মিহির কুমার রায়

আইএমএফের ঋণ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

ড: মিহির কুমার রায়ঃ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে উৎকন্ঠার আমেজ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সকল জল্পনা- কল্পনার অবসান ঘািটয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বোর্ড সভা গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪. ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে যা সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে বিতরন করা হবে যার গড় সুদের হারহবে ২. ২ শতাংশ। 

এই ঋণ বর্ধিত ঋণসহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ/ইএমএফ) থেকে দেয়া হবে ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় দেয়া হবে ১৪০ কোটি ডলার।

আইএমএফের প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক ব্যয়ে আরও সক্ষমতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, আর্থিক খাত শক্তিশালী করা, নীতি-কাঠামোর আধুনিকায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে জনগণকে সহনশীল করার কাজে এ ঋণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

তারি আলোকে আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড় করেছে যা গত ৫ ই ফেব্রোয়ারীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ওই অর্থ যোগ হয়েছে যা ফলে বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার যা আগে ছিল ৩ হাজার ২১৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছে এই ঋণ পাওয়ার ফলে অন্যান্য সংস্থা থেকেও দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে যার ফলে দেশে ডলারের জোগান বাড়বে, সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে। 

সূত্র জানায়, বাকি ৪২২ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার ৬টি কিস্তিতে ছাড় করবে, ছয় মাস পর পর কিস্তি পাওয়া যাবে এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ঋণ পাওয়া যাবে। এখানে উল্লেখ্য যে গত বছরের জুলাইয়ে বৈশ্বিক মন্দার নেতিবচাক প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ আইএমএফ-এর কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায়। 

কিন্তু আইএমএফ-এর বোর্ড অনুমোদন করেছে ৪৭০ কোটি ডলার, যা চাওয়ার চেয়ে ২০ কোটি ডলার বেশি। এই ঋণ পেতে বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয়েছে বা পর্যায়ক্রমে হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আইএমএফের ভাষায় গুণগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত-কিউপিসি, অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত- এসপিসি ও সাধারণ প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে কিউপিসি ও এসপিসির শর্ত না মানলে কিস্তি আটকে যায়। 

কিউপিসির মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব পদ্ধতি ঠিক করা, জিডিপির তুলনায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

এসপিসির মধ্যে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পদ্ধতি কার্যকর করা, আয়কর আইন সংসদে পাস করা, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায়ের অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, কর ছাড়ের উপর বিশদ নিরীক্ষা করা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাখা ইত্যাদি। 

দুর্নীতি কমানোর পাশাপাশি জ্বালানির দামে সমন্বয় ও বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেয়াসহ প্রায় ৩০টি শর্ত রয়েছে আইএমএফের ঋণচুক্তিতে। সরকারি ব্যয়ের বিপুল অপচয় কমানোর পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এটি বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ব্যর্থতা। জ্বালানির দাম সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেছে। যদিও আইএমএফ সারের ওপর ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ সরকার নিতে রাজি হয়নি, ফলে এটি শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এছাড়া ঋণখেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন করে যেকোনো ঋণগ্রহীতা বর্তমানের ছয়টি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার পরিবর্তে তিন কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার শর্ত দেয় তারা। আইএমএফের শর্তাবলির মধ্যে বাজেট ঘাটতি ৪.৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ করা এবং রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর ছাড় বাতিলের পাশাপাশি রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের শর্ত আরোপ করেছে। 

এছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন জোরদার করতে, জনসাধারণের আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনা সংস্কারের আহ্ধসঢ়;বান জানিয়েছে।আইএমএফের আরেকটি শর্ত ছিল- বছরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা, কিন্তু বাংলাদেশ তিনবার মুদ্রানীতি ঘোষণায় সম্মত হয় এবং বাস্তবায়ন শুরু করে। নতুন মুদ্রানীতিতে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকারও এক বিলিয়ন ডলার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সঞ্চয়পত্র ও পেনশন সুদের বরাদ্দ আলাদা করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।

প্রথম কিস্তির আগে আইএমএফের শর্ত পূরণে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরবর্তী ছয় কিস্তির বেলায় প্রতিটি কিস্তির আগে সরকারের কী কী শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এমইএফপি। বোর্ড বাস্তবায়নে সন্তুষ্ট হলেই আইএমএফ ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি দেবে।

আইএমএফ মনে করেছে যে করোনা মহামারি চলাকালে এবং মহামারির পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রেুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, মন্দা ও জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশ অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি (৫২ বিলিয়ন ডলার) রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও আমদানি তুলনামূলক অধিক হারে বেড়েছে (৮৯ বিলিয়ন ডলার)। অন্যদিকে রেমিট্যান্স আসা তেমন বাড়েনি। ফলে বাণিজ্য ও লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দেয়। 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত নেমে যেতে থাকে। ২০২১ সালের আগস্টে যে রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, তা নেমে ২৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে (২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত)।

এ অবস্থায় বাণিজ্য ঘাটতি ও লেনদেনের ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের সহায়তা প্রয়োজন এবং নিঃসন্দেহে আইএমএফের এই সহায়তা বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর তাদের আস্থারই বহিঃপ্রকাশ। 

তবে আইএমএফের শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যা পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে আইএমএফের সব শর্ত একসঙ্গে পালন না করলেও প্রস্তাবিত সংস্কারসমূহ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। 

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অনিয়ম দূর করে সুশাসন আনা এবং দেশের কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করে স্বনির্ভরতা আনার জন্য এসব সংস্কার বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরে সুশীল সমাজ ও অর্থনীতিবিদদেরও পরামর্শ রয়েছে। 

কৃষি, জ্বালানি ও গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হবে, বৈশ্বিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সরবরাহ চেইনে বিপর্যয়, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কতিপয় সমস্যার দিকেও আশু নজর দেয়া এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

গত পাঁচ বছরে ঋণখেলাপিদের যে সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেয়া হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এর ফলে ঋণ আদায়ের তো উন্নতি হয়ইনি, বরং খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, বিভিন্ন প্রকার সুযোগ ও রাইট অফ করে যে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হয়েছে, তাসহ প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বলে প্রতিয়মান হয়। 

ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণ ও অর্থ পাচার বাড়ছে, তা ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার এখন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এনবিআর, বিএফআইইউ, দুদক কিংবা সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- কেউই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না, দেশের সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।

দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও ব্যাংকাররা ব্যাংকব্যবস্থার নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে বিস্তর লেখালেখি করছেন। গত পাঁচ বছরে ঋণখেলাপিদের যে সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেয়া হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এর ফলে ঋণ আদায়ের তো উন্নতি হয়ইনি, বরং খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকার সুযোগ ও রাইট অফ করে যে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে, তাসহ প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বলে অনেকের অভিমত। ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণ ও অর্থ পাচার বাড়ছে। 

তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার এখন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনবিআর, বিএফআইইউ, দুদক কিংবা সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- কেউই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। দেশের সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগও ক্রমান্বয়ে কমছে, টাকার মূল্যের পতন, পুঁজিবাজারের প্রাইস সিলিং, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ডলারসংকট, এনবিআরের ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধাপ্রাপ্তি ও মুনাফা প্রত্যাবাসনে জটিলতা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক বছর বৈদেশিক বিনিযোাগে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হযেছে, বিশেষ করে গত বছর ইক্যুইটি মূলধন, পুনর্বিনিযোগকৃত ও আন্তকোম্পানি ঋণ- এ তিন খাতেই এফডিআই স্টক কমেছে। 

এছাড়া বিদেশি নতুন বিনিয়োগও তেমন আসছে না। তাই বিনিযোগ কমে যাওযার কারণ অনুসন্ধান করে এর সমাধান বের করা জরুরি। 

সর্বশেষে বলা যায়, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দাযিত্বে নিযোজিত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, প্রবাসী বাংলাদেশি- সবার দেশপ্রেম, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও দক্ষতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেু ভূমিকা পালন করতে পারে।সঙ্কট যতটা গভীর, আইএমএফের এ ঋণ তার সমাধান পুরোপুরি দিতে না পারলেও সমাধানের পথে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারবে। 

ঋণ একমাত্র সুষ্ঠু অর্থনৈতিক সমাধানের পথ নয়; বরং অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিতে হবে, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার হচ্ছে আর আর এতে উৎসাহিত হচ্ছে হুন্ডি, এগুলো বন্ধে সরকার কতটা আন্তরিক, তার ওপর নির্ভর করবে সঙ্কট কত কম সময়ে দূর হবে, পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের কথাও ভুলে গেলে চলবে না ,স্মরন রাখতে হবে এই ঋণ করে উন্নয়ন যে সম্ভব তা বর্তমান সরকার অনেকবার প্রমাণ করেছে, এবারও পারবে এই আশা রঈল।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাভার, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/এমআর//


Comment As:

Comment (0)