জানুয়ারিতেই চালু হতে পারে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা: চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত সাগরপাড়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোডটি আগামী জানুয়ারিতে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আশা করা হচ্ছে। অবশ্য সড়কটির একাংশের কাজ শেষ হলেও অন্য অংশে এখনো পাইলিংয়ের কাজ চলছে। ফলে সড়কটির কাজ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোডে থাকছে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ কোস্টাল রোড, ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার ফিডার রোড-১ ও শূন্য দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ফিডার রোড-৩।

আউটার রিং রোড খুলে দেয়া হলে এ পথে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরগামী প্রায় পাঁচ হাজার যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে। এতে নগরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে চাপ কমবে। তখন যানজট অর্ধেকে নেমে আসবে বলে দাবি করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

বর্তমানে নগরের একমাত্র প্রধান সড়কটি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান আর ইপিজেডের যানজটে প্রতিদিনই প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। রিং রোড বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দর সড়কের ওপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে। পতেঙ্গা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরমুখী বিকল্প সড়কও সৃষ্টি হবে।

এছাড়া নগরের পাশাপাশি পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মুক্তি পাবে। ঘূর্ণিঝড় ও ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে নগরীর উপকূলীয় এলাকা।

আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, টানা বৃষ্টিতে প্রকল্পের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৭৫-৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। জানুয়ারির মধ্যে খুলে দেয়ার পরিকল্পনা আছে। এরপর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করবে সিডিএ।

মাস্টারপ্ল্যানে অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই রিং রোড। এটি খুলে দিলে নগরীর যানজট অনেকখানিই কমে যাবে বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়াও। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে পাশাপাশি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টও করতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

সিডিএ সূত্র জানায়, প্রকল্পের পতেঙ্গা খেজুরতলা অংশ থেকে হালিশহর আনন্দবাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আনন্দবাজার থেকে হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হলেও এখনো পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়নি। আর্টিলারি সেন্টার থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এখনো মাটি পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এছাড়া পতেঙ্গা থেকে খেজুরতলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এখনো মাটি পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এছাড়া পতেঙ্গা থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সাগর ঘেঁষে ওয়াকওয়ে নির্মাণাধীন। সৌন্দর্যবর্ধনও করা হবে। এরই মধ্যে ১১টি স্লুইসগেট নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সড়কের কাজ শেষ হলে ১০টি ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখে পার্কিংও নির্মাণ করা হবে।

নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর এ আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার চুক্তি হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে পরে দুবার সংশোধনের পর ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং জাইকা দেবে ৭০৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সাল।

(এএইচএন / ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ )


Comment As:

Comment (0)