মিহির

খাদ্য নিরাপত্তা বনাম কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি

ড: মিহির কুমার রায়: খাদ্য নিরাপত্তার সংজ্ঞা অনুযায়ী তখনই খাদ্য নিরাপত্তা বিরাজমান যখন সবার কর্মক্ষম, স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনমুখী জীবন যাপনের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের লভ্যতা ও প্রাপ্তির ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। ১৯৯৬ সালে রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগদানকারী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরা নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য প্রাপ্তিকে প্রত্যেক মানুষের অধিকার হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেন। আমাদের জাতীয় খাদ্য নীতিতে (২০০৬) খাদ্য নিরাপত্তায় চিহ্নিত তিনটি নিয়ামক হলো খাদ্যের লভ্যতা, খাদ্য প্রাপ্তির সক্ষমতা ও খাদ্যের জৈবিক ব্যবহার। সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে সব কয়টি নিয়ামক গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোর মধ্যে সুনির্দিষ্ট  পারস্পরিক নির্ভরতা বিদ্যমান থাকায় খাদ্য নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সব বিষয়ে সুষম ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে শর্করা (চাল, গম, আলু), আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল), স্নেহ পদার্থ (ভোজ্যতেল, দুগ্ধ জাতীয় খাবার), মিনারেলস (শাক সবজি), মসলা (পেঁয়াজ, রসুন, আদা) ও পানীয় (চা, কফি)।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ বছরের বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সম্মানজনক স্থানে থাকলেও (যেমন চাল উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম,  সবজি উৎপাদনেও বিশ্বে তৃতীয়, মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় আর চাষকৃত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে, সামুদ্রিক মৎস আহরণের ক্ষেত্রে অবস্থান বিশ্বে ১১তম) গম, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা যা আমদানি নির্ভর, ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভরতার কাছাকাছি পৌঁছলেও তরল দুধ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে রয়েছে। উপাত্ত বলছে ১৯৭২-৭৩ সালে দেশে মোট খাদ্য শস্যের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ টনে। এ  সময় খাদ্য শস্যের উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ হারে, এতে উদ্বৃত্ত থাকার কথা অনেক খাদ্য শস্যের। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা অন্যরকম। জাতিসংঘের খাদ্য ও  কৃষি সংস্থার (এফ.এ.ও) তথ্যানুসারে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে ১৪৯.৮ কেজি খাদ্য শস্য গ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশে যদি তার পরিমাণ ১৮২.৫ কেজি ধরা হয়  এবং শতকরা ২৫ ভাগ বীজ, পশু খাদ্য ও অপচয় ধরা হয়, তাহলে মোট খাদ্য চাহিদা দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। এর চেয়ে অনেক বেশি চাল ও মোট খাদ্য শস্য  প্রতিবছর আমরা উৎপাদন করছি, তারপরও কমবেশি প্রায় ১ কোটি টন চাল, গম ও ভুট্টা প্রতিবছর আমদানি করতে হচ্ছে যা ক্রমাগতই বেড়ে যাচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল  ও গম আমদানি হয়েছে ৬৭.০২ লাখ মেট্টিক টন আর ভুট্টা ২৪ লাখ মেট্টিক টন। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১৩ বছরে কৃষি খাতে উৎপাদন বেড়েছে গড়ে প্রায় ৪ শতাংশ হারে তা সত্ত্বেও কৃষি পণ্যের আমদানি হ্রাস হয়নি। চাল আমদানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়, আমদানিতে ডালের ৫০ শতাংশ,  তেলের প্রায় ৯০ শতাংশ, চিনির ক্ষেত্রে  প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আমাদের  কৃষিজাত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নির্ভরতা যখন এত বেশি, তখন বৈশ্বিক মূল্য অস্থিরতা ও ঘাটতি অভ্যন্তরীণ বাজারে বড় ধরনের  নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা ছাড়া এ সংকট এড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। 

খাদ্যের লভ্যতা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়, দরকার খাদ্য কেনার সামর্থ্য। প্রায় দুই বছর ধরে করোনা মহামারীর কারণে গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, দেশে কর্মসংস্থানে মূল ভূমিকা পালনকারী বেসরকারি খাতে চাকরিচ্যুতি, বেতন বা মজুরি হ্রাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য কারণে মানুষের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। আবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে আগামী বছর বৈশ্বীক খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে যা বাংলাদেশ  সরকার অবগত আছেন বিশেষ করে চাল ও আটার দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে সরকার।  দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে পতিত না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন এর জন্য যা যা সহায়তা করার  দরকার সরকার করে যাবে সাধ্যমতো। এরি মধ্যে  সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। সারা বছর ফসল ফলাবেন  কৃষকরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও দপ্তরের জন্য ছয়টি পূর্ণাঙ্গ ‘কন্টেনার স্ক্যানার সিস্টেম’ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট খরচ হবে ৩২৭  কোটি টাকা। কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে আরও ১ লাখ ৪০ হাজার মে. টন সার কেনা হচ্ছে। এতে মোট খরচ হবে ৯৭৭ কোটি টাকা। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা  জোর করতে কৃষকদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহ রাখার বিষয়টি অন্যতম যা অব্যাহত রাখা হবে। এরি মধ্যে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ১  হাজার ৩০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সার এবং স্ক্যানার সিস্টেম কেনায় সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। ক্রয়  কমিটির অনুমোদনের জন্য ৫টি প্রকল্পের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১টি প্রস্তাব রয়েছে যার প্রাক্কলিত মোট অর্থের পরিমাণ  ১ হাজার ৩০৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৩ টাকা যার মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৩২ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ ৯৭৭ কোটি  ১২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ টাকা।

মূলত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হবে। এ কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমাতে কয়েক দফায় দাম বাড়ানো হলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হয়নি। বরং ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের সার সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি মূল্যে কিনে দেশে সার বিক্রি করা হচ্ছে যাতে করে কৃষকরা কৃষি উৎপাদনে উৎসাহী হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ও নগদ  সহায়তা কমানোর সুপারিশ করলেও কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টি সমর্থন করেছে। আশা করা হচ্ছে, কৃষি উৎপাদন বাড়লে দেশে খাদ্য পণ্য সহনীয় মূল্যে পাওয়া যাবে।  শুধু তাই নয়, ডলার সংকটের এই সময়ে বিদেশ থেকে সার কেনা অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। চলতি অর্থবছরে শুধু সারে ভর্তুকি প্রয়োজন হতে পারে ৪৫-৪৮  হাজার কোটি টাকা। তথ্য মতে কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং দেশীয় কোম্পানি কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে এক লাখ ৪০  হাজার টন সার ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট খরচ হবে ৯৭৭ কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ টাকা যার মধ্যে ৫৬২ কোটি ৯৮ লাখ ৯৮ হাজার  ৯৮৮ টাকার ইউরিয়া সার রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির  আওতায় কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন (কেসিসি) থেকে অষ্টম লটে ৫০ হাজার টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেযাতেব্যয়হবে ৪১৪ কোটি ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব  আমিরাতের ফার্টিগোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড: থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৮৮ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসির মাধ্যমে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে নবম লটে ৩০  হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাতে ব্যয় হবে ১৮৫ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৭০০ টাকা। একি সাথে  শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত থেকে এগারোতম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যাতে ব্যয় হবে ১৮৮ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা। পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে সেবার মান বাড়াতে দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও দপ্তরের জন্য ছয়টি পূর্ণাঙ্গ ‘কন্টেনার স্ক্যানার সিস্টেম’ কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট খরচ হবে ৩২৭ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ  বিভাগের অধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও দপ্তরের জন্য ছয়টি পূর্ণাঙ্গ কন্টেনার স্ক্যানার সিস্টেম আমদানি করা হবে। নিউটেক কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ৩২৭ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকায় এই সিস্টেম কেনা হবে।

বাংলাদেশের মাটি যথেষ্ট উর্বর। এ জন্য একই জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলানো যায়। তাই আবাদি জমিতে ঋতু অনুযায়ী কীভাবে সারা বছর ফসল ফলানো যায় সে ব্যাপারে কৃষি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেহেতু এ দেশ কৃষিপ্রধান, তাই কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সুপরিকল্পনা দরকার। মানুষ যেন অভুক্ত ও পুষ্টিহীন না থাকে সে বিষয়ে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে খাদ্য পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। কথায় আছে-ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা। যেকোনো মন্দায় দেশে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। তাই খাদ্য পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির ব্যবস্থা করা আবশ্যক যা সরকার চাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়; চীন ও ভারতের পরেই এর অবস্থান। গত ৪০ বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে সবজি উৎপাদন ছিল ১০৬ দশমিক ২২ লাখ মে. টন, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ (১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার টন) সবজি উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত শাক সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্বজোড়া। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ প্রায় ৫০টি দেশে সবজি রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যদিও দেশে মোট আবাদি জমির মাত্র ৯ ভাগ জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে এবং ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার এই সবজি উৎপাদন করছে। দেশের সংকটময় এই পরিস্থিতিতে সবজি রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারলে আর্থিক সাশ্রয় করাও সম্ভব হবে।

সরকারের মহতি এই প্রচেষ্টার ফলে দেশের পক্ষে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে যদি প্রকৃতি সহায়ক হয়। তার পরও দেখা যাচ্ছে আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে, সামনে  বোর ধানের আবাদ রয়েছে যা থেকে সরকারের ব্যবস্থাগুলো চাষে প্রত্যক্ষ অবদান রাখবে। তবে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন রেকর্ড পরিমাণ বৈশ্বিক উৎপাদন সত্বেও ২০২১ সালে শস্যের দাম অনেক বেশি দ্রুতহারে বেড়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শস্য উৎপাদনও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে এফএও তাদের এক হিসাবে দেখিয়েছে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য আমদানির ব্যয় ছিল সবচেয়ে বেশি যা প্রায় ১.৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার; যা ২০২০ সালের চেয়ে ১৪ শতাংশ যা এফএওর অনুমানের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি যা নিম্ন আয়ের অর্থনীতির জন্য বিপদজনক। তবে বড় ধরনের অস্থিরতা সত্বেও ২০২১ সালে প্রধান প্রধান খাদ্য পণ্যের বাজারগুলো ইতিবাচক ছিল। তবে সরকার দেশের বাজার ব্যবস্থাকে যতদিন না সংস্কার ঘটাবে, খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি ততদিন পর্যন্ত দরিদ্র গোষ্ঠীকে বেশি ভোগান্তিতে ফেলবে যা কাম্য নয়।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ, সিটি ইউনিভর্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)