মিহির স্যার

বিদায়ী বছর ২০২২: কেমন গেলো দেশের অর্থনীতি

ড: মিহির কুমার রায়: বিদায় ২০২২ ও স্বাগতম ২০২৩ খৃষ্ঠাব্দ।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত তৃতীয় মেয়াদের সরকারের শেষ বছর এবং আগামী বছর জানুয়ারিতে দেশের সাধারন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিজয়ের ৫১ তম বছর পেরিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দরবারে। সরকারের অর্থনৈতিক অর্জনসমূহকে জনগণের সেবার দ্বার গোড়ায় পৌঁছাতে নিরলস  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ  (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে, যুদ্ধ বিধ্বস্থ  দেশ থেকে আজকের এই উত্তোরণ যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস, সরকারের রূপকল্প ২০২১  বাস্তবায়নে এটি একটি বড় অর্জন। আমাদের এটি সম্ভব  হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের  সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহনের ফলে যা সামগ্রিক  অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে  নিয়ে এসেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে  পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারনপূর্বক সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।

তারপরও কেমন গেলো দেশের অর্থনীতি- এ প্রশ্নটি বারবারই আসে।

সার্বিক মূল্যায়নে  দেখা যায়, বৈশ্বীক পরিস্থিতি (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট) বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য  বৃদ্ধি,  বাংলাদেশেও জ্বালানি তেল, নিত্য পণ্যে তথা সেবা দাম বাড়াতে প্রভাব এবং বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি বড় ধরনের সমস্যা  সৃষ্টি করেছে সত্যি, তবে যে কোনো মূল্যে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা চলছে সরকারি যন্ত্রের মাধ্যমে যেখানে মূদ্রানীতি একটি বড় নিয়ামক হয়ে দাড়িয়েছে। 
বর্তমান বছরের সাধারন মূল্যস্ফীতি আট শতাংশের উপরে রয়েছে, যা আগামী বছর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি  অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সত্যি কিন্তু এসব ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ যে ব্যবস্থা গ্রহণ  করা হয়েছে, তা আংশিক ব্যবস্থা, পূর্ণাঙ্গ নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার দুই দফায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু  একই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের “আপার ক্যাপ” প্রত্যাহার করা হয়নি। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার ৫ শতাংশে সীমিত ছিল যা এখন বেড়ে হয়েছে ৫.৭৫ শতাংশ। এতে  ব্যাংকগুলোর ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়েছে। কিন্তু তারা উদ্যোক্তা পর্যায়ে ঋণ দানের ক্ষেত্রে আগের মতোই সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ  ধার্য করতে চাচ্ছে। নীতি সুদ হার বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামান্য অবদান রাখতে চায়, তাহলে এখনই ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ তুলে দিয়ে তা বাজারভিত্তিক করতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ, আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের  ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি-মালিকানাধীন ব্যাংকের বেলায় ৬ শতাংশ নির্ধারণ করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রতিয়মান হয় না। অপরদিকে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে লক্ষ্যমাত্রা এক শতাংশ কমিয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও  ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় যা শুরুতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৭.৫ শতাংশ।  এছাড়া চলতি বাজেটের আকারও ২০ হাজার ৯৩  কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এই কারণে চলতি বছরের বাজেট ৬ লাখ  ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা থেকে  কমে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি)  সরকারি অংশের বরাদ্দও কাটছাঁট করা হচ্ছে- যা  অঙ্ক কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থ্যাৎ ২০২১-২০২২ এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ ধরা হলেও বিভিন্ন আন্তর্জ্যাতিক সংন্থাসহ নিরপেক্ষ গবেষনা সংস্থা বলছে জিডিপি ৬ শতাংশের উপরে নাও যেতে পারে। মূল্যস্ফীতির বড় অংশ নির্ভর করে চালের মূল্যের ওপর।

অপরদিকে দেশে খাদ্য শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে,  এছাড়া প্রত্যা,শা করা হচ্ছে আগামীদিনে আউসের ফলনও বাম্পার হবে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বন্যার পর কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এ বছর একটি বড় বন্যা হয়েছে। ফলে জমির উর্বরতা বাড়বে। এতে ফসলের উৎপাদনও ভালো হবে।  আর অধিক উৎপাদনের প্রভাবে চালের মূল্য হ্রাস  পেয়ে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে।  এ বছরের শুরুতে রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়।

সর্বশেষ তথ্যমতে, গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের  (জুলাই-নভেম্বর) তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ২৬৪ দশমিক ৮২  কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছে ১  লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা।  

বর্তমান বছর পর্যন্ত এখন মাখাপিছু আয় ২ হাজার ৮ শত ১৪  ডলার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের  তথ্য অনুযায়ী কেবল  ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্সের পরিমান  ১২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার ও  সেই হিসাবে প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই প্রবাহ অব্যাহত খাকলে রেমিট্যান্স ২২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যা ইতিবাচক। অভিবাসন বেড়েছে এবং অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের জন্য একটি স্থীতিশিল শক্তি।
এখানে উল্লেখ্য, বিজয়ের গত ৫১ বৎসরের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সফলতাসমূহ হলো - বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন ও ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন বিবেচনাধীন, পদ্মা নদীর উপর  সেতু বাস্তবায়ন ও দ্বিতীয় সেতু পরিকল্পনাধীন, ঢাকা মেট্রোরেল বাস্তবায়ন ও পাতাল  রেল পরিকল্পনাধীন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীণ, ১০০টি বিশেষ  অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার মতো হাজারো প্রকল্প চলমান আছে।

এরমধ্যে ২৫ জুন, ২০২২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যার ফলে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয় পদ্মা সেতু ঘিরে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে যেসব প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দেখে  জীবন মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন এক সময়কার অবহেলিত এ জনপদের মানুষ। ফলে  সেতুটি চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমনি সহজ হবে, তেমনি কমবে সময়ের দূরত্ব। বিগত ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২২ ঢাকা মেট্রোরেল (উত্তরা থেকে আগারগাঁও ) চালু, যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বয়কর ঘটনা।

শিক্ষাখাতে শতভাগ ছাত্র ছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে  নেওয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত উপবৃত্তি  প্রদান বর্তমান সরকারের অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক। এছাড়াও ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও শিশু শিক্ষার্থীর হার ৯৭.৭ ভাগে ঊন্নিতকরণ। এছাড়াও শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২ প্রনয়ন ও গঠন করা হয়েছে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। চলতি বছরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৭.৪৪ শতাংশ  যা গত  বছর ছিল ৯৩.৫৮ শতাংশ। আবার সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২  লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী যা গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। অতি সম্প্রতি সরকার ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে সরকারী প্রাইমারী  স্কুলের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। আবার  স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় অর্জন টিকা খাতে, শিশুদের ও  চলমান করোনার টিকাদান কর্মসূচীতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম আদর্শ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়ে  মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করেছে। স্বাস্থ্য  সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১২ মেডিক্যাল স্থাপন ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে  ৪৭ হাজারেরও বেশী দক্ষ জনবল অর্থাৎ নার্স্ ও ডাক্তার। তথ্য প্রযুক্তিতে   ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন র্স্মাট বাংলাদেশে রুপ নিচ্ছে যা সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 
টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ, ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষের মত, সরকারের সমুদয় মন্ত্রনালয়কে আনা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির  আওতায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪এ প্রযুক্তি থেকে ৫এ প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৫২৩৫ (মে: ও:) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে যা  বর্তমান চাহিদার বেশী। তাছাড়াও ভূমি ব্যবস্থা, আয়কর রিটার্ন জমা, হোল্ডিং কর  জমা ইত্যাদিতে অনলাইন পদ্ধতির সংযোজন মানুষকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে।

অর্থনৈতিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ্ নিয়ামক হলো দেশের আমদানি-রপ্তানি। যদিও করোনা মহামারির আগে থেকেই দেশের আমদানিতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজমান ছিল। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশ আসে চীন থেকে। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে এ আমদানির অনেকাংশ কমে যায়। অবশ্য পরবর্তী পর্যায়ে চীন থেকে আমদানি সচল হয়। গত অক্টোবরে ৭১১ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৬২.৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে সেপ্টেম্বরে ৬৯৯ কোটি ৬০  লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়, আগস্টে আমদানি হয়েছিল ৬৫৮ কোটি ৩৩  লাখ ডলারের পণ্য। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট দুই হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারের পণ্য  আমদানি হয়েছে। এদিকে জুলাই থেকে নভেম্বরে রপ্তানি বাণিজ্য থেকে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এ সময় রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪.২৯ শতাংশ যা গত বছর একই  সময়ে রপ্তানি আয় হয় ১ হাজার ৫৯২ ডলার। বছরের শেষ দিকে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা  গেলেও উৎপাদন, ভোগ, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, ব্যাংক ও  আর্থিক খাত, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রাস্ফীতির মতো সূচকে যে  প্রত্যাশা ছিল, তার চেয়ে অর্জনে  স্থবিরতা ছিল। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়কর। ২০১৮  সালের নির্বাচনী  ইশতেহারে বর্তমান সরকার আমার গ্রাম আমার শহর রুপান্তরের আওতায় প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারি আওতায় ২০২১ সাল পর্যন্ত পল্লী এলাকায় ৬৬ হাজার ৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ৩ লাখ  ৯৪ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট. ১ হাজার ৭৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ১ হাজার ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৩২৬টি কমপ্লেক্স নির্মান সম্প্রসারন করা হয়। রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার বর্তমান বছরে  ১৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, ঢাকার চারপাশে রেল লাইন স্থাপনের সমীক্ষার কাজ চলছে, ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ  নির্মান, ৪২৮টি নুতন রেল সেতু নির্মান করা হয়েছে।

দেশে সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটেছে কৃষিতে। স্বাধীনতার পর যেখানে ১ কোটি ১০  লাখ টন চাল উৎপাদন হতো, সেখানে এখন তা ৪ কোটি ৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। গম, ভুট্টা,  শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এই সাফল্যের নায়ক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কারিগর হলেন দেশের কৃষিবিদ ও কৃষকেরা। চলতি বছরে দেশে সবচেয়ে কম পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে, তারপরও কোনো রকম খাদ্য  সংকট হয়নি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো বলেই সংকট দেখা দেয়নি।

বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সম্মানজনক স্থানে থাকলেও (যেমন চাল উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, সবজি উৎপাদনেও বিশ্বে তৃতীয়, মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় আর চাষকৃত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে, সামুদ্রিক মৎস্ আহরণের ক্ষেত্রে অবস্থান বিশ্বে ১১তম) গম, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ফল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা যা আমদানিনির্ভর, ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভরতার কাছাকাছি পৌঁছলেও তরল দুধ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে রয়েছে যা বাড়াতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

বারো মৌসুমের নতুন জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট  উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান ৮। নতুন এ ধানে হেক্টর প্রতি ফলন মিলবে সাড়ে ১০ টন থেকে ১১ টন। গত ২৬ শে ডিসেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সন্মেলন কক্ষে জাতীয় বীজ বোর্ডের  ১০৮তম সভায় নতুন এ জাতের অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়াও নতুন জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রি উদ্ভাবিত আমন মৌসুমের জাত ব্রি ধান ১০৩ ও  বাসমতি ধরনের সুগন্ধিজাত ব্রি ধান ১০৪। এ জাতটির গড় জীবনকাল ১৩২ দিন, গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ টন, উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

সার্বিক বিবেচনায়, আসন্ন নতুন ইংরেজী বছর ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে  রাখার সর্বাত্নক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে সরকার। সাথে সাথে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাতে এক ইঞ্চি জমিও পতিত না থাকে- সে দিকে নজর দিতে হবে। ২০২৩ সাল বর্তমান সরকারের শেষ বছর এবং উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতার কোন বিকল্প নেই। 

আসুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করি।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সিন্ডিকেট  সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)