USA Trade Union in Economic Zone EPZ 220424

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) পরিপূর্ণভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেয়ার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে দ্রুত শ্রম আইন সংশোধন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিক ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট ১১ দফা সংযুক্ত করে একটি কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করে দিয়েছে দেশটি।

রোববার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত ইন্টারসেশনাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর) এসব সুপারিশ তুলে ধরে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব নুসরাত জাবিন বানু, যুগ্ম সচিব ড. ফারহানা আইরিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‌বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে তৈরি বাংলাদেশী পোশাকের জন্য এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পোশাকের বাইরে অন্যান্য সম্ভাবনাময় পণ্য যেমন ওষুধ, সিরামিকসহ বেশকিছু পণ্য রফতানির সুযোগ এবং ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।’ একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারি খাতের জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প উন্নয়নে গঠিত ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের এসব চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির আরো উন্নয়নসহ সংশোধিত পেটেন্ট ও কপিরাইট আইন বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে শ্রম আইন সংশোধন করছে সেখানে বিদ্যমান নিয়মের চেয়ে আরো কম সংখ্যক শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে এসব আইন বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় প্রণয়ন করে তাদের সঙ্গে শেয়ার করার কথা বলেছে।

বাংলাদেশের শ্রমিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১১ দফার অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়, ‌ইপিজেডে শ্রমিকদের পুরোপুরি ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রম আইন সংশোধন করে শ্রমিকদের এ সুবিধা দিতে হবে অথবা ইপিজেড আইনে ব্যাপক সংস্কার এনে এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একইভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রমিকদের পুরোপুরি ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে এসব আইন সংশোধন করে শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হতে পারেন এবং যৌথভাবে দরকষাকষি করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠক, শ্রমিক, শ্রম অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ এবং হয়রানি করা যাবে না। এরই মধ্যে শ্রম অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। শিল্প-কারখানার মালিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেসব মালিক অ্যান্টি ইউনিয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে থাকবে তাদের জরিমানা ও শাস্তি বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে দ্রুত শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। বর্তমানে কোনো কারখানা ২০ শতাংশ শ্রমিক চাইলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। শ্রমিক ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ বাদ দিতে হবে। সংশোধিত শ্রম আইনে একটি ধারা যুক্ত করতে হবে। এ ধারায় শ্রমিকদের জানতে দিতে হবে যে কারখানায় কতজন শ্রমিক আছেন এবং এর কত শতাংশ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ইচ্ছুক। এ ব্যবস্থা না থাকলে মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। লেবার ইন্সপেক্টরদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পেটেন্ট ও কপিরাইট আইনের যথাযথ সংশোধন ও বাস্তবায়নের বিষয়েও তাগিদ দেয়া হয়।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘‌খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে কম জমিতে আরো বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য টেকনোলজি ট্রান্সফারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে তথ্য সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। আর এ নিয়ে খোলামেলা আপত্তি তোলা হয়েছে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। এদিকে বাংলাদেশে নকল পণ্য তৈরি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসটিআরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে নকল পোশাক রফতানি করে বৈশ্বিক পোশাক শিল্পের বাজারে বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রেখেছে। আর এসব তথ্য মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো ইউএসটিআরের কাছে তুলে ধরেছে। 
 
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)