মিহির

শিক্ষা ও নৈতিকতা: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

ড: মিহির কুমার রায়: গত ২৭ শে নভেম্বর রবিবার রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স  ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) আয়োজিত ‘শিক্ষা এবং নৈতিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষনে শিক্ষামন্ত্রী ডা.  দীপু মনি বলেন আমি হয়তো খুব দক্ষ মানুষ হিসেবে তৈরি হলাম, কিন্তু আমার ভেতরে যদি নৈতিকতা বোধ না থাকে তাহলে সেই শিক্ষার কোনো মূল্য নেই, সঠিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, সহমর্মিতা ও পরমতসহিষ্ণুতা  শেখাতে হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক বড়। আবার একইভাবে শিক্ষকদেরও আগের সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে, কেবল  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, এর বাইরে পরিবার ও সমাজের নৈতিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে।

সেমিনারের আলোচনায় আরও উঠে আসে শিক্ষকরা নীতিবিদ্যা পড়ান চাকরির স্বার্থে আর শিক্ষার্থীরা তা পড়েন পরীক্ষায় পাস করতে যার বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি-নৈতিকতার কোনো চর্চা নেই। এমনকি পরিবারগুলোও এখন আর নৈতিকতা শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে না। সমাজ ব্যবস্থায়ও অনিয়ম অন্যায় ও অবিচারের কাছে নৈতিকতা অসহায় হয়ে পড়েছে। বক্তারা আরও বলেন আগে ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মত এমন অনেক মাধ্যমে নৈতিকতা চর্চা শেখার সুযোগ ছিল। এখন গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আর আস্থা নেই, সমাজতন্ত্রের প্রতিও মানুষ আগ্রহ হারিয়েছে, যখন রাষ্ট্রে  অপসংস্কৃতি প্রবল এবং সংস্কৃতি নির্জীব, অপসংস্কৃতিকেই যখন রাষ্ট্রে সংস্কৃতি আখ্যা দেয়া হচ্ছে, তখন সে পরিস্থিতিতে  স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে নীতিবিদ্যা ও নীতি শিক্ষাকে স্থান দেয়া কঠিন। নীতি শাস্ত্রের সফল বিকাশ ঘটাতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি এর সঙ্গে  পরিবার সংযুক্ত থাকে তাহলে বিকাশটি আশানুরূপ হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সমাজ বাস্তবতা পাল্টেছে, পরিবারের ভেতর নীতির চর্চা কমেছে, কোনো কোনো পরিবারে নীতির জায়গা নিয়ে নিয়েছে দুর্নীতি, তার পরও অনেক পরিবার তাদের  পোষ্যদের মূল্যবোধ চর্চায় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘরের বাইরের জগতে নৈতিকতার স্খলন ও অভাব  থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতি চর্চাকে উৎসাহিত না করলে পরিবারগুলোর উদ্যোগে শুধু একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে  যাওয়া  সম্ভব। আমাদের দেশে যে পরীক্ষা নির্ভর, সনদমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত, তাতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধার পরিচয় পাওয়া যায় না, বিকাশ ঘটা তো দূরের কথা। এ শিক্ষা নৈতিকতার বিকাশে সহায়ক নয়। সৃজনসীল শিক্ষার মধ্যে এখন ঢুকে গেছে সাম্প্রদায়িকতা যা  নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রে তোলপাড় সারাদেশ জুড়ে। শুধু সমাজের দুর্বলতা দেখলে হবে না। এ থেকে  উত্তরণে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমরা কী করছি সেগুলোও দেখতে হবে। আমরা ক’জন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে  রাতের খাবার খাই? ক’জন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যাই? আমরা অনেকেই নানা কথা বলি, কিন্তু  বাস্তবে নিজেরাই তা অনুসরণ করি না। পরিবর্তনটা নিজের জায়গা থেকে, পরিবার থেকে শুরু করতে হবে, ব্যক্তি  নিয়ে সমাজ, সমাজের পরিবর্তন নাহলে রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব নয়।

অতি সম্প্রতি স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন ভবিষ্যৎ রূপকল্পের বাংলাদেশ গড়তে হলে ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলা মুখস্থনির্ভর আর পরীক্ষায় উগড়ে দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে চলবেনা বরং শিক্ষাকে আনন্দময় করতে হবে, সমস্যা সমাধানে  দক্ষতা বাড়াতে হবে, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে এবং এসব কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষার  জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, এজন্য গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল, ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড এডুকেশন মাস্টারপ্লান চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে এবং অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষায় প্রযুক্তির মেলবন্ধন করা হচ্ছে। এগুলো হলো সরকারের গতানুগতিক পরিকল্পনার কথা কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উচ্চশিক্ষায় মানসম্মত ও নৈতিকতার আলোকে উদ্ভাসিত শিক্ষকদের বড়ই স্বল্পতা এবং শিক্ষার মান নিয়ে সমাজের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, অভিবাবক এমনকি সরকারপ্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন রয়েছেন। অনেকে বলেন প্রাচ্যে এমন একটা সময় ছিল যখন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা চাকরির অপেক্ষায় না  থেকে গবেষণা ছাত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতো এবং শিক্ষকদেরও অনেক অনুপ্রেরণা থাকত। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর অনেক স্বল্পতা রয়েছে এবং বর্তমানে গবেষণারত এমফিল/পিএইডি ছাত্রদের কাছ থেকে প্রায়শই একটি অভিযোগ পাওয়া যায় যে তারা তত্ত্বাবধায়কদের কাছ থেকে তেমন কোন কার্যকরি সহযোগিতা পান না যা উচ্চতর গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা বলে বিবেচিত। দেশের পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ্য জ্ঞানতাপস ব্যাক্তি পাওয়া দুষ্কর, দেশের উচ্চ শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ আছে তা অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২ শতাংশ এরও কম, গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে বিশেষত: বরাদ্দ ও আগ্রহী গবেষকের সংখ্যাধিক্ষের ভিত্তিতে। তারপরও কেহ কেহ মনে করেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান নির্বাহী হিসাবে উপাচার্য যদি  মনে করেন আদর্শ আর নৈতিকতার মানদন্ডে তিনি তার শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে পরিচালনা করবেন তাহলে কি কোন বাধা আছে? উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের  দুটি নীতি নির্ধারণী ফোরামের যথাক্রমে সিন্ডিকেট ও একাডেমি কাউন্সিলের সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার   কর্নধার হিসাবে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন শিক্ষার মান বাড়ছে না? কেনইবা ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং এ বিশ্বের এক  হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থান করে নিতে পারছেনা কিংবা আঞ্চলিক পর্যায়েও নয়।

পত্রিকার পাতায় এখন প্রধান শিরোনাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কার্যকলাপ যা বিশ্ময়কর অথচ  তাদের নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী বিশেষত অবস্থানের কারণে। উপাচার্যের পদটি এটি কোন ব্যক্তি নয় একটি প্রতিষ্ঠান যাকে ঘিরে  এই প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হয় জ্ঞানচর্চার অনুশীলনক্ষেত্র, জ্ঞানী গুণীদের সমাবেশ, মুক্ত বুদ্ধি চর্চার তীর্থ কেন্দ্র, যুক্তি পিঠে পাল্টা যুক্তি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিভিন্ন কারণে বিগত দু’দশকে দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছে আবার  বেসরকারি খাতেও বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলো কিন্তু বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যগণ তাদের পদমর্যাদার  সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এমন কিছু কার্যকলাপে জড়িত হচ্ছেন যা এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য কলঙ্কজনক। জাতি কি দিনের পর দিন এ সব অপবাদ  কিংবা অনুযোগ বয়ে বেড়াবে? কিন্তু উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের মানের ওপর নির্ভর করছে শিক্ষা তথা শিক্ষার্থীর  মান উন্নয়ন এবং প্রায়শই পাবালিক বিশ্ববিদ্যালয় পাঠরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যে শ্রেণী কক্ষে অনেক শিক্ষক পাঠদানে মনোযোগী নন,  ক্লাসে সময়মত উপস্থিত হন না, প্রশ্ন করলে ছাত্রদের ওপর বিরক্ত হন, পরীক্ষায় নম্বর প্রদানে ও ফল প্রকাশে অনিয়ম ইত্যাদি যা  নৈতিকতা বিপর্যয়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। কিন্তু প্রসাশনিকভাবে এ বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ  উপস্থাপিত করছেন কিংবা কোন শিক্ষক অভিযুক্ত হয়েছেন তেমনটি খুবই কমই শুনা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে আরও কিছু চিত্র  দেখা যাচ্ছে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী হয়রানি কিংবা ছাত্র নেতা কর্তৃক ছাত্রী হয়রানি যদিও তা প্রমাণ করা দুরূহ ব্যাপার। 

প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রথম পাতায় দেখা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা যেমন উপাচার্য অপসারণের ছাত্র ছাত্রীদের মিছিল, মানববন্ধন, পরীক্ষা বর্জন, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি। এর কারণ হিসাবে চিহিৃত হয়েছে কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার প্রদানে/পরীক্ষায় অসচ্ছতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার আনুকল্যসহ আরও অনেক কিছু অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি আগ্রহী। এখন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতার উপাদানটি বর্তমানে খুবই উপেক্ষিত হয়ে আসছে যার প্রধান কারণ শিক্ষা দর্শন থেকে শিক্ষকের বিচ্যুতি ও  অর্থনৈতিক প্রাপ্তিতে আগ্রহ যাকে এক কথায় বলা হয় শিক্ষায় বাণিজ্য এবং ব্যাপারীর ভূমিকায় শিক্ষক। বর্তমানে  পেশা হিসাবে শিক্ষকতা অনেকটা লাভজনক। বিশেষত: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে আর উচ্চশিক্ষায় বিশেষত:  বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরামর্শক খন্ডকালীন শিক্ষক, গাইড বই তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে। এতে করে শিক্ষক যখন নগদ প্রাপ্তিতে আসক্ত  হয়ে যায় তখন শিক্ষা দর্শনের যে মুখ্য বার্তা আলোকিত, উজ্জীবিত ও মানসম্মত নৈতিকতাভিত্তিক জনবল তৈরি করা, যারা হবে সমাজমুখী  ও কল্যাণমুখী সেটা হয় উপেক্ষিত। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা এখন সেই তিমিরে বিরাজ করছে যা থেকে উঠে আসা সহজ হবে না যদিও অসম্ভব নয়। ভর্তি নিয়ে অনিয়ম আগেও হয়েছে, হলে সিট বণ্টনে ছাত্র রাজনীতির প্রভাব এখন শত ভাগ,  রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য হওয়া এখন স্বাভাবিক ব্যাপার এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র রাজনীতি প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাও সত্যি। তাহলে লেখাপড়া বা শিক্ষা কার্যক্রম বা গবেষণা কার্যক্রম দিকভাল করার দায়িত্বটি কি ছাত্র রাজনীতির বাহিরে রয়েছে যা  বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত শিক্ষাকগণ কি জানেন তাদের শিক্ষকগণ কখন ক্লাসে উপস্থিত  হন, কখন ক্লাস ত্যাগ করেন, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অফিস সময়ে ক্লাস নিতে যান এবং একি সঙ্গে  একের অধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুবিধা ভোগ করেন? সর্বস্তরের এ অচলাবস্থা শিক্ষকদের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে যা মানসম্মত শিক্ষার  পথে প্রধান অন্তরায়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় যেহেতু সমস্যাটি একদিনে তৈরি হয়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষার ও গবেষণার মান উন্নয়নে এটাই হোক সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ যা হবে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।

লেখক: অধ্যাপক(অর্থনীতি), ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনির্ভাসিটি ও সাবেক জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি,  বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবীদ সমিতি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)