হয়ে, তবে কৃষককে বাদ দিয়ে নয়।

দুই: শস্য বিশেষ করে খাদ্য শস্য (ধান) উৎপাদনের জাত, জমি কর্ষণ, সেচ সরবরাহ, কীটনাশকের ব্যবহার ইত্যাদিতে আধুনিকায়ন হয়েছে কিন্তু ব্যবসাভিত্তিক যে একটি নীতিমালার মাধ্যমে প্রযুক্তির ফলে যে উৎপাদন বাড়ছে তার সুফল পাওয়ার জন্য যে একটি সুসংগঠিত বাজার ব্যবস্থার প্রয়োজন তা অনেকাংশে নেই যার সাথে ব্যবসার লাভ-ক্ষতি জড়িত। তাই এ ধরনের বিনিয়োগভিত্তিক  কৃষি ব্যবসা হতে হবে রপ্তানীমুখী যার জন্য যত ধরনের সহায়তা দরকার তা দিতে হবে সরকারের বাণিজ্য, অর্থ ও বিমান মন্ত্রণালয়কে। কৃষি পণ্যের ব্যবসা হতে হবে একটি সুসংগঠিত শিল্প যেখানে একদিকে থাকবে উৎপাদন এবং অন্যদিকে থাকবে বিপণন। সরকারের অর্থায়ণে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অনেক গ্রাম্য হাট বাজার তৈরী হলেও তাদের সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে তেমন স্থায়িত্ব পায় না যা প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতা মাত্র,

তৃতীয়ঃ গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তরে ষাটের দশকে সমবায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিপণনের ক্ষেত্রে এবং সমবায় সমিতিগুলো ভূমিকা তখন দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ শিল্পের প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা স্বাধীনতার ৫২  বছর পড়েও সারা দেশে তাদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে পাড়েনি। আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুগ্ধ উৎপাদনকারীও জাতীয়ভাবে খুব যে রেকর্ড পরিমাণ দুগ্ধ খামারের মাধ্যমে উৎপাদন করতে পেড়েছে তাও বলা যাচ্ছে না। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বিষয়টি একটি বন্ধ্যাত্তের মধ্যে পড়ে রয়েছে। আশির দশকে সরকারের পৃষ্টপোষকতায় কৃষি ব্যাংক তার পশুপালন শাখার মাধ্যমে দুগ্ধ খামারীদের অর্থায়নে এগিয়ে এসেছিল কিন্তু সে সকল খামার লাভজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পাড়েনি উপকরণ খরচ ও উৎপাদিত দুধের মূল্যের ব্যবধানের কারণে।

এখানে প্রশ্ন আসে প্রযুক্তির এবং কেবল তরল দুধ বিক্রি না করে তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে যদি দুগ্ধজাত দ্রব্য বাজারজাতকরণ করা যেত তাহলে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশী দেখা যেত। কিন্তু কৃষি ব্যাংকের অর্থায়ন এই  দিকগুলো বিবেচনায় না নিয়েই খামার তৈরীতে অর্থায়ন করা হয়েছে যা সঠিক নয়। একই অবস্থা পোলট্রি শিল্পের, সেখানে ঔষধ ও খাদ্যের দাম  প্রবল হওয়ায় বিগত দু’বছরে প্রায় ১ হাজার খামারী ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে পোল্ট্রি খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে এবং আরও বন্ধ হওয়ার পথে  রয়েছে ১ হাজার খামার। এ ঘাটতি পূরনের জন্য সরকার ডিম ও মাংস আমদানী করে থাকে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় কিন্তু খামারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে কে?

চতুর্থতঃ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে দাড়িয়েছে জমি ক্রয় বিশেষত: রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আয়কৃত গরীব মানুষের অর্থে যা একটি অনুৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগ। এই সময়ে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে পরামর্শ দেয়ার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান যদি থাকে তা এই বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতে পারে; সর্বশেষে বলা যায় বিনিয়োগ অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র এবং এই ধারাকে যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধরে রাখা যায় তাহলে গ্রামীন অর্থনীতি থেকে আভ্যন্তরীণ উৎপাদনে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি পাবে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। 

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)