আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২ ট্রিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ১ দশমিক ৬৯৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ঘাটতির এ আকার কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছরের তুলনায় ঘাটতি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও উচ্চ সুদের কারণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতিতে প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছে দেশটির অর্থ বিভাগ। খবর রয়টার্স।

অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২০২১ সালের মহামারীর পর সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে দেশটিতে ঘাটতির আকার ছিল ২ দশমিক ৭৮ ট্রিলিয়ন ডলার। মহামারীজনিত ব্যয় ও বরাদ্দের কারণে বেড়েছিল ঘাটতির পরিমাণ। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরবর্তী দুই বছরে ঘাটতি কমতে থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সম্প্রতি বাইডেন কংগ্রেসে নতুন করে ১০ হাজার কোটি ডলার সহায়তার প্রস্তাব তোলেন। তার মধ্যে ৬ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেন এবং ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ইসরায়েলের জন্য। বাকি অর্থ বরাদ্দ হবে দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। 

ঘাটতির আকার মহামারীপূর্ব রেকর্ডকেও অতিক্রম করে গেছে। ফলে এর মধ্য দিয়ে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানদের সঙ্গে টানাপড়েন আরো বাড়বে। জুলাই থেকেই রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে ব্যয় সংকোচনের জন্য চাপ আসছিল।

সেপ্টেম্বর ছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস। মাসটিতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় কম। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঘাটতির আকার ছিল ৪৩ হাজার কোটি ডলার। অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এবং বাজেট পরিচালক শালান্ডা ইয়াং যৌথ বিবৃতিতে জানান, ২০২৩ অর্থবছরে ঘাটতির পেছনে সরকারি রাজস্ব কমে যাওয়া একটি বড় অনুঘটক। ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে শুল্কনীতির সংস্কার করেছেন, তার সম্ভাবনা ও প্রয়োগ বিবেচনার দাবি রাখে।   

২০২২ অর্থবছরে ঘাটতির আকার ছিল ১ দশমিক ৩৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। সেদিক থেকে ২০২৩ অর্থবছরে ঘাটতির আকার বেড়েছে ৩২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এ ঘাটতির মধ্য দিয়ে বাইডেনের আমলে ঘাটতি কমানোর যে প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, তার সমাপ্তি ঘটল। এর আগে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ছিল রেকর্ড ৩ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি, বেকার ভাতা ও সুবিধা এবং মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তকে সহযোগিতার কারণে তখন বেড়েছে ব্যয়ের আকার।

বাজেট কর্তৃপক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে, চলমান শুল্কনীতি এবং ব্যয় অব্যাহত থাকলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ ঘাটতির পরিমাণ মহামারী পর্যায়ে পৌঁছবে। বাড়বে সুদ, স্বাস্থ্য ও পেনশনজনিত ব্যয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ঘাটতির আকার দাঁড়াবে ২ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার কমেছে। আয় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ শুল্ক কমে যাওয়া। সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে চাহিদা কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। যার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় আয়ে। রাষ্ট্রের আয়ের উৎসের অন্য খাতগুলো ব্যাহত হয়েছে চলমান পরিস্থিতিতে। দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের আয় কমেছে ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

সামাজিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৪১৬ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে জীবনযাপনের ব্যয়। স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ২২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে ২৩ শতাংশ। গত দেড় বছরে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে।

বিনিয়োগবার্তা/এমআর//


Comment As:

Comment (0)