মিহির

শারদীয় দুর্গাপূজা

লৌকিকতা, সার্বজনীনতা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি

ড: মিহির কুমার রায়: সূচনা: পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গাপূজা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি হিন্দু ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। ভারতে সপ্তাহব্যাপী আনন্দ উৎসবে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সব বয়সের  মানুষ একাত্মতায় মিলিত হয়। পূজামন্ডপ ঘিরে শুরু হয় নানা যজ্ঞ। নানা বর্ণে নানা আয়োজনে উৎসবে ভরে থাকে সমস্ত এলাকা। কাসরঘণ্টা আর ঢাকের তালে আন্দোলিত হয়ে ওঠে পূজার সকল আয়োজন। দুর্গাপূজা কবে, কখন,  কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে। মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে ভারতে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। দেবতাদের প্রাধান্য ছিল আর্য সভ্যতায়। অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের। দেবীগণ পূজিত হতেন শক্তির প্রতীক রূপে।

ইতিহাস ও দর্শন:
ভারতীয় উপমহাদেশে মাতৃরূপে দেবীর বন্দনা অতি প্রাচীন। প্রাচীন ইতিহাসবিদদের মতে,  প্রায় ২২,০০০ বছর পূর্বে ভারতে দেবীপূজা প্রচলিত ছিল। মাতৃপ্রধান পরিবারের মা-ই প্রধান শক্তি,  আর মাকে সামনে রেখে দেবী বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। মহাভারত অনুসারে,  দুর্গা বিবেচিত হন কালী শক্তির আরেক রূপে। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী তাই দেবী মাতা হিসেবেও তার পূজা হয়ে থাকে। কৃত্তিবাসী রামায়ণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দুর্গাপূজা করার কথা উল্লেখ আছে। শক্তিশালী রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিজয়ে শরৎকালে শ্রী রামচন্দ্র কালিদহ সাগর থেকে ১০১টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে দুর্গাপূজার মাধ্যমে দুর্গার কৃপা লাভ করেন বলে বর্ণিত হয়েছে। সনাতন ধর্মের আর্য ঋষিরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য আরাধনা করতেন। আজো বাংলায় শ্রী শ্রী চী নামে সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট  দেবী মাহাত্ম্য পাঠ দুর্গাপূজার প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। দুর্গাপূজার প্রচলন নিয়ে বেশ কয়েকটি মতবাদ পাওয়া যায়। মার্কন্ডেয় পুরাণ মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথ খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে  (বর্তমানে উড়িষ্যা) দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন। ভিন্ন মতে,  ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দুর্গাপূজা করেন। আবার কারো মতে,  ষোড়শ শতকে রাজশাহীর তাহেরপুর এলাকার রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। অনেকে মনে করেন,  ১৬০৬ সালে নদীয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দুর্গাপূজার প্রবর্তক। উড়িষ্যার রামেশ্বরপুরে একইস্থানে ৪০০ শত বছর থেকে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। জমিদার বাড়ি থেকেই এই পূজার প্রচলন হয়েছিল। ১৭১১ সালে অহম রাজ্যের রাজধানী রংপুরে শারদীয় পূজার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের দূত রামেশ্বর নয়ালঙ্কার। বর্তমানে দুর্গাপূজা দুই ভাবে হয়ে থাকে,   ব্যক্তিভাবে পারিবারিক স্তরে ও সমষ্ঠিগতভাবে পাড়া স্তরে। ব্যক্তিগত পূজাগুলি নিয়মনিষ্ঠা ও শাস্ত্রীয় বিধান পালনে বেশি আগ্রহী হয়;  এগুলির আয়োজন মূলত বিত্তশালী বাঙালি পরিবারগুলিতেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে যৌথ উদ্যোগেও দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। এগুলো বারোয়ারি বা সার্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ১৭৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়াতে বারজন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে প্রথম সার্বজনীনভাবে দুর্গাউৎসব পালন করেন,  যা বারো ইয়ার বাবার বন্ধুর পূজা নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। কাসীম বাজারের রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে বারো ইয়ারের এই পূজা কলকাতায় পরিচিত করান। সম্ভবত সেই থেকে বারোয়ারি পূজা শুরু। ১৯১০ সালে সনাতন ধর্ম উৎসাহিনী সভা ভবানীপুরে বলরাম বসু ঘাট লেনে এবং একই জেলায় অন্যরা রামধন মিত্র লেন,  সিকদার বাগানে একই বছরে ঘটা করে প্রথম বারোয়ারি পূজার আয়োজন করে। ব্রিটিশ বাংলায় এই পূজা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দুর্গাপূজা বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসাবে জনপ্রিয়তা পায়।

মহাভারতে দুর্গা:
মহাভারতে পাওয়া যায়, কুরক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে শ্রী কৃষ্ণের আদেশে অর্জুন দুর্গাদেবীর স্তব করেছিলেন শ্রী শ্রী চী গ্রন্থে বলা হয়েছে। শতবর্ষব্যাপী দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল, যুদ্ধে দেবতারা পরাজিত স্বর্গ থেকে বিতাড়িত। দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিকার চাইলেন অসুরদের হাতে দেবতাদের নির্যাতনের কাহিনী শুনে প্রচন্ড ক্রোধ জন্মে। ক্রোধ থেকে তেজ আর তেজরাশি মিলিত হয়ে এক নারী মূর্তির আবির্ভাব ঘটল। সেই নারীমূর্তিই হলো দুর্গা। অত্যাচারী ভোগালিপ্সু মহিষাসুরের সঙ্গে দেবীর ভীষণ যুদ্ধ ও দেবশক্তির বিজয় অসুরদের বিনাশ অসুর শক্তির বিনাশে দেবগণ উল্লাসিত এবং দেবীর স্তুতি নিবেদন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। ‘হে দেবী আমার প্রতি প্রসন্ন হোন, অসুরদের বিনাশ করে আমাদের যেরূপ রক্ষা করলেন ভবিষ্যতের শত্রু জয় থেকে রক্ষা করবেন।’ সত্য যুগে দেখা যায় রাজা সুরথ সমাধী বৈশ্য সে যুগে সর্ব প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। ত্রেতা যুগে রাবণকে সংহার এবং সীতা উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। এ পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। দ্বাপর যুগে অর্জুনসহ পান্ডবদের দেবী দুর্গার স্তব প্রমাণ করে প্রাচীন কাল থেকে দুর্গাপূজা বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় পূজা।

মা দুর্গা বাঙালি হিন্দুর ভাবমূর্তিতে শিবের জায়া, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীর জননী। তিনি তার পতি গৃহ কৈলাশে থাকেন। বছরের তিন ঋতুতে তিনি তিন রূপে আবির্ভূত হন। শরৎকালে শারদীয়, হেমন্তকালে ক্যাতায়ন পূজা ও বসন্তকালে বাসন্তী পূজা এ তিন ঋতুতে ভক্তরা এই তিন পূজা নামে করে থাকে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় শারদীয় পূজা। রামচন্দ্র সীতাকে রাবণ পুরী থেকে উদ্ধারের জন্য ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবীর যে পূজা করেছিল সেই শারদীয় পূজা প্রতিবছর মা দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে পাঁচ দিনের জন্য কৈলাশ থেকে মর্তে আসেন এবং পূজা শেষে চলে যান। জীব জগতের সুখ শান্তি,  অসুরদের বিনাশ এবং শরণাগতদের রক্ষার জন্য দেবীর দশ হাত ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ণবাণ, শক্তি,  ঢালধনু, পাশ,  অংকুশ ও কুঠার এই দশ অস্ত্রে সজ্জিত থাকে। পৃথিবীতে যাওয়া-আসার পথে দেবী যে বাহন ব্যবহার করেন তার ওপরই জগতের শুভাশুভ নির্ভর করে। 

মহাভারত অনুসারে দুর্গা বিবেচিত হন কালীশক্তির আরেক রূপে। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী তাই দেবী  মাতা হিসেবেও তার পূজা হয়ে থাকে। কৃত্তিবাসী রামায়ণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের  দুর্গাপূজা করার কথা উল্লেখ আছে। সনাতন ধর্মের আর্য ঋষিরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য আরাধনা করতেন। আজো বাংলায় শ্রী শ্রী চৈতণ্যের- নামে সাত শত শ্লোকবিশিষ্ট দেবী মাহাত্ম্য পাঠ দুর্গাপূজার প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। 

দুর্গাপূজার প্রচলন নিয়ে বেশ কয়েকটি মতবাদ পাওয়া যায়। মার্কন্ডেয় পুরাণমতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথ খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উড়িষ্যা) দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন।  ইতিহাস বলছে দুর্গাপুজার প্রচলন এ দেশে শুরু হয়েছিল পনের শতকের  শেষের দিকে এবং এ নিয়ে অনেক কল্পকথা রয়েছে। দেশের উত্তরঞ্চলীয়  জেলা রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার তাহিরপুরের জমিদার রাজা হরি নারায়ণের তনয় কংস নারায়ন দুর্গা  পুজার আযোজন করেছিলেন যা সেই সময়কার মূল্যে খরচ হয়েছিল নয় লাখ রুপি যা ছিল অত্যন্ত যাকজমকপূর্ণ। আরও কল্পকথা আছে যে দিনাজপুরে এবং মালদহের জমিদারগন বঙ্গ দেশে প্রথম আচলা দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন। আবার তৃতীয় আরও একটি মতবাদ রয়েছে যে ১৭৫৭  সালে ইংরেজ শাসক লর্ড ক্লাইভ এর সম্মানে কলকাতার জমিদাররা জানব কৃষ্ণদের জাগজমকপূর্ণভাবে এই  পূজার আয়োজন করেছিলেন যা বাংলাদেশে শরৎকালে শারদীয় এবং বসন্তকালে বাসন্তী নামে  দুর্গাদেরকে পালন করা হয়।

লৌকিকতা:
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম প্রধান উৎসবের মর্যাদা লাভ করে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিতহয়। এই পাঁচ দিন দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী,  মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আর সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে খ্যাত। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়;  দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি হয় পঞ্চদশ দিনে অর্থাৎ পূর্ণিমায়। অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ দিন দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী,  মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আর সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে খ্যাত। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়;  দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি হয় পঞ্চদশ দিনে অর্থাৎ পূর্ণিমায়। এই পঞ্চদশ দিনটিতে বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সার্বজনীন এই দুর্গাপূজা মূলত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান হলেও বাস্তবে মহালয়া থেকে উৎসবের সূচনা এবং লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি। কুমারীপূজা  দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শাস্ত্রমতে ১ বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প অবিবাহিত সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যাকে পূজা করা হয়। নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড়ে দেবীর মতো সাজিয়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে  পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত হয়। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্ম প্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে এই কুমারী পূজার প্রচলন করেন। হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ, সতীদাহ,  চিরবিধবাসহ নানা অবিচারে তখন নারীরা ছিল নিপীড়িত। নারীকে দেবীর আসনে সম্মানীত করার জন্যেই হয়ত স্বামী বিবেকানন্দ এই পূজার প্রচলন করেন। প্রতি বছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আধ্যাত্মিক ও জাগতিক কল্যাণ সাধন এই কুমারীপূজার মূল লক্ষ্য। সন্ধিপূজা,  দুর্গাপূজার আরও একটি বিশেষ অংশ। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিট সময়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে এই পূজা হয় বলেই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা। এই সময় দেবী দুর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয় এবং তান্ত্রিকমতে এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়। জাতীয়ভাবে এই উৎসবকে দুর্গাপূজা হিসাবে অভিহিত করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় এই উৎসবকে শরৎকালের বার্ষিক মহা উৎসব হিসাবে শারদীয় উৎসব বলা হয়ে থাকে। রামায়ণ অনুসারে,  অকালে বা অসময়ে দেবীর আগমন হয় বলে শরৎকালের দুর্গাপূজাকে অকালবোধন এবং বসন্তকালের দুর্গাপূজাকে বাসন্তীপূজা বলা হয়। অতীতে বাঙালি হিন্দুদের বাইরে এ পূজার খুব জনপ্রিয়তা ছিল না। ধীরে ধীরে এই পূজার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্গাপূজা ভারতে অসম, বিহার, ঝাড়খন্ড,  উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়।

সাংস্কৃতিক উৎসব:
বাংলাদেশে শরৎকালে শারদীয় এবং বসন্তকালে বাসন্তী নামে দুর্গাদেরকে পালন করা হয়। আর সমগ্র  আয়োজনের পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে খ্যাত। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়;  দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। এই পুজা দশ দিনের পর্ব যা শুরু হয় শুভ মহালয়া দিয়ে যা এই  বছর পড়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪ই আশ্বিন ১৪৩১, রবিবার আমবস্যা রাত ১২/৫৩/১৪ সে: পর্যন্ত    সেখানে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের মৃত পুর্ব পুরুষদের জল ও খাদ্য দিয়ে তর্পন করে এবং এই দিনে দুর্গাদেবী  তারা স্বামীর বাড়ী কৈলাস থেকে মর্তে রওয়ানা হন। এ বৎসর দেবীর আগমন হাতিতে চড়ে এবং গমন   নৌকায়। মহালয়ার দনি অতি প্রত্যুষে চন্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে। আশ্বনি শুক্লা প্রতপিদ তিথিতে  দৌহত্রি মাতামহরে র্তপণ করনে। শ্রাদ্ধর্কতাকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে শ্রাদ্ধ করতে হয়। মহালয়ার দিন ভোর বা রাতেইঘুমইভাঙেবতোরবাটলেভিশিনর্বাতায় (মহালয়ার গান-‘বাজল তোমার আলোরবণেু’) শুনে বা মর্ত্যে দেবী আগমনের নাট্যরূপ দেখে। অবসান হয় পৃত্রীপক্ষের, সূচনা হয় দেবীপক্ষের। বছর ঘুরে আনন্দময়ীর এই আগমন সান্নিধ্যে বাঙালি তার দুঃখযন্ত্রণা ভুলে কিছুটা আনন্দ পেতে চায়। দুর্গাপুজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো মহাযষ্ঠী ১১ আশ্বিন, ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রবিবার দুপুর ০২/৫৪ পর্যন্ত যে দিন ভক্ত পূজারীবৃন্দ দেবীকে সম্বর্ধনা জানায় যার মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভ উদ্বোধন হয়। তারপর পর্য্যায়ক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী (০২ই অক্টোবর) যার মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হয় তার স্বামীসহ সকলকে নিয়ে শুশুরালয়ে কৌলাসে গমন। দেবীপক্ষের সমাপ্তি হয়  পঞ্চদশ দিনে অর্থাৎ পূর্ণিমায়। এই পঞ্চদশ দিনটিতে বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সার্বজনীন এই  দুর্গাপূজা মূলত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান হলেও বাস্তবে মহালয়া থেকে উৎসবের সূচনা এবং লক্ষীপূজায় তার সমাপ্তি।

দুর্গাপুজায় দুর্গার সাথে বাহনে থাকেন তার সন্তানগন যেমন লক্ষী (ধন সম্পদের প্রতিক), স্বরস্বতী  (জ্ঞানের প্রতিক), গনেশ (শুভসুচনার প্রতীক) এবং কার্তিক (যুন্ধবিদ্যার প্রতিক)। এটা ধরেই নেয়া হয় দুর্গাদেবী তার সন্তানদের নিয়ে কৈলাসে থেকে মর্ত্যে আসেন আবার দশদিনে শেষে নিজের ঘরে ফিরে যান। 
দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে রোধন, অধিবাস, নব পঞ্জিকা স্মান, স্বামীপূজা ও অষ্টমীপূজা, ওমা ও ভোগ কু’মারীপূজা, সিন্ধর খেলা ও ইমারশান (দশম দিনে বিজয় দশমীতে মহিলাদের দুর্গার কপালে সিঁদুর পড়ানো নিজেদের মধ্যে সিদুর পড়ানো ও বিদায়), ও ধোনটিনাচ ইত্যাদি প্রানীর নামে বিসর্জন সাধারনত: নেপাল,  পশ্চিমবাংলা, আসাম ও ওরিষ্যার মন্দিরে দেয়া হয় যার মধ্যে আছে মহিষ, ছাগল, পাঠা ইত্যাদি। দেবী  দুর্গা বিভিন্ন রূপে এ মর্তের পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন এবং আমাদের সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করেন বিধায় তিনি সর্বমঙ্গলা। মায়রে দুই রূপ একটি ভয়ংকরী অপরটি ক্ষমেংকরী। দুষ্টর জন্য অতিভয়ংকরী আবার শষ্টিরে জন্য অতি ক্ষমেংকরী। আবার শিবের শক্তি বলেও তিনি শিবা। কারণ তিনি সব প্রার্থনা এবং আরাধনা মঞ্জুর করেন এবং অসাধ্যকে সাধন করেন। তাই তিনি শরণ্য, তিনি গৌরী। দুর্গা দশভূজ নামেও পূজিত এবং আরোধিত হয়ে থাকেন। এখানে নিয়ম আছে নদীর পাড়্র এবং পতিতালয়ের  দরজা থেকে মাটি সংগ্রহ করে প্রতিমা তৈরি করা যার সাথে খড় পাটসহ আরও উপকরন মিশিয়ে কাঠামোটিকে শক্তিশালী করা হয়। এই প্রতিমা তৈরির কাজটি একটি গ্রুপ যাদেরকে বলা হয়  থাকে কুমার তারাই বিশেষভাবে পারদর্শী যদিও বর্তমানে সময়ে আর্ট কলেজ/ইনিষ্টিটিউট থেকে  পাস করা অনেক আর্টিষ্ট মৃতশিল্প কাজে প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছেন যেখানে ধর্ম্ম কোন বিষয় নয়। শ্রী দুর্গা বারমাসে বার রুপে আমাদের মাঝে আর্বিভুত হয় এবং বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওরিষ্যা,  আসাম ও ত্রিপুরাতে এই পুজার প্রচলন রয়েছে এবং এর বাহিরেও হিন্দি ভাষাভাষি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এ পুজার অনুষ্টান হয় ভিন্ন আচার রিতি রীতি নিয়মামাচারে। যেমন- পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়  দুর্গাপুজাকে বলা হয় আখাল বোধন। যার অর্থ অসময়ের দেবীর পুজা শারদীয় পুজা যা শরৎকালের প্রতিক, শারদ্যোৎসব, মহাপূজা, মায়েরপূজা ও পূজা। কিন্তু বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে দুর্গাপুজাকে আবারও বলা হয় শক্ত হিন্দু উৎসব যেমন- ভরত্রী যা একিদিনে পালিত হয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেমন গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, কেরালা এবং মহারাষ্ট্রে। আবার কুল্লু দেশিরা পালিত হয় কুল্লু উপত্যকায়,  হিমাচল প্রদেশে, মাইশোর, কর্নাটক এবং বোম্বাই এ গোলে নামে পালিত হয়, তামিলনাডুতে বম্মালাকুলুড নামে পালিত হয়, অন্দ্রপ্রদেশে ও তেলেনঙ্গানা বাথুকামা নামে পালিত হয়। 

সাবর্জনীনতা:
এই দুর্গাপূজায় প্রথমে রাজাদের অনুদান শুরু হয়েছিল যেমন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যোর রাজধানী আগতলা  দুর্গাবাড়ী মন্দিরে রাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর কর্তৃক প্রথম দুর্গাপুজা শুরু হয়েছিল।  দুর্গাপূজা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও জটিল নিয়মসিন্ধ (পড়সঢ়ষরপধঃবফ ৎরঃঁধষং) একটি ধর্ম্মীয় কার্য্যক্রম যা  কেবল সম্পদশালী ধনী ব্যক্তিদের দ্বারাই আয়োজন সম্ভব ছিল। কিন্তু পরবর্তিতে ১৯ শতকের শেষ  ভাগে কলকাতা ও পূর্ব বঙ্গের মধ্যশ্রেনীর সনাতন ধর্ম্মালম্বীগন এই  প্রথার একটি রুপান্তর আনয়ন করেছিলেন যাকে বলা হয়  কমিউনিটিভিত্তিক সার্বজনীন পুজা এবং অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পুজা কমিটির দলে ভাগ হযে ভঁহফ পড়ষষবপঃরড়হ করে পুজার বিশাল ব্যয়ভার বহর করার জন্য বিশেষত: প্যান্ডেল তৈরি, আলোক সজ্জা,  প্রতীমা তৈরি, পূজাআচনা, প্রতীমা সাজসজ্জা, ভক্ত সহ অতিথী আপ্যায়ন, ডাকডোল বায়না, ধর্য় পালাগান আয়োজন ইত্যাদি। দুর্গাপুজা একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও সময়ের আবর্তে বর্তমানে তা সামাজিক ও সাংস্কতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে সত্যি কিন্তু এর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে। কারন দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকার শারদীয় দুর্গোৎসবে মোটা অংকের টাকা অনুদান হিসাবে ডোনেসন দিয়ে  থাকে আবার বারোয়ারী পুজামন্ডপগুলোর আয়োজকদের চাউল, চিনি, ডাল ইত্যাদি সরবরাহ করে থাকে।
সরকার প্রধান প্রতিবছর হিন্দু কল্যান ট্রাষ্টের মাধ্যমে অনেক অনুদান দিয়ে থাকে। 

শারদীয় উৎসবকে ঘিরে সাহিত্যেও বলয় সৃষ্ঠি হয়, নতুন লেখকের সৃষ্ঠি হয় এবং পূজা সংকলন নিয়মিত প্রকাশ হয় যা সাহিত্যের বাহক কিংবা সংস্কৃতির বাহক। ঢাকার বড় বড় পূজা উজ্জাপন  কমিটির পক্ষ থেকে পূজা সংকলন বাহির করা হয় যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রথম শ্রেনীর পত্রিকাগুলো  শারদীয় উৎসবকে ঘিরে বিশেষ ক্রোরপত্র প্রকাশ করে এবং সরকারী/বেসরকরী টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে।

দুর্গাপূজার অথর্র্নীতি:
শরতের আকাশে ভাসছে সাদা মেঘ। কাশফুলের আনাগোনায় শুভ্রতার বার্তা নিয়ে এসেছে প্রকৃতি। আগমনীসুর জানাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার বার্তা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পূজা সামনে রেখে পোশাক, শাড়ি, কসমেটিক্স,  এবং পূজার সামগ্রী যেমন মুকুট, লেস,  ও প্রতীকী অস্ত্র ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দোকান ও শপিং মলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। বিক্রেতারাও এই সময়ে ভালো বিক্রি আশা করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান পূজা উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। পোশাক ও শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শাড়ি কেনার জন্য নারীরা বেশি আগ্রহী। দেশি,  ইন্ডিয়ান ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বেশ জনপ্রিয়। পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের মতো জায়গাতে প্রতিমার সাজসজ্জার সরঞ্জাম, যেমন মুকুট, অলংকার, সিঁদুর, ফুলের মালা,  এবং প্রতীকী অস্ত্র কেনা হচ্ছে। এছাড়া কসমেটিক্সের দোকানেও ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।  বড় শপিংমলগুলোতেও পূজার পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেটে পূজার কেনাকাটা শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও বেড়েছে বিক্রি। সাপ্তাহিক  ছুটির দিন শনিবার বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তারা বলছেন, পূজার বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও ভিড় এড়াতে আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে ফেলছেন তারা। অন্যদিকে,  বিক্রেতারা বলছেন আগের চাইতে এ সপ্তাহে বিক্রিও বেশ বেড়েছে। কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, জিন্স প্যান্ট ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, ড্রপসোল্ডার টি-শার্ট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা,  শার্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, টি-শার্ট ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পূজার কেনাকাটা করতে আসা সুভাষ বলেন, পূজায় বাড়িতে যাব। কয়েকদিন আগেই যাব তাই কেনাকাটা করতে আসছি। এখন ভিড় কিছুটা কম, কেনাকাটা করতেও ভালো। এজন্যই আসা। কাপড় কিনতে আসা নিপু বিশ্বাস বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতিবছরই নিজের জন্য এবং পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এবারও তাই এসেছি। কেনাকাটা করতে আসা সুস্মিতা বলেন, ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ। পূজায় তাই এবার আগেই বাড়িতে যাব। এজন্য আগে কেনাকাটা সেরে ফেলছি। বিক্রেতারা বলছেন, পূজার বেশ কিছু দিন বাকি থাকলেও কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। ক্রেতা সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। পূজা সামনে রেখে ঢাকার গাউছিয়া, পুরান ঢাকার ওয়ারী, বসন্ধুরা শপিং কমপ্লেক্স এবং যমুনা ফিউচার পার্কেও বেচা-বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। উৎসবের এই আমেজকে উপলক্ষ করে নতুন কালেকশন এনেছে দেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড  ‘সারা’। প্রতিষ্ঠানটির এবারের প্রতিটি পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে আরাম আর আভিজাত্যের মেলবন্ধন। কিশোর-কিশোরী,  শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের জন্য থাকছে পার্টি, ফেস্টিভ লুকসহ আরামদায়ক দারুণ সব আউটফিট; যা ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন। পূজার নতুন সংগ্রহে মেয়েদের জন্য ‘সারা’  এনেছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ফ্যাশন টপস, আনারকলি থ্রি-পিস, কুর্তি, কো-অর্ডস, ডেনিম প্যান্ট, ওয়ান-পিস,  টু-পিস, স্কার্ফ, কাফতান ও টি-শার্ট। ছেলেদের জন্য থাকছে এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট,  ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ডেনিম প্যান্ট, চিনো প্যান্ট, কার্গো প্যান্ট,  কটি ও পায়জামা। মেয়ে শিশুদের জন্য থাকছে টি-শার্ট, পার্টি ফ্রক, কটন ফ্রক, থ্রি-পিস, ফ্যাশন টপস,  টু-পিস, লেহেঙ্গা। এছাড়া ছেলে শিশুদের জন্য থাকছে সিঙ্গেল শার্ট, ফ্যাশনেবল শার্ট-প্যান্ট সেট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, ডেনিম প্যান্ট, নিট প্যান্ট, টি-শার্ট, ইনফ্যান্ট সেট, নিউবর্ন সেট,  ইনফ্যান্ট পাঞ্জাবি সেট ও পোলো শার্ট। আউটলেটের পাশাপাশি সারার নিজস্ব ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজ এবং  ইনস্টাগ্রাম  থেকে ক্রেতারা ঢাকার ভেতরে অর্ডার করে হোম ডেলিভারি পেতে পারেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমেও পাবেন অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি।

উল্লেখ্য, স্নোটেক্স গ্রুপের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড সারা যাত্রা শুরু করেছে ২০১৮ সালের মে মাসে। ঢাকার মিরপুর-৬ এ অবস্থিত সারার প্রথম আউটলেট নিয়ে কাজ শুরুর পর বসুন্ধরা সিটির লেভেল ১, ব্লক এর ৪০ এবং ৫৪ নম্বর শপটি ছিল সারার দ্বিতীয় আউটলেট। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘সারা’  নতুন আয়োজন করেছে। তৃতীয় আউটলেটটি হলো বাড়ি - ১৯ বি/৪ সিওবি/৪ডি, ব্লক-এফ, রিং রোড,  মোহাম্মদপুর এ ঠিকানায়। উত্তরায় সারার পোশাক পাওয়া যাবে হাউস নম্বর-২২, সোনারগাঁ জনপদ,  সেক্টর-৯, উত্তরা,  ঢাকা ঠিকানায়। বারিধারা জে ব্লকে আছে সারার আরেকটি আউটলেট। বনশ্রী ই ব্লকের ১ নম্বর রোডের ৪৮ নম্বর বাড়িতে রয়েছে সারার ষষ্ঠ আউটলেট। ঢাকার বাইরে সারার প্রথম আউটলেট রংপুরে জাহাজ কোম্পানির মোড়েই। রাজধানী ঢাকার ওয়ারীতে  (বাড়ি ৩৬/১ নম্বর, র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট, ওয়ারী, ঢাকা-১২০৩)  রয়েছে সারার অষ্টম আউটলেট। সারার নবম আউটলেট রাজশাহীতে (বাড়ি- ৫৩ ও ৫৪,  ইউনাইটেড টাওয়ার, রানী বাজার, রাজশাহী - ৬০০০) ও রাজধানী ঢাকার বাসাবোতে (বাড়ি ৯৬/২,  পূর্ব বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা-১২১৪) রয়েছে সারার দশম আউটলেট। বগুড়ায় (হোল্ডিং নং ১১৩, ১০৯ সিটি সেন্টার, জলেশ্বরীতলা বগুড়া - ৫৮০০) রয়েছে সারার একাদশতম আউটলেট। সিলেটে  (হাউস - ৩১ এ, কুমারপাড়া, ওয়ার্ড ১৮, ভিআইপি রোড, সদর, সিলেট-৩১০০)  চালু হয়েছে সারার আরও একটি আউটলেট। ফেনীতে (ওহাব টাওয়ার, হোল্ডিং নং-৩১০, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, ওয়ার্ড নং ১৬, ফেনী শহর)  কার্যক্রম শুরু হয়েছে সারার আরও একটি আউটলেটের। সর্বশেষ বরিশাল শহরে (বিবির পুকুর পাড়,  ফকির কমপ্লেক্স, ১১২ সদর রোড, বরিশাল - ৮২০০)  ও সারার নারায়ণগঞ্জ আউটলেটটি টিএসএন প্লাজা ১৪৫/০৪, বঙ্গবন্ধু রোড,  নারায়ণগঞ্জ-১৪০০ ঠিকানায় পৃথক দুটি নতুন আউটলেট চালু হয়েছে। এছাড়া শিগগির খুলনা শহরের শিববাড়ী মোড়ে সারার আরও একটি নতুন আউটলেট চালু হতে যাচ্ছে।

এখন আসা যাক শারদীয় দুর্গাপূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্ন ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।  ফুল একটি পূজার উল্লেখযোগ্য উপকরণ, যা ভিন্ন রঙের ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এবার এই দুষ্প্রাপ্য ফুলের জোগান কে দেবে? কারণ দেশের স্থানীয় পর্যায়ে যে ফুল হয় তা দিয়ে হয়ত গ্রামের পূজারী কোনভাবে সামলাতে পারবে; কিন্তু ঢাকাসহ বিভাগীয়/জেলা শহরে পূজার ফুল সরবরাহ হতো যশোরের গদখালী থেকে, শারদীয় উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে প্রসারতা এই খাতটিকে প্রসারিত করে থাকে। যেমন- ফুলফল, ঢাক, বাদ্য-বাজনা, কাপড় বিতরণ, অলঙ্করণ, মুদ্রণ শিল্প, ভোগ্যপণ্য, যেমন- চাল, ডাল, সবজি ক্রয়-বিক্রয়, কুমার, মৃতশিল্পী, ডেকোরেটর, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদি। আবার সামাজিক/সংস্কৃতির বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন- শিল্পীদের ভক্তিমূলক গান,  লক্ষ্মীবিলাস, নৌকাবিলাস, নিমাইসন্ন্যাস, যার সঙ্গে তাদের আয় উপার্জনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম জড়িত  থাকে। প্রতিবছরই এই দিনটির জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকে, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের এক ব্যাপক নিদর্শন বটে। পূজা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসে পূজামন্ডপকে ঘিরে। প্রতিমা সামগ্রীর দাম, মৃৎশিল্পীদের বায়না, পতিতালয়ের মাটির দাম (যা মূর্তি তৈরিতে ব্যবহার হয়) চরমে উঠেছে। ফলে পূজার ব্যয়ও বাড়বে, পূজারীদের আয়োজনও কমাতে হবে এবং সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটি ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে। তাই পূজার সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের সার্বিক  অর্থনীতির কাঠামোতে বিবেচনায় আনতে হবে এবং নিরূপণ করতে হবে। উল্লেখ্য, শরতের শুভ্র আকাশ,  কাশফুলের হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় গ্রাম-নগর, ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে এই শরতের মহামিলন উৎসবে।

পূজার মৌসুমে ইলিশ মাছ:
এবার অন্যাণ্য  সময়ের মত পূজার আযোজনে আরও একটি পণ্য যোগ হয়েছে যা হলো ইলিশ মাছ যা বিজয়া দশমীতে রিতি অনুসারে ব্যবহৃত হয় বিশেষত; বাঙ্গালী অধ্যোশিত বাংলাদেশ সহ পশ্চিম বঙ্গে। গত  বছর পূজার সময় ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছে ১  হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ  ভারতে এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২শ মেট্রিক টন ইলিশ। গতবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া  হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেনি। আসন্ন  দূগৃাপূজা উপলক্ষে ইলিশের কদর রয়েছে। আবার রাজনৈতিক অঙ্গনেও উপহার হিসাবে প্রতিবেশীদের বিশেষ করে ভারত ও  পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মধ্যে ইলিশের আদান প্রদান হয়। বাঙ্গালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে বিজয়া  দশমি পাচ দিন নিরামিশ ভোজের পর মাছের অন্নে ইলিশ মাছ না হলেই নয় যার একটি  ধর্ম্মীয় বিবেচনা রয়েছে।

শেষকথা:
অনেকেই দেশে আসে আত্মীয় স্বজনদের সাথে পূজা উজ্জাপন করতে এবং আশা করা যায় আগামীতে এক  অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ গড়তে শারদীয় দুর্গোৎসব বিশেষ ভুমিকা রাখবে। দুর্গাপূজা হয়  দুর্গা উৎসব—সর্বজনীন দুর্গোৎসব। একটি শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানও যে যুগের অনুবেদনা ও  উল্লাস ধারণ করে সম্প্রদায় বিশেষ থেকে সব মানুষের জন্য কল্যাণকর ও  অংশগ্রহণমূলক উৎসবে পরিণত হতে পারে দুর্গোৎসব তার বড় প্রমাণ। যাদের জীবনে উৎসব নেই,  তাদের বাঁচা-মরা সমান। সম্প্রীতিময় এই উৎসবের আনন্দ প্রাণবন্যা জাগিয়ে তুলুক মানুষ থেকে মানুষে।

লেখক : অধ্যাপক, সাবেক ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)