স্বর্ণসময়ের অপেক্ষায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা

ইসমাত জেরিন খান: অতীতের সব ইতিহাস ছাড়িয়ে সামনের দিনগুলো পুজিবাজারের জন্য হতে পারে স্বর্নসময়। বিনিয়োগকারীদের পুজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়ার ফলে বাজারের লেনদেন ও সূচক এবছর যে পর্যায়ে রয়েছে, আগামী বছরে তাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে; যদি বাংলাদেশর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের মত স্থিতিশীল থাকে। কারন পুঁজিবাজারের মত নাজুক জায়গায় রাজনৈতিক যেকোন পরিবর্তনই বিনিয়োগকারীদের ভীতু করে ফেলে।

যেকোন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনই বাজারের উপর একটি বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। আমেরিকার নির্বাচনে বিশ্ববাজারে যেভাবে ধ্বস নেমে এসেছিল। ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওযার একদিন পর পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে।

২০১৭ সাল পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে থাকার প্রধান কারন হতে পারে ব্যাংকের সুধের হার কমে যাওয়া। কম ইন্টারেস্ট রেটের কারনে অনেকেই বাজারের দিকে লেনদেনে চলে আসতে পারে।

পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী হওয়ার অন্যতম কারন হতে পারে ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য।  এতে বিনিয়োগকারীদের সাথে সামনে এগিয়ে আসতে পারে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশের বর্তমান পুজিবাজারে যেহেতু নতুন নতুন আইপিও দেয়া হচ্ছে না। একারনে ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের গ্যাপ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে বিদেশী বিনিযোগকারীদের সাথে দেশী বিনিযোগকাীরাও উৎসাহিত হবে।

যেহেতু এবছর বেশীরভাগ কোম্পানীর ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে এবং অনেক কোম্পানী তাদের ভালো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাই সামনের বছর মার্চে বাকী ৩০ টি ব্যাংক, ৪৬ টি ইন্সুরেন্স, ২৩ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সকল মাল্টিন্যামনাল কোম্পানীর বছরের শুরুর দিকে ডিকলারেশন চলে আসবে। তাই বছরের শুরুতেই এর একটা প্রভাব বাজারে থাকবে। আর এরপর ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর জুন ক্লেজিং এর পরে ডিকলারেশন আসবে। এদিকে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানী ব্যাটবিসি, লিন্ডে,ম্যারিকো,সিঙ্গার,হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ, রেকিট বেনকিজার, গ্লাস্কো, বাটাসহ আরো বহুজাতিক কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে। যার কারনে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময় এদের  একটা জমজমাট পরিস্থিতি আসতে পারে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জ-ডবি¬উএফই-এর পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পুঁজিবাজার কমপ্লায়েন্সের বিভিন্ন শর্ত পূরণের পর ডিএসইকে এ সদস্যপদ দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি। ডিমিউচুয়ালাইজড হওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জের এ সংস্থাটির প্রাথমিক সদস্যপদ পেয়েছে ডিএসই। এজন্য ডিএসইকে অতীতের ব্যার্থতা ও সফলতা তুলে ধরতে হয়েছে।

তাই পরবর্তীতে তাদের শর্ত পরিপালন হলে পূর্ণ সদস্য পদ পাবে ডিএসই। আর ২০১৭ সালেই  ডব্লিউএফইর পর্যবেক্ষণ শেষে এ সদস্যপদের কার্যকারিতা হবে। যা হবে ডিএসইর ইতিহাসের বড় অর্জন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠান ডিএসই এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত পূরণ করে আইএসওর সনদও পেয়েছে।

বর্তমান ডিমিউচুয়ালইজেশন স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে বিএসইসির স্বক্ষমতাও পুরোপুরি প্রকাশ পেতে পারে কারন বিএসইসির চেয়ারম্যান আর মেম্বারদের আর দেড় বছরের মত সময় হাতে পাবে। কারন বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম.খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালের ৪ মে। আর প্রথম মেম্বার অধ্যাপক হেলাল নিজামীর মেয়াদ শেষ হবে একই বছর ১৪ই মে। এদিকে ২০১৭ সালে বিএসইসির মেম্বার আব্দুস সালামের মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জানুয়ারী আর আমজাদ হোসেনের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। তাই পুজিবাজার ধ্বসের পর দীর্ঘ পথচলায় যেসকল পরিবর্তন বিএসইসি এনেছে তার চেয়ে আরো খানিকটা বেশী কাজ করার চেষ্টা করবে তাদের শেষ বছরে। তাই ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুজিবাজারে নতুন পরিবর্তন আনবে। আর এই সময়কে কেন্দ্র করে আগ্রহ তৈরী হতে পারে সাধারন বিনিযোগকারেিদর মধ্যে।

অনেক বিনিয়োগকারী ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে নতুন পরিকল্পনা তৈরী করছেন। যা বাজারের ধ্বস পরবর্তী সময়ের পর অনেক পরিপক্ক একটি বাজার পাওয়ার আশা করা যায়। উভয স্টক এক্সচেনজই ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত পূরনের জন্য কাজ করবে। এরই মধ্যে ডিএসইর স্টাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী পাওয়ার জন্য ডিএসইর বছাই প্রক্রিয়া চলছে।তাই ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে ডিএসইও সিএসই উভযেরই রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এখন শুধু অপেক্ষা বদলে যাওযা বাংলাদেশের ভাগ্য যেভাবে এই সরকারের হাত ধরে পরিবর্তন হয়েছে। ঠিক সেভাবে এই সরকারের বর্তমান সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতির সাথে পুজিবাজারকে টেনে তোলার জন্য সকল মহলের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন । তাহলে এই পুজিবাজারই বংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সহযোগিতা করবে। বেসরকারী খাতের অবকাঠামোর টাকা আসার অন্যতম স্থান হতে পারে পুজিবাজার। তাই এখন আর কোন মহলের বসে থাকার সময নেই সকলের হাতে হাত রেখে এই সরকারের নেতৃত্বে এবারের পুজিবাজারের সফলতা হতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কৃতিত্ব। আর ভাগ্য ফেরাতে পারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের; যারা চেয়ে আছে সেই স্বর্ন সময়ের অপেক্ষায়।

লেখক: বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা


Comment As:

Comment (0)