মুজিববর্ষে করোনা ভাইরাস

কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ কি বাস্তবায়নযোগ্য?

ড: মিহির কুমার রায়: কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে থাকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সে ক্ষমতাবলে সম্প্রতি মাছ-মাংস, খেজুর,  বিভিন্ন সবজিসহ মোট ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকারের এ সংস্থা। যদিও কেউ তা না মানলে কোনো ধরনের শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা নেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী,  তদারকির মাধ্যমে তারা কেবল অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তখন দ্বারস্থ হতে হয় প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। সংস্থাটি থেকে তাই বিভিন্ন সময় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে বিভিন্ন সময় দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও বাস্তবায়নকারী বা তদারকি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে  বাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একই ছাতার নিচে এনে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা। 
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি মনে করেন, ‘আমাদের দেশে বাজার তদারকির ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান সমন্বয় নেই। যদিও মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসন সমন্বয় করার কথা ছিল।  কিন্তু তা আমরা দেখছি না। সমন্বয় না থাকলে কোনো কাজেই ফল আসে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। এতে কাউকে জরিমানা করলে তার ফলোআপ কেউ করছে না। আইনের প্রয়োগও যথাযথ হচ্ছে না।  কারণ আইনে বলা হয়েছে, একই ব্যক্তি একাধিকবার অপরাধ করলে তার শাস্তিও বেশি হবে। সমন্বয়হীনতা এখন বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচ, উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম, পাইকারি বাজারে ও ভোক্তা  পর্যায়ে খুচরা দাম কত হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। যদিও নির্ধারিত এ দামে বাজারে পণ্য পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অনেক পণ্যের  ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অসামঞ্জস্য। সংস্থাটির হিসাবে প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১৪৬ টাকা। সে  অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ১৭৫ টাকা। যদিও রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি  হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৪, ছাগলের মাংস ১ হাজার ও সোনালি মুরগি  ২৬২ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। যদিও রাজধানীর খুচরা বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা, ছাগল বা খাসি  ১০০০-১১০০ ও সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি পিস ডিমের দাম সাড়ে ১০ টাকা ধরা হলেও  বিক্রেতারা রাখছেন সাড়ে ১১ টাকা করে। 

পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার প্রতিফলন না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা যে আইনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি বাজারে তার ব্যত্যয় ঘটলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। কেননা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শাস্তি দিতে পারে না। আমরা শুধু অভিযোগ দিতে পারি। তার প্রমাণাদির ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট শাস্তি দেন। মোবাইল কোর্টে মামলা করার যে পদ্ধতি তার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে অভিযোগ দেয়া হয় এবং তারপর দুই পক্ষের কথা শুনে বিচার করা হয়।’

কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪ (ঝ) ধারায় বলা হয়েছে, সংস্থাটি কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন ও যৌক্তিক মূল্য  নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন করতে পারবে। এ আইন বাস্তবায়নে বাধা দূর করতে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড অথবা ১  লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী কাউকে শাস্তি দিতে হলে প্রথম  শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে আইনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাই থাকুক, কোনো প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ আইনের অধীন দন্ড আরোপ করতে পারবেন। নিজেদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা জনবল সংকট। সারা দেশে সব মিলিয়ে ৫০০-এর মতো জনবল রয়েছে। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারেন প্রতি জেলায় এমন আছেন কেবল দুই-তিনজন করে। আইনি সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। তাই আমাদের অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা নেই। আমরা এর আগে এ বিষয়ে আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু জনবল কাঠামো অনুসারে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আছেন হাতে গোনা কয়েকজন।’ দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায় থেকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মীরা নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী এ তথ্য সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি সংস্থারও সহায়তা নেয়া হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আগে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সদ্যই দাম  নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিরই দায়িত্ব রয়েছে। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের অংশের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। এ মূল্য বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কারণ মাত্রই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’

ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাডার পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালিয়েও ওই দাম কার্যকর করতে পারেনি। রোজার আগে ভোজ্যতেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। এরপর দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজার, পরিশোধন কিংবা  মোড়কজাতকারী মিলগুলোয় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকারসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি কিংবা মজুদ বেশি রাখায় জরিমানাও করা হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে এলে বাজারে এর প্রভাব কমে আসে। রোজা শুরুর পর থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদার সঙ্গে জোগানের অসামঞ্জস্য, উৎসমুখ থেকে বাড়তি দামে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তাদের দাবি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। মোকাম থেকে বাড়তি মূল্যে কেনার কারণে চাইলেও সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পণ্যের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আমদানি, উৎপাদন খরচ কিংবা চাহিদা অনুপাতে জোগানের ওপর দাম নির্ভর করে। সব কিছু বাড়তি মূল্যের এ সময়ে সরকারিভাবে যে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে সেখানে অপ্রকাশিত খরচগুলো যুক্ত করা হয় না। ফলে বিভিন্ন সময়ে দাম নির্ধারণ সত্ত্বেও বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। 
  
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলে। এটা ঠিক, কিছু কিছু ব্যবসায়ী খুচরা পর্যায়ে বাড়তি মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে। কিন্তু একটা দেশে সার্বিকভাবে যদি পণ্যের  দাম বেড়ে যায় তবে বুঝতে হবে উৎপাদন, আমদানি কিংবা সরবরাহ চ্যানেলে কোনো সংকট রয়েছে। প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও অনেকগুলো পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি, ডলার ও এলসি সংকটে আমদানি প্রক্রিয়ায় সংকটের কারণে বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতাকে নিম্নমুখী করা সম্ভব হচ্ছে না।’ সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বাজারে নির্ধারিত দামে পণ্য পাওয়া যায় না বলে মনে করেন সাবেক খাদ্য সচিব এবং তিনি বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করে দেয়া অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এসব বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। ফলে এসব উদ্যোগ ভালো হলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। আগে তদারকি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য  মন্ত্রণালয় এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে বড় বড় উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হবে না।’

সরকারের ১১টি সংস্থা মূলত পণ্যের বাজার মনিটরিং করে। সেগুলো হলো - ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), সিটি করপোরেশন, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে কিংবা রোজার সময় সংস্থাগুলো যে যার মতো উদ্যোগ নেয়। তবে বিচ্ছিন্ন এ কাজে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ে না। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার বাস্তবায়নও কিন্তু তাদের ওপরই বর্তায়। এখন এ মূল্য বাস্তবায়নে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তা চাইছে কিনা সেটা দেখার বিষয়।’ বাজার তদারকি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুবই নগণ্য একটি অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের অনেক ব্যাপকতা রয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচুর কার্যক্রম রয়েছে। এর বাইরে ভোক্তার বহু অভিযোগ থাকে,  তার বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করি। এছাড়া বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য, নকল পণ্য এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। সঙ্গে নিয়মিত বাজার তদারকিও চলছে।

অতীতের মতো এবারও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম বেড়ে যাচ্ছে সব ভোগ্যপণ্যের। এতে সরকারের নানামুখী সুবিধার ফায়দা নিচ্ছে তারা। ফলে সরকারের বহুমুখী সুবিধার সুফল পাচ্ছে না সাধারাণ মানুষ। সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ জনগণ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাজারে গেলেই শোনা যায় সরকারের প্রতি তির্যকপূর্ণ মতামত। সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি – এমনটি অুনমান করা হয়। দেশের মানুষকে ভালো রাখতে হলে, নিরাপদ করতে চাইলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব জরুরি।  বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, নিশ্চিতভাবেই ভয়াবহ সংকটে পড়বে মানুষ। সার্বিক বিশ্লষণে এক  কথায় বলা যায়, বর্তমান ত্রাহি পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এর প্রভাব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক– উভয় দিক থেকেই  সমানভাবে সামনে আসার শঙ্কা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষপে চাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে যে পণ্যরে দাম একবার বৃদ্ধি পায়, সে পণ্যের দাম আর কমেনা বললেই চলে। পক্ষান্তরে মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না; কিন্তু ব্যায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। এক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিয়মিত খাদ্য গ্রহণে কিছুটা  কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এদিকে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক কোটি চল্লিশ লাখের বেশি। এ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন  শারীরিক ও মানসিক সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন রয়েছে, যা সবার পক্ষে  সংকুলান করা সম্ভব নয়। অনিয়ন্ত্রিত মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে দেশের গুটিকয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিজেদেরে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সুতরাং বাজার প্রতিযোগীতায় এসব প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণে কারসাজির মাধ্যমে অধিকহারে মুনাফা র্অজন করছে। এ  কারণে বাজারে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল নয়। এক্ষেত্রে সরবরাহ সামান্য কমলইে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। আবার কখনো ভোজ্যতলে, চিনি, পেয়াজ, আদা, ডিম ও কাঁচামরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে  ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা যেন তাদের স্থায়ী সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে  সরকারের কিছু  ভুল নীতির কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফা করছে।  
বিশেষত এসব কালোবাজারি অতিমুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই বাংলাদেশে। তাছাড়া সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সভা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। পাশাপাশি মন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও ইতিবাচক ফল আসছে না। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে পণ্যদ্রব্যাদির দাম কমলেও দেশে কমার প্রবণতা তুলনামূলক অনেক কম। 

উল্লেখ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, মজুত ও সরবরাহের নানা তথ্য নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দেশের প্রথম ওয়েবসাইট। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদন, মজুত ও বিপণন তথ্যনির্ভর ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাজার ব্যবস্থা সহজেই তদারকি করা  সম্ভব হবে। বিশষ করে পণ্যের উৎপাদন, মজুত, আমদানি ও বিপণনের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডারে সংরক্ষিত থাকবে। সেটার ড্যাশর্বোড থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যা দ্বারা সরাসরি দেশের যে কোনো প্রান্তের দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এভাবে দেশে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা তৈরি করা না গেলে জিনিসপত্রের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। তাই বাজার ব্যবস্থাপনা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে স্মার্ট সমাধান দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। এক্ষত্রে ক্রেতা যদি বাজারের কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বলে মনে করেন, সে ক্ষেত্রে বাজার নজরদারির জন্য ভোক্তাবান্ধব হটলাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সেই দোকানের নাম, ঠিকানা জেনে সেখানে অভিযান চালিয়ে পণ্যের দাম যাচাই-বাছাই করবে। যদি সত্যতা মেলে সেক্ষেত্রে সেই দোকানদার বাব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)