‘পদ্মার শাখা নদীগুলোর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলেই ভাঙ্গনের কবলে শরীয়তপুর’

নিজস্ব প্রতিবেদক, শরীয়তপুর: বিশ্ব নদী দিবস-২০১৮ উপলক্ষ্যে কীর্তিনাশা নদী অভিমুখে পদযাত্রা সম্পন্ন করেছে ‘কীর্তিনাশা নদী বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সামজিক সংগঠন।

রোববার বিকেলে শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর তীরে এ পদযাত্রা করে সংগঠনটি।

পদযাত্রায় নদীভাঙ্গন রোধে অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জোর দাবি জানানো হয়।

বিশ্ব নদী দিবস ২০১৮ এর বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য “নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তলোন বন্ধ কর”।

সংগঠনের আহবায়ক ওলিউর রহমান রাজু মাঝির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শহরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নদীপ্রেমিক ও নদী তীরে বসবাসরত সাধারন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

পদযাত্রা শেষে তারা বলেন, রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের উদাসিনতায় দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙ্গনের কবলে আমাদের পদ্মা অববাহিকার জনপদ, আজ আমরা কীর্তিনাশা পাড়ের মানুষও সেই ভাঙ্গন থেকে নিরাপদ নই ।  এই ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ড্রেজিং ব্যবসা । এছাড়াও দখল দূষণের কবলে আমদের প্রিয় নদী আজ মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে । আমরা চাই পরিকল্পিত ভাবে নদী শাসন ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের অংশিদারিত্ব ।

সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক নুরুজ্জামান সিপন বলেন, পদ্মাসহ ছোট বড় অনেক নদনদী বৌধত আমাদের এ অঞ্চল। যুগ যুগ ধরে  অবাধে বালু উত্তোলন ও ছোটখাটো নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার কারণে প্রিয় শরীয়তপুর আজ হুমকীর মুখে। আমরা এ অঞ্চলের নদীগুলো রক্ষার সুব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি আহবান করছি।

অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর জেলা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ্যাড. মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় ইভেন্ট সেক্রেটারী মো:নুরুজ্জামান সিপন, নদী প্রেমিক মো:মনির মাঝি, কাজী মোজাম্মেল হক মামুন, ইসমাইল হোসেন সবুজ কোতোয়াল, আব্দুস সাত্তার মোল্লা, আতিকুর রহমান খান, আবদুল মোতালিব সুমন, সাব্বির, রিংকু পালোয়ান প্রমুখ ।

উল্লেখ্য, শরীয়তপুর জেলার উত্তর-পূর্বে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ পদ্মার তীরবর্তী, পূর্ব-দক্ষিণে ভেদরগঞ্জের একাংশ ও গোসাইরহাট উপজেলা মেঘনার তীরে অবস্থিত। নড়িয়া ও সদর উপজেলার বুক চিড়ে বেরিয়ে গেছে কীর্তিনাশা নদী। জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আড়িয়াল খাঁ নদ।

জাজিরা উপজেলার পশ্চিম ও পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড়কান্দি, কুন্ডেরচর ও বিলাশপুর ইউনিয়ন, নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, ঘড়িষার, চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়ন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, চরভাগা ইউনিয়ন পর্যন্ত ৪০ কিঃমিঃ সীমানা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, আর্শিনগর, চরসেন্সাস, সখিপুর ইউনিয়ন, গোসাইরহাট উপজেলার আলাউলপুর, কোদালপুর কুচাইপট্টি ও নলমুড়ি ইউনিয়ন পর্যন্ত ৩৫ কিঃমিঃ সীমানা মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত।

এছাড়া পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্ট থেকে শুরু হয়েছে ছোট পদ্মা-১। এই নদীটি কার্তিকপুর, চরাভাগা, চরকুমারিয়া, কোদালপুর, আলাউলপুর হয়ে জালালপুরের মধ্যে দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে। নদীটির দৈঘ্য ৩৫ কিঃমিঃ।

এই নদীটি নিলঞ্জনা নদী নামেও পরিচিত। নিলঞ্জনা নদীর আলাউলপুরে বালুচরা, ডামুড্যা, ইদিলপুর, গোসাইরহাট ও হাটুরিয়া হয়ে বরিশালের হিজলা থানার সীমানায় মেঘনা নদীতে মিলেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৫ কিঃমিঃ।

এই নদীটি ঐতিহাসিকভাবে জয়ন্তিকা নদী নামেও পরিচিত। নদীটির শাখা নদী হিসেবে সাইখা নদী নাম ধারণ করে এক একটি শাখা চাঁদপুরের হাইমচরের সীমানায় মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিঃমিঃ।

পদ্মা নদীর তীরবর্তী গৌরাঙ্গ বাজার থেকে শুরু হয়েছে ছোট পদ্মা-২। গৌরাঙ্গ বাজার, তারাবুনিয়ার স্টেশন বাজার ও সখিপুরের আনন্দ বাজার হয়ে চরসেন্সাস ইউনিয়নের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ২০ কিঃমিঃ।

পদ্মার দিয়ারা নাওডুবা থেকে বের হয়েছে ছোট পদ্মা-৩। এই নদীটি নাওডুবা, বিকে নগর, সেনের চর, বড়কান্দি (কাজীর হাট), লাউখোলা, গঙ্গানগর, খোরাতলা ও গোপালপুর হয়ে শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদে গিয়ে মিলেছে। নদী দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিঃমিঃ।

অপরদিকে পদ্মা নদীর ওয়াপদা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়েছে কীর্তিনাশা নদী। এই নদীটি নড়িয়া ও শরীয়তপুর সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলা শহরের কাছাকাছি আড়িয়াল খাঁ নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫ কিঃমি ।

কীর্তিনাশার অপর একটি শাখা সদর উপজেলার মুন্সীরহাট থেকে শুরু হয়ে ডোমসার, শৌলপাড়া, জয়নগর ও রায়পুর  হয়ে মাদারীপুরে আড়িয়ালখার সঙ্গে মিলেছে। এ নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিঃমিঃ।

আরও উল্লেখ্য, পদ্মা, মেঘনা, ছোট পদ্মা ১, ২ ও ৩ এবং কীর্তিনাশা নদীর ভাঙনে গত ৪০ বছরে বিলীন হয়েছে প্রায় ২৫টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম। নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে ৭০ হাজার একর ফসলি জমি, প্রায় শতাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান , বারবার নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় পরিবর্তন এসেছে জেলার মানচিত্রেও ।

ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শাখা নদী গুলোর তলদেশ খনন করে স্বাভাবিক নাব্যতা ফিরিয়ে এনে শরীয়তপুরের প্রবাহমান জলধারা সচল করাই হচ্ছে এই সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের সঠিক পথ । পদ্মা সেতু থেকে সুরেশ্বর পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মান এবং পদ্মার নড়িয়া পয়েন্টে ড্রেজিং এর মাধ্যমে গতিপথ নিয়ন্ত্রন জরুরী। তথ্য-উপাত্ত: সংগৃহকৃত।

(এনজেড/এসএএম/ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮)


Comment As:

Comment (0)