মিহির রায়       

ব্যাংক খাত: তারল্য, খেলাপি ঋণ ও আস্থার সংকট

ড: মিহির কুমার রায়: ব্যাংক খাত নিয়ে সাম্প্রতিক খবর মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই তাঁদের আমানত তুলে ফেলছেন। এই পরিস্থিতি নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত মন্তব্য করতে  দেখা যায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে এটি নিছক গোজব কিংবা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে কেউ করছে যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। সাম্প্রতিক মূল্যস্ম্ফীতি, ডলার সংকট,  বৈশ্বিক মন্দার আভাস ইত্যাদির কারনে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে- এমন ভেবে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে ফেলার চেষ্টা করছে যা মোটেই সঠিক নয় কিংবা এর সাথে ব্যাংকের তারল্য সংকটের  কোন সম্পর্ক নেই যা গ্রাহকদের একেবারেই ভ্রান্ত ধারনা যা গ্রাহকদের নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না বলেই গত এক মাসে ব্যাংক থেকে অনেকেই আমানত তুলে নিয়েছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন খরচ মেটাতেও অনেকে সঞ্চয় ভাঙছেন।  আবার ব্যাংক খাত নিয়ে নানা গুজব ও আতঙ্কের কারণেও কেউ কেউ অর্থ তুলে নিয়েছেন। এ অবস্থায় আতঙ্কিত না হতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রীও গুজব  বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সদ্য বিদায় নেওয়া মুখ্য সচিব বিআইডিএসের এক সেমিনারে জানিয়েছেন, এ সময়ে গ্রাহকেরা ৫০ হাজার  কোটি টাকা তুলে নিয়েছিলেন। সেই অর্থ আবার ব্যাংকে ফেরত এসেছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে এগুলো নিছক গোজব যার সাথে ব্যাংকের তারল্যের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই এবং সূত্র মতে বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা যা দিয়ে বানির্জ্যিক ব্যাংকগুলো (যার সংখ্যা ১০ হাজার ৭ শত ৯৩টি) তাদের তারল্য ব্যবস্থাপনা সহজেই করতে পারে সত্যি। কিন্তু সাম্প্রতিক  দেখা বা শোনা যাচ্ছে কোনো ব্যাংক  প্রবেশপথ বা অর্থ উত্তোলন বুথের সামনে লিখে রাখে- এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে এক কর্মদিবস আগে জানাতে হবে, পাঁচ লাখ টাকার বেশি নগদায়নে আরও আগে নোটিশ করতে হবে ইত্যাদি যা মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক গ্রাহক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে তার হিসাবে যে স্থিতি আছে তার চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলনের জন্য চেক প্রদান করে ব্যাংকের কাছে অগ্রহনযোগ্য হলে তা দিয়ে গোজব ছড়ায় ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে তারল্য  ব্যবস্থাপনার একটি নিয়ম রয়েছে যে তার মোট আমানতের ৫.৫% থেকে ৬.৫% পর্যন্ত ভোল্টে রাখতে হবে দৈনন্দিন লেনদেন মেটানোর জন্য এবং বিশেষ সময়ে বিশেষ ক্ষেত্রে যদি  তারল্যের প্রয়োজন হয় তাহলে একি ব্যাংকের ফিডিং ব্যাংক শাখা থেকে ধার করবে  সুদের বিনিময়ে। আবার সেই ব্যাংক শাখার যদি বাড়তি তারল্য থাকে তবে  সেই ব্যাংক শাখা নির্দিষ্ট হারে তারল্য ব্যাংক ভোল্টে রেখে তা আবার নির্দিষ্ট সুদ প্রাপ্তির বিনিময়ে ফিডিং শাখায় স্তানান্তরিত করবে। সেটাই তারল্য ব্যবস্থাপনার মূল নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে  দেখা যাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি ইসলামী ব্যাংকে মোটা অংকের তারল্য সরবরাহ করেছে এই কারনে যে এই ব্যাংকগুলো থেকে মোটা অংকের ঋণ  আইন বর্হিভূতভাবে তিনটি কম্পানীর কাছে চলে গেছে যা ঐ তিনটি ব্যাংকের তারল্য সংকটের মূল কারন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কি চাইলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকে নগদ টাকা সরবরাহ করতে পারে? আমানতকারীরা যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ ও সঞ্চয় জমা রেখেছেন, তাঁদের সেবার গ্যারান্টি বাংলাদেশ ব্যাংক আগ বাড়িয়ে কেন দিচ্ছে?  কেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরা আমানতের নিরাপত্তার ব্যাপারে গ্রাহক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে না? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজে পেলেই আর কোন সমস্যা থাকবে বলে মনে হয় না। 

অনেকেই বলছে ঋণ খেলাপি ব্যাংক তারল্যে ঘাটতির একটি বড় কারন এবং সত্যতাও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪  হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ খেলাপি থাকলে এর সুদ আয় খাতে নেওয়া যায় না। শুধু হিসাব করে আলাদা একটি হিসাবে স্থগিত সুদ  হিসেবে রাখতে হয়। খেলাপি ঋণের বিপরীতে এমন স্থগিত সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের ৩৩ শতাংশ।  খেলাপি হওয়ার আগের ধাপে রয়েছে আরও ৪৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকার ঋণ। এগুলোর কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হলেও করা হচ্ছে না। ফলে কিস্তি পরিশোধ না করলে ছয় মাস পরেই এগুলো খেলাপি হয়ে যাবে। তখন এসব ঋণের সুদও আয় খাতে নেওয়া যাবে না। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে  গেছে যার কারণে কমে গেছে ব্যাংকের মূলধন। খেলাপি ঋণ যার কোন সমাধান স্বল্প মেয়াদে সম্ভব হয়ে উঠছে না কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারনে যা আর্থিক খাতের জন্য এক মহা বিপদ সংকেত। অর্থমন্ত্রীরা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথাও বলেছিলেন যার বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। ক্রমাগতভাবে খেলাপি ঋন বৃদ্ধির কারনে গত   জুন মহান জাতীয় সংসদে জনৈক সংসদ সদস্য কর্তৃক প্রশ্ন উত্থাপিত হলে অর্থমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন ঋন খেলাপি হওয়ার কারন পাঁচটি যথা: এক: দেশীয় ও আন্তর্জ্যাতিক অঙ্গনে  নিয়ম বহির্ভুত অনেক কিছু হয়েছে; দুই: ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে ঋন গ্রহিতা নির্বাচনে ব্যার্থ হয়েছে; তিন: ঋনের বিপরীতে রাখা পর্যাপ্ত জামানত, একই সস্পদ  একাধিক ব্যাংকে জামানত রাখা ও জামানত বাজার মূল্যের চেয়ে বেশী দেখানো; চার: গ্রাহকের সকল দলিল সংগ্রহ ও সঠিক যাচাই না করা; পাঁচ: ঋন গ্রহিতার তহবিল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা,  প্রয়োজন ও সামর্থের বিচার না করে আতিরিক্ত ঋন প্রদান, সময় সময় ঋন সীমা বাড়ানো, ঋন তফসিলকরন ও পুন:গঠন সুবিধা দেয়া ইত্যাদি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন ঋন  খেলাপি হলে আদায় ও বিতরন ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা সামষ্ঠিক অর্থনীতির বিবেচনায় জাতীয় আয় (জিডিপি)তে এর নেতীবাচক প্রভাব ফেলে। তবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঋন  দেয়ার সংস্কৃতি যে ঋন খেলাপির যে অন্যতম কারন তা মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করলে তার উল্লেখিত কারনগুলো আরও সম্পূর্ণ হতো। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ  বলেন ঋণ খেলাপি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে ঋণ খেলাপিদের শাস্তি দেওয়ার আলোচনা এলেই একটা বিভাজন সরকারের তরফ  থেকে করা হয় সেটি হলো ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। কিন্তু কে যে ইচ্ছাকৃত আর কে নয়-তার কোনো সুরাহা হয়নি। যদিও অর্থমন্ত্রী বাজেটেই ইচ্ছাকৃত  খেলাপি চিহ্নিত করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

দেশের ৩৯টি বেসরকারি ও ৪টি সরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক সাধারনত আর্থিক বাজারের অংশ হিসাবে স্বল্প মেয়াদে গৃহীতাদের ঋনের চাহিদা পূরন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এই ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদে চার পাচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋন দিয়েছে যার বেশিরভাগ খেলাপী ঋনে পরিনত হয়েছে। এখন বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে ঋন দেয়া এবং ঋন খেলাপী হওয়ার মত একটি যাতনাকে বয়ে বেড়াচ্ছে যার ফলাফল তারল্য সংকট, মুনাফার ঘাটতি ও ইমেজ সংকট। অথচ দীর্ঘ মেয়াদে বৃহদায়কার ঋন প্রদানের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), বেসিক ব্যাংক, রাকাব ইত্যাদি  রয়েছে যারা সরকারি ব্যাংক হিসাবে সরকারের সাহায্যপুষ্ট হয়ে বেশি সময়ের অর্থায়নে অংশ নিতে পারে। এই অসংগতিগুলো দুর করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতের বৃহদাকার ঋনগুলোর  স্বচ্ছতার ভিত্তিতে মুল্যায়ন না হওয়ার অনেক অনাগ্রিধার কিংবা অলাভজনক খাতেও ঋন বিনিয়োগ হচেছ যা পরবর্তিতে খেলাপী ঋনে পরিনত হয়। আবার রাজণৈতিক বিবেচনায় অনেক লোন মঞ্জুর করা হয় যার বেশিরভাগ অনুৎপাদশীল খাতে চলে যায় যার পরিণতি হয় খেলাপী ঋন। এখন গনতান্ত্রীক সমাজে রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে বিচরন করলেও অন্তত ব্যাংকিং এর মত সেবাধর্মী আর্থিক খাতটিকে রাজনীতি মুক্ত রাখা যায় না কেন? এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অভিবাবক হিসাবে তার সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না কেন? ঋন মওকুফ, ঋনের পুনঃতফসীলিকরন, ঋনের অবোলপন ইত্যাদি বিষয়গুলো এখন খুবি ক্ষতিকর ও অলাভজনক। এখন ব্যাংকও ঢালাওভাবে সবাইকেও সুযোগ দিতেও পারে না, কিংবা ঢালাওভাবে বিবেচনায়ও আনতে পারে না। কিন্তু জায়গাটিতে ব্যাংকার কিংবা ব্যাংকিং সুসাশসনের অভাব পরিলক্ষিত হয় যা কোনভাবেই প্রতিষ্ঠিত করা যাচ্ছে না। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হয় না। আইন তাদের স্পর্শ করতে পারেনা, যার কারণে ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে। ব্যাংক খাত ও অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, ব্যাংকের টাকা লুটকারীরা যত বড়ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা, প্রশাসনিক সমর্থন ইত্যাদি তফসিলি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য খুবি জুরুরি। সরকার যদি সচেষ্ট হয় তবে সমাজিকভাবে এই সকল খেলাপি ঋনের মোকাবেলা করাও সম্ভব আবার প্রশসনিকভাবেও সম্ভব। এখন কোনটি ভাল হবে তা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে তবে সমস্যার অবশ্যি শান্তিুপুর্ণ সমাধান চাই ব্যাংকিং শিল্পের স্বার্থে। 

এখন আসা যাক আস্থার সংকট নিয়ে কিছু কথা যা প্রাসঙ্গিক। ব্যাংকে টাকা রেখে ঠকছেন আমানতকারীরা, ব্যাংক যে হারে সুদ দিচ্ছে, তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, এতে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে এবং এখন ব্যাংকে অর্থ রাখা মানেই লোকসান। এমনিতেই ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কম এবং এ অবস্থায় আমানত রেখে ঠকলে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা আরও কমে যাবে। অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় সুদের হার কম হলে তখন প্রকৃত সুদের হার ঋণাত্মক হয় যা এখন হয়েছে। চলতি বছরের  সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.১০%। আর সে সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের গড় ভারিত (ওয়েটেড এভারেজ) সুদ হার ছিল ৪.০৯ শতাংশ।  ফলে একজন আমানতকারীর প্রকৃত সুদ হার ছিল ঋণাত্মক ৫.০১ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, ব্যাংকে ১০০ টাকা রাখলে এক বছর পর আমানতকারী প্রকৃতপক্ষে পাচ্ছেন ৯৪ টাকা ৯৯  পয়সা। অর্থাৎ প্রকৃত সুদের হার কমে গিয়ে বছর শেষে তাঁর মূল আমানতও ৫ টাকা ১ পয়সা খেয়ে ফেলছে মূল্যস্ফীতি। তাছাড়াও একজন আমানতকারীর সুদ আয়ের ওপর দিতে  হয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর। ফলে প্রকৃত আয় আসলে আরও কমে যায়। বিশ্বব্যাপী একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সংকটের সময় সাধারণত মানুষ ব্যাংকে অর্থ  রাখে না, বরং জমি বা বাড়ির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে তারা ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এতে অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়ে। সুদ হার জোর করে নয়-ছয় করে রাখার কারণেই সাধারণ মানুষের এই বিপত্তি। ২০২০ সালের শুরুতে সরকার ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল যা এখনো বহাল আছে অথচ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় সংকট চলছে, মূল্যস্ফীতি কমাতে দেশগুলো সুদ হার বাড়িয়ে দিয়েছে, ব্যতিক্রম তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ এবং সুদ হারে কোনো পরিবর্তনই আনেনি বাংলাদেশ। মূলত কিছু ব্যবসায়ীকে খুশি করতেই ঋণের সুদ হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফলে ঋণ নেওয়া সস্তা হয়ে গেছে। এতে মূল্যস্ফীতির মধ্যেও মুদ্রা সরবরাহ বাড়ছে, সেই  ঋণ দেওয়া হচ্ছে বেনামে ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে, এর বড় অংশ খেলাপি হচ্ছে, আরেক অংশ হচ্ছে পাচার। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, মানুষকে সঞ্চয়ী করতে হলে  প্রণোদনা দিতে হবে। খারাপ সময়ে এই প্রণোদনা দেওয়া আরও জরুরি অথচ এখন ব্যাংক থেকে দূরে রাখা হচ্ছে আমানতকারীদের, সুদ দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম হারে,  সঞ্চয় করতে নিরুৎসাহিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে অর্থনীতিতে বিনিয়োগযোগ্য মূলধন কমে যাওয়া। আর আমানত কমলে ব্যাংকের তারল্য সংকট বৃদ্ধি পাবে,  তাতে উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কর্মকান্ডেও ভাটা পড়ে, মন্দাও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই অর্থ মন্ত্রনালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়গুলো বিবেচনায় আনবেন এই বিশ্ব মন্দার যুগে যেখানে  বৈশ্বিক অর্থনীতি আগাম সংকেত দিচ্ছে সতর্ক হওয়ার জন্যে। এ ব্যাপারে টেকসই ব্যাংকিং নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ বিশেষজ্ঞদের রয়েছে।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)