সিঙ্গাপুর 023

মন্দা এড়ালেও গতি ফিরছে না সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  চলতি বছরের শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি। ওই সময় কোনোমতে মন্দার ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হয় বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশটি। বর্তমানে অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো পারফর্ম করলেও প্রবৃদ্ধি অনেকটাই ধীর। বছরের বাকি সময় এবং আগামী বছরও এ অবস্থা বজায় থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দেশ দুটির ওপর সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভরশীল। প্রাথমিক পূর্বাভাসের তুলনায় বড় দুই অর্থনীতির দেশ খারাপ পারফর্ম করলে তা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেলে কিংবা তাদের বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মুখে পড়লে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সিঙ্গাপুরের রফতানি ও বাণিজ্যনির্ভর শিল্প।  

দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় (এমটিআই) জানায়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। আর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় বেড়েছে ১ শতাংশ। ওই সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে এ সময়। কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত কম। 

সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা করছে। এ বছরের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে তারা। সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি নামবে দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে। দেশটির মুদ্রা কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সিঙ্গাপুরের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদারদের প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে বাড়বে। 

গবেষণা সংস্থা বিএমআই রিসার্চের বিশ্লেষকদের  বরাত দিয়ে এশিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালেও সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি দশমিক ৮ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে থাকার পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। বিএমআই গবেষকরা আগামী বছর সিঙ্গাপুরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৫ শতাংশে নামার আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, দেশটির প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার দেশগুলোয় আগামী বছরজুড়েও মন্দা দশা থাকবে। এ কারণে সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি মন্থর থাকতে পারে। 

সাংবিধানিকভাবে সিঙ্গাপুরের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালে। তাই এই সময়ের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট দেয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে তাদের। মহামারীকালীন ঘাটতি পূরণের চাপও রয়েছে সরকারের ওপর। অন্যদিকে বিএমআই বলছে, ‘‌চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে মন্থরতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সিঙ্গাপুরের মতো ছোট ও উন্মুক্ত অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত খরচ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিঙ্গাপুরের প্রকৃত আয় নির্ভর করছে আগামী বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়া ও শ্রমবাজারের পরিস্থিতির ওপর। রফতানি কমে যাওয়ায় ব্যবসা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রত্যাশিত বিনিয়োগের পরিমাণ কভিডপূর্ব পর্যায়ের চেয়েও কমে যেতে পারে। 

নগররাষ্ট্রটির অর্থনীতি মূলত তেলবহির্ভূত পণ্য রফতানিনির্ভর। সরকারি তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির পণ্য রফতানি টানা ১২ মাসের মতো কমে গেছে। মাসটিতে রফতানি হ্রাস পেয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। ইলেকট্রনিকস ও নন-ইলেকট্রনিকস উভয় পণ্য রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর আগে আগস্টে রফতানি কমেছে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। তার আগে জুলাইয়ে কমেছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এ হিসাবে অবশ্য সেপ্টেম্বরে রফতানি হ্রাসের মাত্রা কিছুটা কমেছে।

বিনিয়োগবার্তা/এমআর//


Comment As:

Comment (0)