নওগাঁয় এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্স
জেলা প্রতিনিধি: জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কার্যক্রম ২০২৪ উপলক্ষে নওগাঁয় এক বিশেষ প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হলরুমে এ প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এই উদ্যোগে সহায়তা করছে।
সিভিল সার্জন ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কনফারেন্সে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) বিরুদ্ধে টিকা কার্যক্রমের গুরুত্ব এবং এর প্রয়োজনীয় দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রধান আলোচক হিসেবে সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, "জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা অত্যন্ত কার্যকর। মাত্র এক ডোজ টিকাই কিশোরী মেয়েদের সারাজীবনের জন্য সুরক্ষা দিতে সক্ষম।"
তিনি আরও বলেন, “এইচপিভি ভাইরাস যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বিশেষ করে এর ১৩ ও ১৮ নম্বর সেলোটাইপ নারীদের জরায়ুমুখে ক্যানসার সৃষ্টি করে। পুরুষরাই এ ভাইরাসের প্রধান বাহক হলেও, এর ফলে নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন, যা বাংলাদেশে নারীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যানসার।”
ডা. নজরুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, “এই ভাইরাসের কারণে ক্যানসার হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়লে, এটি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। তাই, একটি মাত্র টিকা কিশোরী বয়সেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জীবনব্যাপী সুরক্ষা দিতে পারে।”
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলার ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কর্মসূচি এক মাস ব্যাপী মোট ১৮ কার্যদিবস যাবত চলবে এবং এর মধ্যে প্রথম দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কার্যক্রম চলবে, বাকি সময়ে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের গ্রুপভিত্তিক টিকা প্রদান করা হবে।
এইচপিভি টিকা গ্রহণের জন্য কিশোরীরা একটি নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে, যেখানে তাদের ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করতে হবে। কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিশোরীকে বিনামূল্যে টিকার আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রেস কনফারেন্সে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মুনির আলী আকন্দ, মেডিক্যাল অফিসার ডা. আশীষ কুমার সরকার, এবং ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. জয়িতা সাহা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ নারী মারা যান। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি।
ডা. নজরুল ইসলাম আরও জানান, যদি এই টিকাদান কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে প্রায় ৭ লাখ নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ নারী মৃত্যুবরণ করবেন। এই ঝুঁকি কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী এইচপিভি টিকা এবং স্ক্রিনিং কার্যক্রম নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যু হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিনিয়োগবার্তা/মো: এ কে নোমান/ডিএফই//