‘বিডা’কে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ চলছে: কে এম আমিনুল ইসলাম

‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশন’ একীভূত করে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’ গঠন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে এটি উন্নত দেশের কাতারে যাবে। এ জন্য শিল্প বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে।’

‘ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কেউই বেঁচে থাকবো না। কিন্তু এ জাতি হয়তো বেঁচে থাকবে শত শত কিংবা হাজার হাজার বছর। এ অর্জনকে সামনে রেখেই আমাদের কাজ চলছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ি বিডাকে একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ করছি। একইসঙ্গে আগামী দিনে বাংলাদেশে শিল্প বিনিয়োগ আরও বাড়াতে আমাদের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।’

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো: আমিনুল ইসলাম । সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীম-আল-মাসুদ । ছবি তুলেছেন মঞ্জুরুল রেজা। নিম্নে পাঠকদের উদ্দেশে এ সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব তু‌লে ধরা হলো।

বিনিয়োগবার্তা: দেশের সার্বিক বিনিয়োগ চিত্র সম্পর্কে বলুন।

কে এম আমিনুল ইসলাম: আসলে শিল্প-বিনিয়োগ একদিনের কোনো জিনিস নয়। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। বিনিয়োগের পরিবেশ, অবকাঠামো, মূলধন, অনান্য লজিস্টিক সাপোর্ট সবকিছুই দরকার। এসব দিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান বিনিয়োগ চিত্র একেবারে খারাপ নয়। গ্লোবাল মার্কেটে সম্প্রতি এ চিত্র কমেছে ১৪ শতাংশ। কিন্তু আমাদের এখানে গত কয়েক বছরে এই চিত্র বেড়েছে ৪ শতাংশ। এটি অবশ্যই ভাল লক্ষণ। কিন্তু আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা এই সংখ্যাকে আরো অনেক উপরে নিয়ে যেতে চাই। এর জন্য আমরা দেশে শিল্প বিনিয়োগের অনেকগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেছি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উধর্¦তন কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে আমরা একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। সকলের সমন্বয়ে আমরা সমস্যাগুলোর বিষয়ে সুপারিশমালা দিয়েছি। সংস্থাগুলো আমাদের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থাও নিতে শুরু করেছে। আশা করি, খুব শিগগীরই দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের আরও উন্নতি হবে। আর যদি আমাদের সুপারিশমালাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়, তাহলে জিডিপি ১০ শতাংশের উপরে চলে যাবে বলে আশা করছি।

বিনিয়োগবার্তা: বিডার অর্গানোগ্রাম নিয়ে বলুন। পূণর্গঠিত বিডায় কি কি নতুনত্ব থাকছে?

কে এম আমিনুল ইসলাম: আসলে বিডার সৃষ্টিই হয়েছে একটি ভবিষ্যতমুখী চিন্তা থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটিকে নতুনভাবে গড়ার দৃঢ মনোভাব নিয়ে পূর্বের ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশন’ একত্রিত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করেছেন। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে এটি উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে শিল্প বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে।’
‘ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কেউই বেঁচে থাকবো না। কিন্তু এ জাতি হয়তো বেঁচে থাকবে শত শত কিংবা হাজার হাজার বছর। এ বিষয়টি সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। আর এই অর্জনের জন্যই বিডা গঠন করা হয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ি বিডাকে একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ করছি। একইসঙ্গে আগামী দিনে বাংলাদেশে শিল্প বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যও আমরা কাজ করে চলেছি।’
এসব লক্ষ্য অর্জনে বিডার বর্তমান এবং আগামী দিনের কর্মকান্ড নিয়ে আমরা ডিটেইল্ড ওয়ার্কস করেছি। এ কাজের জন্য কি কি দরকার- তাও আমরা ঠিক করেছি। নতুন অগ্রানোগ্রামটি বিডার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা হয়েছে। দেশে শিল্প বিনিয়োগ বাড়াতে দাপ্তরিকভাবে যা কিছু করনীয়, তা-ই অগ্রানোগ্রামে তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- এখানে কোনো দ্বিতীয় শ্রেনীর কোনো পদ থাকবে না। এখানে সব হবে ক্লাস ওয়ান অফিসার। নীচের পদগুলোর জন্য আমরা আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে লোকবল নিয়োগ করবো। এছাড়া বিডার আরেকটি নতুনত্ব হলো- সংস্থাটির এক্সিকিউটিভ লেভেলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে লোকবল নেওয়া হবে। কারন বিডা সৃষ্টি হয়েছে প্রাইভেট সেক্টরকে প্রমোট করার জন্য। এই ধারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিডাই প্রথম শুরু করবে। এছাড়া আরও কিছু নতুনত্ব থাকছে। অনান্য সেক্টরে নিয়োগের ক্ষেত্রে জেন্ডার ইক্যুয়েশন নাই। কিন্তু আমরা প্রায় ৫০ ভাগ লোকবল রাখবো জেন্ডার ইক্যুয়েশনের ভিত্তিতে। অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ণ হলে সবকিছুই ফুঁটে উঠবে।

বিনিয়োগবার্তা: বিডাকে কাঙ্খিত সেবায় নিয়ে যেতে আপনার পরিকল্পনা কি? কতদিনে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করতে পারবেন?

কে এম আমিনুল ইসলাম: আমি একটি কথা বারবার বলে আসছি যে, বিডার সৃষ্টিই হয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সেবাকে আরও সহজ করার জন্য। সেইলক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই সেবা পাচ্ছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সকলের জন্য এই সেবা চালু করা হবে। এছাড়া এসব সেবা সহজীকরণে আরও বড় ধরনের রিফর্মস দরকার। আমরা ৫ বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। আপনারা জানেন, ‘এ্যাজ অব ডুয়িং বিজনেস’ এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। আগামী ৫ বছরে এটিকে আমরা সিঙ্গেল ডিজিট বা একশ’র নীচে নামিয়ে আনতে চাই। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে এবছর এর সুফল দেখা যাবে না। কিন্তু পরের বছরগুলোতে এর সুফল দেশের মানুষ দেখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সাক্ষাৎকারটির বাকি অংশ থাকছে পরের পর্বে, বিনিয়োগবার্তার সঙ্গেই থাকুন ….

(শামীম/ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)