ইউএই-মালয়েশিয়ার বৈঠক

ইউএই-মালয়েশিয়ার বৈঠক

জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে বাণিজ্য ৪৮০ কোটি ডলার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে গত বছর বাণিজ্য হয়েছে ৪৮০ কোটি ডলার। উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে পর্যটন, ডিজিটাল ইকোনমি, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতে। উভয় পক্ষই বাণিজ্য আরো বাড়াতে চায়। বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে দেশ দুটি কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) চুক্তির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতা ও ব্যবসায়ীরা আবুধাবিতে বৈঠক করেছেন। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

২০২২ সালে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে দুই দেশের বাণিজ্য ৪৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ৩৫০ কোটি ডলার। ২০২০ সালের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে ব্যবসার পরিমাণ। মালয়েশিয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১২তম বাণিজ্যিক অংশীদার। অন্যদিকে, আরব বিশ্বে মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরব দেশগুলোর সঙ্গে মালয়েশিয়ার হওয়া মোট বাণিজ্যের ৩২ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দখলে। এছাড়া মালয়েশিয়ার পণ্যের অন্যতম প্রধান গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরব অঞ্চলে মালয়েশিয়ার রফতানি পণ্যের ৪০ শতাংশই যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

ইউএই-মালয়েশিয়া বাণিজ্যিক বৈঠকে ইউএইর পক্ষে নেতৃত্ব দেন বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমদ আল জিয়ুদি। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী টেংকু জাফর টেংকু আবদুল আজিজ। সেখানে উপস্থিত ছিল দুই দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রতিনিধিরাও। গোলটেবিল বৈঠকটির মাধ্যমে বাণিজ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি জোর দেয়া হয়।

বৈঠকে আল জিয়ুদি ইউএই ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‌সংযুক্ত আরব আমিরাত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ। দুটি জাতির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আগামী দিনগুলোয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও এগিয়ে নেবে। তবে এজন্য গঠনমূলক উদ্যোগ নিতে হবে। তৈরি করতে হবে সুযোগ।’

দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণ সুবিধা, বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে জোর দেয় উভয় পক্ষই। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। আনোয়ার ইব্রাহিম সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানিগুলোকে মালয়েশিয়ায় আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘‌সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ ২১ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আমরা স্বাগত জানাই। এডিএনওসি, টিএকিউএ, মাসদার, আল-দাহরা, লুলু, ডিপি ওয়ার্ল্ড, এডিএআইএ ও মুবাদালার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মালয়েশিয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করুক। মালয়েশিয়া এর আগে আন্তর্জাতিক কোম্পানি টেসলা, ইনফিনিয়ন ও গিলির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছে। মালয়েশিয়ার বাণিজ্য নীতিমালা যেকোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের জন্য অনুকূল।’

মালয়েশিয়া সম্প্রতি নতুন শিল্প লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেশটি জ্বালানি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের জন্য অনুকূল। পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকে। আনোয়ার ইব্রাহিম দাবি করেছেন, মালয়েশিয়া ও ইউএইর মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্ক নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল ইকোনমি, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও সংযুক্তিকে আরো বাড়াবে।

গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্ভাবনা ও খাত নিয়ে নিজেদের আলোচনা তুলে ধরেন। বিশেষ করে জ্বালানি, নবায়ন যোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, লজিস্টিকস, খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোয় জোর দেয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৌশলগত অবস্থান এবং অবকাঠামোকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মালয়েশিয়া। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার কাঁচামাল ও অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া সেপা চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় চুক্তি স্বাক্ষর করে। দুই পক্ষের মধ্যে সে আলোচনা এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নতুন ধাপে উন্নীত হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিনিয়োগবার্তা/এমআর//


Comment As:

Comment (0)