Mango Flower in Rangpur

আমের মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুরের চাষীরা

জেলা প্রতিনিধি: গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে চাষীদের মনও চাঙা হয়ে উঠছে। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা থাকলেও এখন প্রকৃতি বেশ অনুকূলে। ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুরের চাষীরা। গত কয়েক বছরে আম চাষে বদলে গেছে রংপুরের চাষীদের জীবনমান।

চাষীরা জানান, এ জেলায় শীত এখনও রয়েছে, তবে তেমন কুয়াশা নেই। যদি কুয়াশা হয় তাহলে আমের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এজন্য বাড়তি যত্ন শুরু করেছেন তারা। স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া, পানি ছিটানোসহ মুকুল আটকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের যত্ন নিচ্ছেন। এ বছর শুরুতে শীত না থাকলেও শেষ সময়ে এসে শীতের প্রকোপ বাড়ে।

তারা বলেন, শীত বেশি থাকলে আমের মুকুল আসা ও গুটি আমের ক্ষতি হতে পারে। এ মুকুল টিকে থাকলে আমের ফলন ভালো হবে। আবার আগাম আমের দামও পাওয়া যাবে। গত বছর রংপুর মহানগরীসহ জেলায় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার আশানুরূপ ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

সরেজমিনে রংপুর সদরের পালিচড়া, শ্যামপুর, লাহেড়ীরহাট, মিঠাপুকুরের গোপালপুর, পদাগঞ্জ, পাইকারেরহাট, রুপসি, মৌলভীবাজার, সর্দারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে ফুটেছে মুকুল, যা ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে চাষীদের মনও চাঙা। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা থাকলেও এখন প্রকৃতিও বেশ অনুকূলে। এবার ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় চাষীরা স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া, পানি ছিটানোসহ মুকুল আটকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সময়ের আগেই কিছু গাছে মুকুল আসছে। হাড়িভাঙ্গাসহ অন্যান্য আমের মুকুল এবার আগাম হয়েছে। তাতে তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৪ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন আম। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবার এ অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন আমের। তবে হাড়িভাঙ্গার উৎপত্তিস্থল রংপুরে গত বছর ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে হাড়ি ভাঙ্গার চাষ হয়েছিল। এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

চাষীরা বলছেন, হাড়িভাঙ্গা আমের একটি রীতি আছে। এক বছর বেশি ফলন হয় তো পরের বছর কম হয় এটাই স্বাভাবিক। দাম কম পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের কাছে আমের বাগান আগাম বিক্রি করতে হয় বলে জানান তারা। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও হিমাগারের ব্যবস্থা হলে তারা আম বিক্রি করে লাভবান হবেন।

মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, পদাগঞ্জ, রানীপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষী অভিযোগ করেন, আমচাষীদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মতো মনোভাব কৃষি বিভাগের নেই এবং সব ধরনের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত তারা। সরকারি প্রণোদনাগুলোর সঠিক বণ্টন হলে আমচাষীরা আরও উপকৃত হতো ও নতুন নতুন চাষী বাড়তো।

মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকার এক চাষী বলেন, আমের মুকুল এবার ভালোই আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।

একই উপজেলার এলাহিমোড় চকবাজার এলাকার আরেকজন বলেন, পদাগঞ্জ অঞ্চল হাঁড়িভাঙ্গাসহ আমের জন্য বিখ্যাত। সঠিক দাম পেলে চাষীরা আরও লাভবান হবেন। তবে লোকসান নেই।

রাণীপুকুর এলাকার আরেকজন বলেন, এবার আমের ভালো মুকুল এসেছে। গত বছরের চেয়ে বেশি। সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে। আশা করছি আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে লাভবান হবেন।

সদরের আম ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, আগাম বাগান নিয়ে রেখেছি ভালো লাভের আশায়। লাভের আশা থাকলেও ফলন নিয়ে সন্দিহান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, রংপুর অঞ্চলের জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আমসহ অন্যান্য আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এজন্য দেশে-বিদেশে এ আমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর যে আবহাওয়া পরিষ্কার, বৃষ্টি-কুয়াশা নেই, ঝড় বাতাস নেই, সেই হিসেবে কৃষি বিভাগ আশা রাখছে চাষীরা যদি ভালো করে পরিচর্যা করে তাহলে মুকুল পরবর্তী যে ফল সেটি আশানুরূপ ফলন হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)