মিহির স্যার

একুশের বই মেলা: উদ্যোক্তা, প্রকাশক ও ক্রেতার অর্থনীতি

ড: মিহির কুমার রায়ঃ এখন চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি যা শীত-বসন্তে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই মাসের অন্যতম আকর্ষন বই  মেলা যার আয়োজক বাংলা একাডেমি। এ বছরের বই মেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ এই  মাসের প্রথম দিন পহেলা ফেব্রুয়ারি বুধবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী এ  আয়োজনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের ত্যাগকে জাগরূক রাখতে এই মেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সে কারণে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস ধরে এর আয়োজন। ১৯৭২ সালের ৮  ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় প্রকাশক চিত্ত রঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় কলকাতা থেকে আনা কিছু বই নিয়ে মেলার সূচনা করেন। চিত্ত রঞ্জন সাহার মুক্তধারা প্রকাশনী ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে, তার দেখা  দেখি অন্যরাও উৎসাহী হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে মেলা চলতে থাকে, ১৯৭৮  সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক বাংলা একাডেমিকে বই মেলার সাথে সমন্বিত করেন। তারই উদ্যোগে ১৯৭৯ সাল থেকে  বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বই মেলার ব্যবস্থাপনায় অংশীদার হয়ে ওঠে, ১৯৮৩  সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বই মেলার আয়োজনের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  কিন্তু ‘এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তোড়ে সে বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি, ১৯৮৪ সাল থেকে পুরো উদ্যমে  মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বাংলা একাডেমি চত্বরে জায়গা না হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বই মেলা সোহরাওয়ার্দী  উদ্যান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি  ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এবার বই মেলার  আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে, বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ  এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশ পথের উল্টোদিকে অর্থাৎ মন্দির গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এখন আসা যাক এই মেলাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতি প্রকৃতি নিয়ে যা এই প্রবন্ধের মূল বিষয়। এখানে উল্লেখ্য বই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতেই নতুন বই নিয়ে লেখক, পাঠক ও প্রকাশক মহলে গুঞ্জন ওঠে। এই সময় দেশবরেণ্য লেখকদ্বয়ের নতুন বই প্রকাশিত হয়, বই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখকের প্রত্যাশা থাকে পাঠককে নতুন বই উপহার দেওয়ার,  পাঠকও প্রিয় লেখকের নতুন পাঠের অধিক আগ্রহে থাকে, তাই অমর একুশে বই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অসংখ্য নতুন বই প্রকাশিত হয় যে মেলায় অংশগ্রহণ করেন উদ্যোক্তা সংস্থা, লেখক-লেখিকা, পাঠক ও প্রকাশক যার সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি  যোগসূত্র রয়েছে। এই সকল অংশীদারদের নিজস্ব একটা ব্যবসায়িক দিক রয়েছে শিল্প সংস্কৃতি চর্চার অন্তরালে। এবার বাংলা একাডেমী যে  ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০১টি ইউনিট বরাদ্দ দিয়েছে তা থেকে প্রাপ্তি কত সে প্রশ্নটি আসাই প্রাসঙ্গিক অর্থা্ৎ এই প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় কত  হয়েছে তা জানা না গেলেও অংকটি যে অর্ধ কোটি কিংবা তার কাছাকাছি যে হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এই রাজস্ব  আয়ের খাতটি বাংলা একাডেমির মত একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় সার্বিক দিকের উন্নয়নের বিবেচনায়। এ ছাড়াও এই  বাড়তি আয় সরকারের রাজস্ব আয়ের ভান্ডারে আরও একটি নূতন সংযোজন। আবার যারা স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাদের বই প্রদর্শনের  আয়োজন করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যার মধ্যে রয়েছে পূর্বে আলোচিত প্রকাশক, লেখক, ব্যবসায়ী যাদেরও দিন শেষে আয়-ব্যয়ের  একটি হিসাব রাখতে হয় এই মেলাকে ঘিরে। এই বই মেলা নতুন কর্মসংন্থান সৃষ্ঠি করে যার সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা জড়িত তথা  বেকারত্বের অবসান ঘটায়। সেই হিসাবে একুশে বই মেলা বই বিক্রেতা, প্রকাশক, ছাপাখানা, বই বাইন্ডিং ইত্যাদি খাতের সাথে  জড়িতদেরও কর্মসংন্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে। একটি বইকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে থাকে অনেক মানুষের অবদান যেমন প্রথমত লেখক লেখেন,  কম্পোজিটর হাতের লেখাকে কম্পিউটারে কম্পোজ করেন, প্রচ্ছদ শিল্পী বইয়ের চরিত্র অনুযায়ী প্রচ্ছদ আঁকেন, প্রকাশক পান্ডুলিপি ভেদে  নির্ধারিত মাপে কাঠামো দাঁড় করান, এরপর কাগজে প্রিন্ট করার পর পান্ডুলিপি যায় বানান সংশোধকের কাছে, সচরাচর এরা প্রতি ফর্মা  ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় দেখে থাকেন। লেখক-প্রকাশকের সম্মিলিত উদ্যোগে পান্ডুলিপি ফাইনাল করা হলে প্রেসে যায়।  

মেলাকে ঘিরে কয়েক মাস আগে থেকেই বই ছাপার কাজ শুরু হয় নীলক্ষেত, কাঁটাবন, আরামবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানাগুলোতে যদিও পুরান ঢাকার বাংলাবাজারই এর আসল ঠিকানা। এখানেই গড়ে উঠেছে শত শত ছাপাখানা, তৈরি হয়েছে বাঁধাইখানাও। ‘বই বাজার’ হিসেবে পরিচিত পুরো এ এলাকাই দুই মাসযাবত থাকে কম্পোজ, পেস্টিং, পেট, ফাইনাল- শব্দে মুখর। ছুটি বাতিল করে বইয়ের কারিগররা দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রতিটি ছাপাখানায়। কারখানা সংলগ্ন কম্পোজের দোকানগুলোর ব্যস্ততা  থাকে চরমে, যেন কথা বলার সময়টুকু নেই কারও। ছাপা, বাঁধাই ও নান্দনিক মোড়ক লাগানোর পর কর্মচারীর হাত থেকেই বই চলে যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রিন্টার্স মালিকরা জানান, বছরের বেশির ভাগ সময় বসে থাকলেও বই মেলার কারণে ব্যস্ততা  বেড়ে যায়, প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ সেট করে বই ডেলিভারি দিতে হয়। সব মিলিয়ে কাজের চাপ অনেক বাড়ে। অন্যান্য মাসের  চেয়ে শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতনের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন মেলার কয়েক মাস আগে থেকেই। 

বই বাজার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানো অনুপ্রাণন প্রকাশনীর প্রকাশক জানান, তার প্রতিষ্ঠান থেকে গত ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৭১টি বই প্রকাশ হয়েছে। এ মেলা শেষ হলেই আমরা নতুন করে পান্ডুলিপি নেওয়ার কাজ শুরু করব। মে-জুন থেকেই পাবলিস্ট (প্রকাশ)  শুরু হয়, মেলা উপলক্ষে প্রায় ৩০ শতাংশ বই প্রকাশিত হয় নতুন। সারা বছরই আমাদের কাজ চলতে থাকে, বই মেলা উপলক্ষ্যে  ছাপাখানা ও বাঁধাইখানায়ও কাজের চাপ বাড়ে। ফলে এখানে খন্ডকালীন চাকরির সুযোগ হয়, মজুরীও দিতে হয় তুলনামূলক বেশি,  ঘন্টা হিসেবে, দৈনিক হিসেবে, মাসিক হিসেবে নানা ভাবে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এবারের বই মেলায় বেচা কেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে জানা যায়, গতবারে শুরু থেকেই ভালো বিক্রি হয়েছিল, এবার প্রথম দিকে তেমন না হলেও আশা করা যায় শেষ সময়ে বিক্রি বাড়বে, তবে আমরা মনে করছি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঠকরা বই কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, আবার কাগজ ও কালির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিসেম্বর থেকে বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাও বই বিক্রি কম হওয়ার কারণ হতে পারে। কাগজ ও কালি দেশে তৈরি হলেও উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর আমদানি খরচ পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বই মেলায় স্টল ভাড়া এবং বিক্রেতা হিসেবে যারা আছে সব ক্ষেত্রেই ব্যয় আগের তুলনায় বেশি। সবশেষে আবু এম ইউসূফ বললেন, আমি আশা করব কাগজ ও কালির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। বই মানুষকে মনের খোরাক জোগায়। সুস্থ ও সুন্দর জাতি গড়ে তুলতে বইয়ের কোনো তুলনা নেই। তাই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে বই শিল্পকে। এই দিক থেকে ভাষার মাসের গুরুত্ব অপরিসীম যেমন বিজ্ঞাপন ব্যবসা, দৈনিক পত্রিকা থেকে শুরু করে অনলাইন নিউজ পোষ্টার ও বই মেলা কেন্দ্রিক বুলেটিন ছাপানো হয় কোটি কোটি টাকার বিঙ্গাপন। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় পণ্য হিসাবে বই ক্রেতার বহুরুপিতা যেমন কেহ ছাত্র-ছাত্রী, কেহ গবেষক, কেহ সৌখিন ক্রেতা, কেহ আবার কবি সাহিত্যিক, কেহ আবার শিশু শ্রেণির এবং কেহ আবার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি যারা নিজের প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করার জন্য ক্রেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়। একটি তথ্যে দেখা যায় যে ২০২০ সালের বই মেলায় ৮০ কোটি টাকার উপরে বই বিক্রি হয়েছিল এবং বর্তমান বছরে এই অংকটি মূল্যস্ফীতির কারনে বাধাগ্রস্থ হতে পারে বলে মনে হয় বিশেষত; আমাদের মত বই পাঠের চর্চাবিমুখ মানুষের দেশে। সেই বইগুলো বইপ্রেমিক মানুষের বাসার সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরনও বটে যা বই মেলারই অবদান। কারন বইয়ের চেয়ে সুন্দর কিছু আছে বলে মনে হয় না যা প্রতিটি সৃজনশীল সংস্কৃতিমনা মানুষই বুঝেন। তারা বৎসরের এই ক্ষণটির দিকে তাকিয়ে থাকে কখন ফেব্রুয়ারি মাস আসবে আর প্রকাশনা সংস্থা তথা মুদ্রণ কর্মীরা তাদের বিনিদ্র রজনী কাটাবে মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই নূতন বই মুদ্রণের প্রয়াসে যা প্রকাশনা শিল্পের জন্য একটি আলোকিত দিক। প্রতিদিনই মেলায় নূতন বই আসছে যা মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রচার করা হয়ে থাকে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্বের অংশ হিসাবে বিশেষ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তাদের নির্ধারিত চ্যানেলগুলোতে সংবাদের অংশ হিসাবে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত। এই ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এবং এই একি মাসের ২১ তারিখটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বৈদেশিক অঙ্গনে অনেক প্রসারিত হয়েছে।

এখন সাহিত্যের মান দন্ডে আমরা যদি এই সময়টিকে ঘিরে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সৃষ্টির বিষয়গুলোকে মূল্যায়ন করি তাহলে  দেখা যাবে কবিতা ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে একটা শুন্যতার আভাস অর্থাৎ সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চেয়ে এই শাখা  দুটোতে সংখ্যাধিক্ষের ভিত্তিতে সৃষ্টি কম যদিও মানের কথা বিবেচনায় নাই আনি। আবার অন্যান্য শাখায় লেখক থাকলেও মান সম্মত লেখার স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয় এই ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে। যারা সাহিত্য সমালোচক তারা বলছেন মানসন্মত সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের  সংখ্যা ক্রম অবনতিশীল বিধায় আগ্রহে ও পেশায় দু’টুতেই কেমন একটা স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয় সৃষ্টিশীল কাজে। বিষয়টি এমন যে  সাহিত্য সৃষ্টি বা সাহিত্যিক হওয়া একটা ব্যক্তিগত আগ্রহের ব্যাপার যা একটি অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রস্ফুটিত হয়  যার ধারাবাহিকতা অনেকদিন পর্যন্ত চলে। এটি কোন অনুকরণের বিষয় কিংবা সৌখিন বিষয় নয়। এই জায়গাটিতেই সংকট রয়েছে।  কেহ যদি এটাকে পেশা হিসাবে নিতে চায় তবে আর্থিক দৈন্যতার সম্মুখিন হতে হবে এটাই বাস্তব বিশেষত: প্রতিযোগিতামূলক বাজার  অর্থনীতির যুগে যেখানে জ্ঞান চর্চার ফসলের বাজার সংগঠিত নয় আবার সামাজিক স্বীকৃতিও সহজেই ধরা দেয় না। যার ফল ভাষা ও  সংস্কৃতির চর্চাও ক্ষীন হয়ে আসছে প্রজন্ম শুন্যতার কারণে। যারা চলে যাচ্ছে আর যারা আসছে তাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য আকাশ জমিন যা শুধু সাহিত্য বা ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ফলে মনের খোরাকের জন্য যে সাহিত্য প্রয়োজন সে জায়গাটিতে খাদ্য  নিরাপত্তার অভাব রয়েছে যার ফলে অস্থিরতা বা অসন্তোষ বা অস্বস্থি এখন প্রায় সব পরিবারেই নিত্য দিনের সাথী যা মনের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এই ধরনের একটি আত্মসামাজিক পরিস্থিতিতে সাহিত্যিক, উপন্যাসিক কিংবা কবি সৃষ্টি বিশেষত: ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী গ্রন্থ মেলাকে  কেন্দ্র করে কতটুকু অবদান রাখবে তা ভেবে দেখার বিষয়। যারা জনপ্রিয়তা চায় তাদের জন্য এই ধরনের মেলা সাহিত্য কেনা  বেচার একটি ক্ষেত্র হতে পারে কিন্তু ভাল সাহিত্য বা সৃজনশীল সাহিত্য সৃষ্টি কতটুকু সম্ভব হবে তাও দেখার বিষয়। তবে আয়োজক সংস্থা  বাংলা একাডেমী একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান হলেও তাদেরকেও অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এই মেলার আয়োজন করতে হয় বিশেষত: দেশের  সাবির্ক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে। কারণ অতীতের অনেক জীবনহানির ঘটনা এই মেলাকে কেন্দ্র  করেই সংঘটিত হয়েছে যা আমাদের একুশের চেতনাকে বিনষ্ঠ করেছে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সৃজনশীলতা প্রকাশনার চর্চা, সৃজনশীল সাহিত্য  ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্র এই মেলায় আগত কবি সাহিত্যিক দর্শনার্থীদের জীবনের ঝুকি যে বাড়িয়ে দেয়  তা আমাদের মনে রাখতে হবে অতীতের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। তাই আমাদের মতাদর্শগত বিরোধগুলো রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে, গ্রন্থ মেলা  কোন ভাবেই তার ক্ষেত্র হতে পারেনা বা ক্ষেত্র হতে দেয়া যায় না। তাহলে ঘোষিত প্রাণের মেলা কথাটির কোন গুরুত্বই থাকে না যদিও  এর মধ্যে অনেক আবেগ রয়েছে যা দিয়ে সত্যিকার অর্থে জীবন চলে না। এখন যারা সাধারন মানুষ কিংবা ছাত্র-ছাত্রী তাদের কাছে এই  সকল কথার অর্থ নিরর্থক বলে মনে হতেই পারে।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)