শাহ নেওয়াজ মজুমদার

কারিগরি শিক্ষা অফুরন্ত সম্ভাবনার নতুন দ্বার

মো: শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার: বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতায় এগিয়ে চলার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তরুন প্রজন্মকে এখনই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য দরকার রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও জ্ঞানভিত্তিক গুণগত কারিগরি শিক্ষার প্রচার প্রচারনা যার আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করবে। যা সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্নবিশ্বাসী কর্মী হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। কারিগরি জ্ঞানার্জনের ফলে তরুনরা নীতি নৈতিকতা, দক্ষতা,  কর্মক্ষমতা ও আত্নবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে নিজেকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়, জীবনমুখী শিক্ষার পরিমন্ডলেই তার অবস্থান। পরিপূর্ণ ও সামগ্রীক জীবনবোধের আলোয় বিচার করা হয় কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকাকে। কর্মমুখী শিক্ষা নিঃসন্দেহে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক জনশক্তি সৃষ্টি করতে চায় কিন্তু তার মানবিক গুনাবলীর বিকাশের দিকটিও উপেক্ষিত থাকতে পারে না।

এ থেকে কর্মমুখী শিক্ষার লক্ষ্য ত্রিমুখীঃ 
(ক) জ্ঞান জিজ্ঞাসা সৃষ্টিতেঃ জ্ঞান বিজ্ঞানের অর্জনের সংগে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানো, অজানাকে জানার আগ্রহ সৃষ্টি এবং সুপ্ত গুনাবলির বিকাশ ঘটানো।

(খ) মূল্যবোধ সৃষ্টিঃ শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং মানবিক সাংস্কৃতিক মুল্যবোধে উজ্জীবিত করা এবং গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী,  বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে তাকে গড়ে তোলা।

(গ) কাজে উৎসাহ সৃষ্টিঃ কর্মমুখী, জীবনসম্পৃক্ত বৃত্তিমূলক, উপার্জনমনস্ক জনশক্তি গড়ে তোলা, আমাদের শিক্ষা নীতি নির্ধারক ও সরকারকে এই তিনটি লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে তাহলেই অতিরিক্ত জনশক্তি সম্পদে রুপান্তর হবে।

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিনত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কারিগরি  ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে সামনে রেখে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০%  এ উন্নীত করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ইন্ডাষ্ট্রি-ইনষ্টিটিউট লিংকেজ স্থাপন, দেশ বিদেশে প্রশিক্ষন,  যুগোপযোগী কারিকুলাম উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজন্য সরকার প্রতি বৎসর কারিগরি শিক্ষার বাজেট প্রতিটি অর্থবছরে বৃদ্ধি করেই চলছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৩-১৪ হতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের তুলনামূলক চিত্রঃ

 

২০১৩-১৪

২০১৪-১৫

২০১৫-১৬

২০১৬-১৭

২০১৭-১৮

২০১৮-১৯

২০১৯-২০

২০২০-২১

মোটবাজেট (লক্ষটাকায়)

৩০৯২৭.৬২৮

৩৯৮৩৪.৫৪৯

৫২৩০৪.৯১১

১৩৩৭৮৯.১৭

১৬৯২৭৭.৫৪

১৯১৫৪২.৬১               

২১৩৩১০.১৬

২২১৯৩৪.৪৯

এই শিল্প বিপ্লবের যুগে উচ্চ শিক্ষিতরাই বেশী বেকার থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রীধারীদের মধ্যে বেকার মাত্র ১০.৫০ শতাংশ অন্যদিকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ বেকার থাকে না। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের হার ১০০%।

কারিগরি শিক্ষাকে দেশের তৃনমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠিকে উৎপাদনমুখী মানবসম্পদে রূপান্তর করাই মূল লক্ষ্য।

লেখক: কলামিষ্ট, হেড অব অপারেশন ও সহযোগী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)