মিহির স্যার

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: প্রয়োজন মনিটরিং

ড. মিহির কুমার রায়: বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকলেও দেশের বাজারে উল্টো চিত্র। কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ এবং আমদানি না হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি শতক ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে দ্রত পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেছেন বাণিজ্য মন্ত্রী। কমোডিটি অনলাইনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিগত ২০ মে, ২০২৩ ভারতের কলকাতায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৯ টাকা এবং দিল্লিতে ৩২ টাকা, পাকিস্তানে ৩২ টাকায়, মিয়ানমারে ১১১ টাকায়, চীনে ৬৩ টাকা এবং বাংলাদেশে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০ মে রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সাবেক সাংবাদিক ও দিল্লির বাসিন্দা সুরাইয়া সারথি রায় গত শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ কালের কণ্ঠকে বলেন, দিল্লিতে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক এবং এখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫ রুপিতে, আর কলকাতায় বিক্রি হয়েছে ১৫ রুপিতে। এদিকে পাকিস্তানের লাহোরের বাসিন্দা সার্ক চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব রাষ্ট্রদূত রহমত উল্ল্যা জাবেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, লাহোরে একি সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ পাকিস্তানি রুপিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ টাকা। শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা জানান, ২০ মে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ১৮ই মে ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। তিনি আরো বলেন, সরকার দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিলে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা কমে যাবে, দেশের স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ বর্তমানে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যানুসারে বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার টন, আমদানি করা হয় ছয় থেকে সাত লাখ টন আর সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে গত রমজানে পেঁয়াজের বাজার ছিল খুবই সাভাবিক (প্রতি কেজি ৩০ টাকা মাত্র) অথচ বর্তমানে এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি কেন? অনেকেই বলছে সিন্ডিকিট পেয়াজ সহ সকল বাজারই নিয়ন্ত্রন করছে, বাজার খেকে কোটি কোটি টাকা তুলে  নিচ্ছে, সামনে সরকার বদলের নির্বাচন বিধায় ব্যবসায়ী মহল মনে করছে এই সুযোগে যা কামিয়ে নেয়া যায়। বাণিজ্য মন্ত্রী বলছেন প্রয়োজনে পেঁয়াজ আমদানীর ব্যবস্থা চলবে। কিন্তু এতেই কি সংকট নিরশন হবে? এই প্রশ্নটি সকলের যার উত্তরটি কার কাছে রয়েছে এই বাজার অর্থনীতির যুগে। দেশের ডলারের সংকট রয়েছে যার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এখন এই দুরমুল্যের সময পেয়াজের পেছনে ডলার ব্যয় করার যৌক্তিকতাই বা কি?

জানা গেছে, দেশে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে পেঁয়াজ। এ কারণে এখন ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দেশে ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে পেঁয়াজের দাম নেমে আসবে। এতে করে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। তবে পেঁয়াজের দাম বাড়ার এই সুফল বেশিরভাগ কৃষক বা উৎপাদনকারীরা পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে কমদামে পেঁয়াজ কিনে নিয়েছে পাইকার, আড়তদার ও মোকাম মালিকরা। ফলে কৃষকের কাছে এখন আর বেশি পেঁয়াজ নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এ মুহূর্তে ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত নয়। অথচ জাত ও মানভেদে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। এদিকে, বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের জানান বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনের বেশি, এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি, আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। বর্তমানে ১ কেজি দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা এবং এই পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হলে কৃষকরা ভালো মুনাফা করতে পারেন।

সামনে কোরবাণীর সময় যতই ঘনিয়ে আসবে ততই পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে বিধায় মুল্য নিয়ন্ত্রনে না আনতে পারলে ভোক্তাদের কষ্ট বাড়বে। এই বিবেচনায় সরকার পেয়াজ আমদানীর কথা ভাবছে এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য ১ মাস আগে ৩০ টাকা ছিল, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা এখনই প্রয়োজন। এ অবস্থায়, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়কে। দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন এবং প্রতিদিন সারাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৬ হাজার টন আর ঢাকা শহরেই চাহিদা প্রতিদিন দেড় হাজার টন। সেই হিসেবে আগামী ২ মাসে পেঁয়াজ লাগবে সাড়ে তিন লাখ টন। দেশের ভেতরে লাগামহীনভাবে পেঁয়াজের মূল্য বাড়বে কেন? বর্তমানে প্রতি কেজি ৮০ টাকার বেশি যা দিয়ে দেড় কেজি চাল, আধা কেজি মুগ/মসুর ডাল ও আধাকেজি কেজি আপেল কেনা যায়। দেশে ১২ শতাংশ হারে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের চাহিদাও বাড়ছে ভোক্তার ক্রয়-ক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য। পেঁয়াজের জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপর বেশি নির্ভরশীল বিশেষত সমধর্মী পেঁয়াজের জাত, সুবিধাজনক যাতায়াত ব্যবস্থা ও সহায়ক মূল্যের জন্য। আবার আমদানিকারক দেশ ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের আমদানির  মাধ্যমে প্রবেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অবশ্য আগের মতো এবছর পেয়াজের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে বলে মনে হয় না। কারন দেশের ভিতরের পেঁয়াজের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বেশী হয়েছে এবং ব্যবসায়ী থেকে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের  মজুদও ভাল রয়েছে। 

তাত্বিক বিশ্লেষন খেকে জানা যায় পেঁয়াজের একটি বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে যেমন পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে, ক্যালসিয়াম- সালফার- ভিটামিন সংযোজনে, শরীরের তাপমাত্রা কমাতে, লিভারের হজম শক্তি বাড়াতে, ত্বকের সমস্যা নিরসনে, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে। সাধারণভাবে তিন ঋতুতে পেঁয়াজের চাষ হলেও বর্ষায় এর চাষ বেশি হয় যদিও বন্যার একটা অনিশ্চয়তা কিংবা বর্ষার একটি সঙ্কট রয়েই যায়। তারপরও যে বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়, সে বছর আবার কৃষক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় এবং পরবর্তী বছরে পেঁয়াজ চাষে কৃষক আর উৎসাহিত না হয়ে অন্য ফসলে চলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায় পরবর্তী বছরে। এই পরিস্থিতিতে সুযোগ সন্ধানী উদ্যোক্তাগণ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলার সুযোগ পায় যা কৃষিপণ্যে বিপণনে খুবই লক্ষণীয়। ফরিদপুরের কয়েকটি পেঁয়াজের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পর এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে, সপ্তাহখানেক আগেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৪৯-৫২ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল, তবে বর্তমানে তা উর্ধ্বমুখি রয়েছে। কৃষকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজের ফলন কিছুটা কম হয়েছে, গত বছরও প্রতি শতকে প্রায় ২ মণ পেঁয়াজ পাওয়া গিয়েছিল, চলতি বছর সেটা এক থেকে দেড় মণে নেমে এসেছে, ফলে সার্বিক উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে পেঁয়াজের অঞ্চলগুলোতে। পেঁয়াজের মৌসুমে বৃষ্টি, বিরূপ আবহাওয়া ও আমদানি করা কিছু নিম্নমানের বীজের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে গত বছরের তুলনায় পরিবহন খরচ বেড়েছে এটাও পেঁয়াজের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। চলতি বছরে পেঁয়াজ চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ গত বছর ছিল ২২ টাকা, এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৮ টাকা। রোজা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ঠিক ছিল কেজিপ্রতি ৫০ টাকা ছিল যা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই ধরা যায়। সাধারণত পেঁয়াজ ওঠে মার্চ-এপ্রিল মাসে কিন্তু এক মাসের মধ্যে এমন দাম বাড়া অস্বাভাবিক। এতে মনে হয় করপোরেট লোকজন সিন্ডিকেট করছে, কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ লোক, পাবনা-ফরিদপুর অঞ্চলে হাজার হাজার কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করছে, যখনই খবর পাচ্ছে ভারতে বৃষ্টি হয়েছে, তখনই দাম বেড়ে যাচ্ছে, যখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করছে তখন দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্তায় এর একটি টেকসই সমাধানের প্রয়োজন। সারাদেশে কৃষিপণ্য মজুদের জন্য অত্যাধুনিক কোল্ড স্টোরেজ তৈরি হলে কৃষকের মূল্য ভোগান্তি আর ভোক্তার বেশি মূল্য পরিশোধের অনিশ্চয়তা থাকবে না যা পিপিপির মাধ্যমে হতে পারে। তারপরও কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের পরনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বিশেষত: কৃষিজাত পণ্যের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরমার্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। দেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং বছরে ২ থেকে ৩ বার চাষ করার মতো উফশী জাতের বীজ রয়েছে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষাকালীন পেঁয়াজের চাষ, পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য দেশে প্রয়োজনীয় ওয়্যার হাউস নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। পেঁয়াজ আমাদের দেশে মূলত শীতকালীন ফসল যা দেশের ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে আর ৩০ শতাংশ নিয়ে জাতির চিন্তা। এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-২ এবং বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের ৩টি গ্রীষ্মকালীন জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার নয়টি কৃষিপণ্যের ওপর প্রণোদনা দিয়েছে যার মধ্যে পেঁয়াজও আছে এবং পেঁয়াজ চাষীরা যাতে সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পেঁয়াজ এমন একটি মসলা জাতীয় ফসল যা পৃথিবীব্যাপী উৎপন্ন হয় এবং সব চাইতে বেশি উৎপাদন হয় ভারত ও চীন দেশে বিশেষত আদ্র অঞ্চলগুলোতে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম হয় আর হালকা শীত থাকে। আমদানি বাণিজ্যে আমদানিকারকদের সকল বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করতে হবে, টিসিবির কার্যক্রম ভোক্তাবান্ধব হতে হবে, বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে, বাজার স্থিতিশীল হতে হবে, সঠিক নিয়মে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করতে হবে ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে মূল্য বিপর্যয়ের কোন সম্ভাবনা থাকবে না যা কৃষক, ভোক্তা ও সরকারের জন্য একটি স্বস্তির বিষয় হতে বাধ্য। সর্বোপরি পেঁয়াজ উৎপাদনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। বাংলাদেশে পেয়াজ উৎপাদনকারী প্রধান এলাকা হলো পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরেপুর, বগুরা ও লালমনিরহাট। এ সব এলাকার চাষীদের গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বেশী উৎসাহ দিতে হবে বিশেষত: অতিবৃষ্ঠি ও বন্যার কথা বিবেচনায় রেখে। বাজার অর্থনীতি বলছে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতেই কৃষি পন্যের মূল্য নির্ধারিত হবে কিন্তু পেয়াজের ক্ষেত্রে চাহিদা কিংবা সরবরাহের মধ্যে কোন ঘাটতি নেই তা হলে মূল্য বাড়ার কারন কি তা সরকার খুজে বেড় করবে এবং যদি কোন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থেকে থাকে তা ভোক্তা অধিকার আইনের  আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। পেয়াজ চাষীর সংখ্যা কত, তাদের কত একর জমিতে পেঁয়াজের চাষবাদ হয়,  তাদের কি প্রয়োজন, বিপনণের কি আয়োজন ইত্যাদি নিয়ে কৃষি দপ্তরকে আরো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এ ব্যাপারে উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই কারন পরনির্ভরতা মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে ধোকে ধোকে খেয়ে ফেলে যা থেকে জাতি মুক্তি চায়।

(লেখক: সিন্ডিকেট সদস্য, ডীন ও অধ্যাপক, সিটি ইউনিভার্সিটির্ ও সাবেক জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা)

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)