কমে আসছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অর্থনীতি

জ্বালানি তেল উত্তোলনে সীমা আরোপ

কমে আসছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার (এমইএনএ) অর্থনীতিতে চলতি বছরে ধীরগতি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কারণ হিসেবে অঞ্চলটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে সীমা আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতিও অঞ্চলের অর্থনৈতিক ধীরগতিতায় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ন্যাশনাল নিউজ।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৩ সালে এমইএনএ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশে। এর আগে এপ্রিলের পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩ শতাংশ। অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত জ্বালানি তেল রফতানিকারী উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাক, ইরান ও আলজেরিয়া। চলতি বছর তাদের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশে ঠেকবে। অথচ গত বছরে দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

সে অনুপাতে অঞ্চলের জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশগুলোর অবস্থা অনেক বেশি মন্থর। মূল্যস্ফীতির চাপ, অর্থনৈতিক চাপ ও উচ্চ সুদহারের প্রভাব বেশি নেতিবাচক হয়ে দেখা দিয়েছে দেশগুলোর জন্য। মিসর, তিউনিসিয়া, জর্ডান ও মরক্কোর প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের এমইএনএ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রোবার্টা গ্যাটি বলেন, ‘‌২০২২ সালের প্রবৃদ্ধি দেখে সাধারণত দুটি আলাদা এমইএনএ অঞ্চলের চিত্র পাওয়া যায়। যেসব দেশ জ্বালানি তেল রফতানি করে তাদের সম্প্রসারণ তুলনামূলকভাবে দ্রুত হচ্ছে। অন্যদিকে যেসব দেশ জ্বালানি তেল আমদানি করে, তাদের প্রবৃদ্ধি মন্থর।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য বিষয়টি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। গত বছরের নভেম্বরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৭ ডলারে দাঁড়িয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তা কমতে শুরু করেছে। এদিকে ওপেকভুক্ত দেশগুলো জ্বালানি তেল উত্তোলন প্রতিদিন ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা বৈশ্বিক চাহিদার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। উত্তোলনের এ সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে যাবে ওপেক। জ্বালানি তেলের উত্তোলনে এ সীমা আরোপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত। গত মাসে সৌদি আরব ও রাশিয়া যৌথভাবে বছরের শেষ নাগাদ দৈনিক ১৩ লাখ ব্যারেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত জানায়।

পূর্বাভাসে জ্বালানি তেল উত্তোলনের এ সীমা আরোপ ও সরবরাহের বিষয়টিকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তবে লিবিয়ার বন্যা ও মরক্কোর ভূমিকম্পের ক্ষতিকে আমলে নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ এমইএনএ অঞ্চলের ১৫টি দেশের মধ্যে আটটিই মাথাপিছু জিডিপির দিক দিয়ে মহামারী-পূর্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ফিরে যাবে।

সৌদি আরবের অর্থনীতি গত বছরে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। চলতি বছরে দেশটির প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি দেখা যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। যদিও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, সৌদি আরবের অর্থনীতি চলতি বছরে দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে।

এমইএনএ অঞ্চলে মাথাপিছু আয় কমবে চলতি বছরে। শ্রমবাজারের পুনর্গঠন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমইএনএ অঞ্চলে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেরিদ বেলহাজ বলেছেন, ‘‌যদি অঞ্চলের অর্থনীতিতে শ্লথগতি থাকে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে অঞ্চলটির ৩০ কোটি তরুণ কীভাবে কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হবে। এমইএনএ অঞ্চলের শ্রমবাজারের উন্নয়নে এ মুহূর্তে কার্যকর সংস্কার প্রয়োজন।’

বিনিয়োগবার্তা/এমআর//


Comment As:

Comment (0)