৬ খা‌তে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন ও হংকংয়ের ৪০ কোম্পানি

কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি প্রকর্মী/নাগরিকগণের বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ আর থাকবে না। 
 
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বিডা’র কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত “কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কর্মী/নাগরিকগণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।  

সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে  প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, আয়কর ফাঁকি দিয়ে অনেক বিদেশী নাগরিক এ-থ্রি ভিসা, বি-ভিসা কিংবা টুরিস্ট ভিসায়  বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা এক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজে এসে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছেন, ২০০৬ সালে প্রণীত ভিসা নীতিমালায় কর্মানুমতি গ্রহণের শর্ত না থাকায় অনেকে আবার কর্মানুমতি না নিয়ে কিংবা ভিসার মেয়াদ না থাকায় বা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বছরের পর বছর কাজ করে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করে দেশ ত্যাগ করেন। এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক ও প্রগ্রেসিভহারে জরিমানার বিধান আরোপ করার সিধান্ত নিয়েছি। সেই সাথে কর্মানুমতি থাকা সাপেক্ষে বিদেশী নাগরিকগণ যদি অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চান তাহলে নির্ধারিত ফি প্রদান করে সেই প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবেন, সেক্ষেত্রে তার নিজ দেশে গিয়ে পুনরায় ভিসা করার দরকার পড়বে না।   

অনেকে টুরিস্ট বা বিজিনেস ভিসায় এসে কর্মানুমতি প্রাপ্তির কাগজ পত্র প্রেসেসিং এর জন্য ৩ মাস এবং অনুমোদনের ৩ মাস সময় পেয়ে থাকেন, আমরা  আজকের সভায় সেটিকে উভয় ক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। 

এসময়ে তিনি আরো বলেন, কর্মানুমতি সহ ভিসা জটিলতা দূর করার জন্য, বিদেশী নাগরিকগণ বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসার আবেদন করতে পারবেন, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতগণ অনলাইনের মাধ্যমে সে ভিসার আবেদন আমাদের স্পেশাল ব্রাঞ্চে প্রেরণ করবেন, এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ সাত দিনের মধ্য ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করবেন। 

ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে কাজ করায় সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কোন বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করে কাজ করলে আয়কর প্রদান ও কর্মানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামুলক, সেই হেতু এটা অপরাধ। সেই সাথে আমরা দেশি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে আবেদন রাখতে চাই যে যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল বাংলাদেশেই রয়েছে তাদের রিপ্লেসমেন্টে যেন বিদেশী কর্মীদের না আনা হয়।

এসময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরো বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনেক বিদেশী নাগরিক অবাধভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। সেটি দূর করার জন্য, আমরা তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এনএসআই, ইমিগ্রেশন, ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রবেশ যোগ্যতা সম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ইন্টার অপারেবল ডাটা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অন্য প্রতিষ্ঠান সহজেই একসেস করতে পারে। এর ফলে বিদেশী নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে।  যার ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য রেগুলারাইজড হবে, সেই সাথে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডের উপরে সহজেই নজরদারি করা যাবে। 

বিভিন্ন সময়ে অনেকে বলে থাকেন যে বাংলাদেশে ৪/৫ লক্ষ বিদেশী নাগরিক আছেন, যেহেতু অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের পূর্নাংগ তালিকা বা সংখ্যা আমাদের হাতে নেই, তাই বলা চলে এটা নিছক অনুমান নির্ভর। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত  বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশী নাগরিকদের সংখ্যা, ১০৭,১৬৭ জন। এর মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ভিসায় রয়েছেন ১০,৪৮৫ জন, ইমপ্লয়ি ভিসায় ১৪,৩৯৯ জন, স্টাডি ভিসায় ৬,৮২৭ জন এবং টুরিস্ট ভিসায় রয়েছেন ৭৫,৪৫৬ জন। অফিসিয়ালি সব চেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক ৩৭,৪৬৪ জন, ২য় অবস্থানে রয়েছে চীনের নাগরিক ১১,৪০৪ জন। 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি প্রকর্মী/নাগরিকগণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্ত্যব প্রদান করেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, এসময়ে তিনি বলেন, কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশী নাগরিকদের দেশে কাজ করার ফলে, তাদের অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, ফলে ক্রমান্বয়ে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ম মেনেই বাংলাদেশে কাজ করতে হবে। 

সভায় বিডা’র নির্বাহী সদস্য মিজ মোহসিনা ইয়াসমিন, কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানের কারন, অবৈধ অবস্থানের কারনে সৃষ্ট সমস্যা, ডিজিটালাইজেশন সংক্রান্ত সুপারিশ, এ-থ্রি ভিসা, জরিমানা/শাস্তি, কর্মানুমতি নিশ্চিতকরণ, কর্মানুমতি প্রদানকারী দপ্তরসমূহের মধ্যে সমন্বয়, ভিসা অন এরাইভাল, কালো তালিকাভুক্ত সংক্রান্ত সুপারিশ সমূহ তুলে ধরেন। 

সভায় মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তপন কান্তি ঘোষ, সিনিয়র সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, শেখ ইউসুফ হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব), বেজা, মোঃ মোকাম্মেল হোসেন, সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রনালয়, মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়,  মোঃ আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহম্মদ জিয়াউর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেপজা, জিএসএম জাফরুল্লাহ, এমডি, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান, মহাপরিচালক, এনজিওএবি, অভিজিৎ চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব), বিডা, মোঃ খাইরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব), বিডা, মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, নাফিউল হাসান, মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মোহম্মদ ফাইজুর রহমান, পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মেজর জেনারেল মোঃ নুরুল আনোয়ার, ডিজি, ডিপিআই সহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর সমূহের উর্ধত্বন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং  কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি প্রকর্মী/নাগরিকগণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত ব্যক্ত করেন।  

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)