ফিকি

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এফআইসিসিআই

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে প্রকৃত করহার কমানোর প্রস্তাব এফআইসিসিআইর

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রকৃত করহারের আধিক্য বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য বড় বাধা বলে মনে করছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, ‘প্রকৃত করহার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এফডিআই পরস্পর সম্পর্কিত। পর্যায়ক্রমে আমাদের প্রকৃত করহার কমাতে হবে, যাতে এটা অন্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন এফআইসিসিআই সভাপতি। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এদিন মেট্রোপলিন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও এফআইসিসিআইয়ের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি ও এফআইসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা। এছাড়া কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর নীতির সদস্য এবং প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিবরাও আলোচনায় অংশ নেন। 

এফআইসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সবসময় দেখবে, কোন জায়গা থেকে সে বেশি রিটার্ন পাবে। এজন্য আমাদের এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে বিনিয়োগটা ভিয়েতনাম বা অন্য কোনো দেশে না গিয়ে বাংলাদেশে আসে। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সমগ্র এশিয়াতেই এফডিআই কমেছে ৯ শতাংশ। আর এটা ৩০ শতাংশ বেড়েছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোয়। আর্থাৎ বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সেই দেশগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আমাদের এফডিআই আকর্ষণীয় করে তুলতে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এফডিআই বাড়লে অভ্যন্তরীণ রাজস্বও বাড়ে। দেশ হিসেবে আমাদের এফডিআই সবসময় সর্বনিম্ন। এফডিআই হওয়া উচিত জিডিপির ৫ থেকে ৬ শতাংশ, যেখানে আমাদের এফডিআই মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। আমাদের প্রকৃত করহার বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে অনেকগুলো ডিসঅ্যালাউন্স। আমরা যখন ট্যাক্স সাবমিট করছি, তখন আমাদের প্রকৃত করহার অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। কারণ অনেক খরচ রিটার্নে আমরা দেখাতে পারছি না।’ এফআইসিসিআইয়ের এক গবেষণার সূত্র দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত করহার ২০ শতাংশ কমালে দেশে এফডিআই ১৪ শতাংশ বাড়বে।’ 

এফআইসিসিআই বাজেট প্রস্তাবে জানায়, দেশে স্মার্ট কর পরিবেশ তৈরি করার জন্য বর্তমানে এনবিআরের তিন উইংয়ের যে ডিজিটাল কাঠামো আছে, তার ইন্টিগ্রেশন করতে হবে। ব্যবসাকে সহজ করতে পর্যায়ক্রমে একক ভ্যাটের হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয় এ চেম্বারের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি উৎস কর বিধি প্রত্যাহার করে কর ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে এফআইসিসিআই।

এমসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কার্যকরী করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব করে সংগঠনটি।

প্রস্তাবনায় এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘বিগত অর্থবছরে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রায় সব ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় হ্রাসকৃত কোম্পানি করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না। অর্থ আইন-২০২৩ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলির প্রযোজ্যতার কারণে হ্রাসকৃত করহার সুবিধা নেয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না।’ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ শর্ত বাতিলের সুপারিশ করেন তিনি।

কামরান টি রহমান বলেন, ‘বাস্তবে এই করপোরেট করহার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হলেও তা ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় আয়কর হার, ভ্যাট হার, সম্পূরক কর, শুল্কহারসহ কাস্টমস ডিউটি পুনর্বিন্যাস করা আবশ্যক।’

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘অর্থনীতিতে সবসময় একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। সবসময় আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ আশা করতে পারি না। বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করপোরেট করহার কমানো হয়েছে।’

যৌক্তিকভাবে প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘অটোমেশন লাগবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে রাতারাতি সবকিছু করে ফেলা সম্ভব নয়। এজন্য সময় লাগবে।’

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)