যেসব কারনে অফিসের প্রথম ১০ মিনিটকে গুরুত্ব দেবেন

বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: প্রতিটি কর্মদিবসের প্রথম কয়েক মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভালো হলে পরবর্তী আট ঘণ্টা ভালো যায়; আর ব্যতিক্রম হলে পরের আট ঘণ্টাকে ৮০ ঘণ্টা মনে হয়। তাই অফিসে প্রবেশের পর প্রথম কয়েক মিনিটকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।

সারাদিনের অফিসকে আনন্দময় করে রাখতে অফিসে প্রতিটি কর্মদিবসের কমপক্ষে প্রথম ১০ মিনিটে কোনো ভুল করা চলবে না। এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিৎ। তবে নিজের অজান্তে কিছু ভুল হয়েই যায়। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা নিউজ পোর্টাল বিজনেস ইনসাইডারের অবলম্বনে এমন ৯টি ভুল পাঠকদের জন্য তুলে ধরছে অর্থসূচক।

১. নির্ধারিত সময়ে অফিসে প্রবেশ: প্রতিটি কাজেই সময়ানুবর্তিতা একটি বড় ইস্যু। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজ করা উচিৎ। সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছানোর মধ্যেও কাজের প্রতি আন্তরিকতা এবং দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। কোনো কারণে দেরিতে অফিসে পৌঁছানো মানে কর্মদিবস শুরুর আগেই বিপত্তি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দেরিতে অফিসে পৌঁছান- তাদেরকে বস কম রেটিং দেন। এমনকি অতিরিক্ত সময় অফিসের কাজ করেও সবার পরে অফিস থেকে বের হলেও রেটিং কমই থাকে। এটা খুব দুঃখজনক।

২. সহকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য আলাপ: কর্মদিবসের শুরুতেই সহকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য আলাপ করুন। এতে দারুণ কর্মপরিবেশ তৈরি হয়। দিনের শুরুতে সবার মেজাজই শীতল থাকে। ওই সময় সৌজন্য আলোচনা করা হলে সবার অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এতে কাজ করতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।

৩. কফি বা চা পান: সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর অনেকেরই চা বা কফি পানের অভ্যাস রয়েছে। যদি কোনোদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে চা বা কফি পান করতে না পারেন- তবে অনেকেই অফিসে ঢুকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে চা-কফি পান করেন। এমনটা করা উচিৎ নয়।

গবেষণায় জানা যায় যে, কফি বা চা পান করার ভালো সময় সকাল সাড়ে ৯টার পর। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সর্বাধিক মাত্রায় স্ট্রেস হরমোন করটিসল তৈরি হয়; যা মানুষের শরীরের শক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ সময় কফি বা চা পান করা হলে শরীরে করটিসল তৈরির পরিমাণ কমে যায়। ফলে ক্যাফেইনের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে শরীর।

আর আমাদের দেশের অধিকাংশ অফিস সকাল ৯টায় শুরু হয়। সুতরাং অফিসে প্রবেশের পরপরই চা বা কফির কাপ হাতে না নেওয়াই ভালো। তবে শরীরকে চাঙ্গা করতে এক কাপ কফির জুড়ি নেই। তাই অফিসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে না হলেও একটু দেরিতে এক কাপ কফি পান করা উচিৎ।

৪. মেইল ইনবক্স: অফিসের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ খোলার পর মেইল ইনবক্স চেক করা উচিৎ। এটা না করাটাই বোকামি। আগের দিনের অফিস টাইম শেষে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ মেইলগুলোর উত্তর দিতে হবে। সেই সঙ্গে কম গুরুত্বপূর্ণ মেইলগুলোর উত্তর দেওয়া যেতে পারে। যদি পরে উত্তর দেওয়ার জন্য কোনো মেইল রেখে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে সে কাজ আর করা হবে না।

একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক স্পিকার এবং ‘You Can`t Be Serious! Putting Humor to Work’ বইয়ের লেখক মাইকেল কের বলেছেন, কর্ম দিবসের প্রথম ১০ মিনিটে ই-মেইলগুলোকে ভালো করে দেখতে হবে এবং এর মধ্যে যেগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর উত্তর দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ মেইলগুলোর উত্তর না দেওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

৫. সময়সূচি: দিনের শুরুতে কাজের সময় ছক তৈরি করতে হবে। এতে কাজের গতি ভালো থাকে। দিনের শুরুতেই একবার ক্যালেন্ডার দেখা উচিৎ। এই দিনের জন্য আগে ঠিক করা কোনো পরিকল্পনা আছে কি না- তাও দেখে নিতে হবে।

৬. গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে করা: দিনের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করতে হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মশক্তি ও ইচ্ছাশক্তিই কাজ করতে সাহায্য করে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে করতে হবে। দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হলে দিনের অন্য কাজ শেষ করতে সমস্যা হবে না; বরং সব কাজই সহজ হয়ে যাবে।

৭. একসঙ্গে অনেক কাজ না করা: একইসঙ্গে একাধিক কাজ থেকে বিরত থাকা। অনেকেই মনে করেন, একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে দ্রুত শেষ হয়। কিন্তু গবেষণায় জানা গেছে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই একসঙ্গে একাধিক কাজে হাত না দিয়ে গুরুত্ব অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে কাজ করতে হবে।

৮. নেতিবাচক চিন্তা না করা: যেকোনো বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা আমাদের কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অফিসের শুরুতেও কোনো নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করলে সারাদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কাজের সময় ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক চিন্তাও আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই দিনের শুরুতে নেতিবাচক চিন্তা নয়। এমন চিন্তা মাথায় আসলেও তা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দেওয়া উচিৎ।

৯. মিটিং থেকে বিরত থাকা: অফিস টাইমের শুরুতেই কোনো মিটিং বা বৈঠক করা উচিৎ নয়। মিটিংয়ে লম্বা সময় ব্যয় হয়; এতে কাজের স্পৃহাও নষ্ট হয়।

What the Most Successful People Do Before Breakfast নামের বইয়ে লরা ভেন্ডারকাম লিখেছেন, একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এমন কাজই সকালে করা উচিৎ। মিটিং বা বৈঠকের জন্য দুপুরই উপযুক্ত সময়।

(এসএএম/ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)