undefined

মতামত

জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুঃ গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে

ড: মিহির কুমার রায়: ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক এখন সারাদেশে বিস্তৃত; যা গৃহস্থালী থেকে শুরু করে অফিস কিংবা ফিল্মি পাড়া পর্যন্ত, কিংবা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত। অ্যাডিস মশা নিরবে তার কাজ করে যাচ্ছে, আর জিন্মি হয়েছে সারা দেশের মানুষ, যা এমনটি কখনও দেখা যায়নি। আমাদের অনেক সমস্যা যেমন বৃষ্টি, বন্যা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রন ইত্যাদির মধ্যে আরও একটি নুতন সমস্যা যোগ হয়েছে। এই ডেঙ্গু নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কিংবা বৈদ্যুতিক মিডিয়ার টকশো ইত্যাদি এখন রমরমা সংবাদ কিংবা আলোচনা প্রচার করে চলছে এবং তার সাথে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা তথা প্রাণহানির খবর, যা বেদনাদায়ক।

 

ঢাকায় ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ছিল শিশুরা। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৬ অগাস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ৯৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সবমিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়া মানুষের সংখ্যা ৪,৩১৯। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩,৩১২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সন্দেহ করা হচ্ছে ১০ জনের। রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ডাটায় দেখা যায, ২০১৯ সালে জুলাই – সেপ্টেম্বরে ঢাকা মহানগরে ৬,৬১৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। ওই সমযে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ডেঙ্গুতে সংক্রমণ হয়েছিল মিরপুরে (১,১২৫) জন। ঢাকা মহানগরে সর্বশেষ ডেঙ্গু প্রকোপের (২০১৯ সাল) ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হওযার ঝুঁকি সবচেযে বেশি শিশুদের। ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের শীর্ষ ১০ এলাকায ৫-১৪ বছর বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছিল পশ্চিম উত্তরায়, এ হার ছিল সর্বোচ্চ ৩০%, সর্বনিম্ন শাহজাহানপুরে (২২%)। মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ১৫ থেকে ২৪ বছর বযসী মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় (২৫%)। এ বযসী সবচেয়ে কম আক্রান্ত (১৬%) হয় পশ্চিম উত্তরায়। বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে ঢাকায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ২,৯৫৭, পুরুষের সংখ্যা ৩,৬৬২।

 

অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রশ্ন করেছেন ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি, যা দীর্ঘ দিনের জনস্বাস্থ্যের প্রতি অনাদায় অবহেলার ফসল। স্বাস্থ অধিদপ্তর বলছে অনেকদিন ধরে অ্যাডিস মশা থাকলেও তা নিয়ে কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক গবেষনা লক্ষ্য করা যায়নি কিংবা তা নিয়ে কোন প্রকার ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া সম্ভব হয়নি। একি দপ্তরের সিনিয়র কীটনাশকবিদ বলেছেন একটি অ্যাডিস মশার আয়ু কাল প্রায় ত্রিশ দিনের মত এবং একটি স্ত্রী মশা ২ দিন পর পর এক সাথে একশত বিশ থেকে এক শত পঞ্চাশটি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে, যার নেশা মানুষের রক্ত চোষা, যারা উড়তে পারে পাচশত মিটার পযর্ন্ত। অ্যাডিস মশা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসবাহী কাউকে কামরিয়ে পরে অন্য জনকে কামড়ালে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যা বর্তমানে ঘটছে সারা দেশে, শহর কিংবা গ্রামে, উপশহরে কিংবা মহল্লায়। বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় বৃষ্টি তথা বন্যার কারনে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিন দিন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে যা এখনি নিয়ন্ত্রনে না আনতে পাড়লে অবস্থার অবনতি ঘটবে। মশক নিয়ন্ত্রনে অধিদপ্তর ও সিটি করর্পোরেশন সহ যে সকল প্রতিষ্ঠানের উপর মশা নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ছিল তারা এ ব্যাপারে কেন উদাসিন এই প্রশ্নটি সকল সুশীল সমাজ তথা সমাজকর্মীর কাছে, তাহলে মশা নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এর কাজ কি?

 

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা হতে পারে এই মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা দিলেও সিটি করর্পোরেশন তা আমলে নেন নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালেই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে যার মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখিত ছিল, যাতে ছিল ডেঙ্গু বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন দেশ তথা আক্রান্ত হয়েছে এমন ৭৫ শতাংশের বসবাস এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। আরও জানা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রনের জন্য (Global strategy for dengo prevention and control) শিরোনামে বৈশ্বিক কৌশলপত্র প্রকাশ করেছিল। এর অংশ হিসাবে ডেঙ্গু জীবানু বহনকারী মশা কিভাবে উৎপত্তি হয়, এর অবস্থান স্থল কোথায়, কখন কামড়ায়, কিভাবে রোগের লক্ষন শুরু হয় এবং প্রতিকারে উপায় কি এসব নিয়ে গত মার্চ মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি আগাম বার্তা সংশ্লিষ্ট দফতরে দেয়া হয়েছিল। সে যাই হউক না কেন এখন দুটি সিটি করর্পোরেশন তাদের দায় স্বীকার করলেও ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে যে সকল (preventive measure) নেয়ার কথা, যেমন- পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধ ছিটানো ইত্যাদির বিলম্বের কারনে (curative) একটি হুমকির মুখে রয়েছে বিশেষত: সরকারি – বেসরকারী হাসপাতাল কেন্দ্রীক সেবায় আর জনমনে আতঙ্কের কথা বলাই বাহুল্য। এই ডেঙ্গু সারা দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি বিস্তারের মধ্যে রয়েছে। দেশের চিকিৎসক- চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে সার্বক্ষনিক নজর দারি সহ রোগ চিহিৃতকরন, সেবায় মনোন্নয়ন তার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। দেশের প্রথম শ্রেনী পত্রিকাগুলো তাদের প্রথম পাতায় শিরোণাম হিসাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরছে। কিন্তু একটি বিষয় পরিস্কার যে ডেঙ্গু নিরাময়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে উদাসীণতা খুবি প্রবল, যার প্রমান সর্বশেষ হস্তক্ষেপটি আসছে দেশের সর্বোচ্চ আদলত হাইকোর্ট থেকে, যাতে বলা হয়েছে “মাননীয় হাইকোর্ট জানতে চায় নতুন ঔষধ আনতে আর কত বিলম্ব হবে?” দুটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে ডেঙ্গু নিয়ে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো যারা সুস্থ হয়েও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে যে এইভাবে তারা কি করে মশার কবল থেকে মুক্তি পাবে? হাসপাতালে অবস্থান কালে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব, দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে ভিন্নতা, হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন ইত্যাদি এখন দেখার বিষয় জরুরী। দেশে বুদ্ধিজীবি টকশোতে বলছেন (blame game) আর নয় প্রয়োজন সমন্বীত প্রয়াস, যা কেবল সরকারের নয় সমাজের সকল সংগঠনের যারা মানুষের সুস্থ্য নিয়ে ভাবেন আগামী দিনের জন্য। এখন প্রয়োজন-

 

এক: চিকিৎসক গবেষকদের যা আছে তা নীতি নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা বিশেষত: দেশের দুটি সিটি করপোরেশন সহ অন্যান্য করর্পোরেশনের স্বাস্থ্য শাখাগুলোতে, যাতে করে এই সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা (preventive and curative measure) আগাম নেয়ার সুযোগে থাকে;

 

দ্বিতীয়তঃ বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কে সঠিক সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলা আর যারা সুস্থ অবস্থায় আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন তাদের আত্মরক্ষার পথ হিসাবে বাসস্থান কিংবা কর্মস্থান পরিস্কার রাখা, মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ঔষধ ছিটানো, বাসা কিংবা অফিসের আবর্জনার স্থানে পানির ব্যবহার না করা ও সর্বোপরি ধর্ম্মীয় অণুশাসনের ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালিত করা;

 

তৃতীয়তঃ ডেঙ্গু মশা নিধনকারী প্রতিষ্ঠানে বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার। কারন প্রায়ই এই অভিযোগটি আসে যে সকল উপকরন বিশেষত: মান সম্মত ঔষধ, যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনবল ও সময় উপযোগী আগাম পদক্ষেপ গ্রহনের অধিক অভিযোগ রয়েছে যা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি পেয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও অবস্থার কোন পরিবর্তন লক্ষন দৃশ্যত: চোখে পড়ে না, যার কারনে মহামান্য হাইকোর্টকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এর সমাধান কখন কিভাবে হবে তা বর্তমানে আলাপ চারিতায় কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যার অবসান জরুরী;

 

চতুর্থতঃ আরও একটি কথা (গুজব না সত্য) শুনা যাচ্ছে যে মশার কাজ মশা করছে তাই ডেঙ্গু রোগের এই ভাইরাসের নাকি বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে যাতে মশা না কামরালেও ডেঙ্গু হতে পারে। এখন এই গুজবের সত্যটা কতটুকু তা নিরশন করবে কে? অবশ্যি স্বাস্থ্য গবেষনা প্রতিষ্ঠান বিশেষত: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগন ডেঙ্গু বিষয়ে অতীতের গবেষনার ফলাফল যদি থাকে তার ভিত্তিতে কি প্রায়োগিক কর্মসুচী নেয়া যায় এ ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিবেন। আর যদি কোন গবেষক না থাকে তবে প্রাধিকার ভিত্তিতে ডেঙ্গুর উপর গবেষনা করার দাবি রইল প্রাতিষ্ঠানিক গবেষনা পরিকল্পনায় দেশের অগনিত চিকিৎসক যারা স্নাতকোত্তোর পর্যায়ে (এম.এস/ এম.ডি/এফ.সি.পি.স/পিএইডি) গবেষনারত তাদের ডেঙ্গু বিষয়টিকে গবেষনার ক্ষেত্র হিসাবে বাছাই করা উচিত;

 

পঞ্চমতঃ ষঢ় ঋতুর দেশের বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ন ঋতু, যা আষাঢ় শ্রাবন মাসে বিস্তৃত। এটি সকলই জানেন যে এই বর্ষাতেই বৃষ্টির কারনে ডেঙ্গুর প্রভাবটি বেড়ে যায় কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বাজেট থাকলেও পরিকল্পনা মাফিক এর ব্যয় করার যে অনুশীলন তা না করার কারণে কল্পনা মাফিক এর ব্যয় করার যে অণুশীলণ তা না করার কারনে সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে হয় না বিধায় যাও হয় তা মান সম্মত নয়, যা নিয়ে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। এখন কি ঔষধ ব্যবহার করা হবে, কোন দেশ থেকে ঔষধ আসবে, কোন পদ্ধতিতে টেন্ডার হবে, (payment settlement) কি ভাবে হবে ইত্যাদি একটি নির্ধারিত ছকে হওয়ার কথা থাকলেও যে সকল কর্মকতা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সজাকতা কিংবা অসাদুতার কারনে বিঘ্নিত হয় মূল কাজ আর ক্ষতিগ্রস্থ হয় সমাজ যা দেশের প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতার একটি সাধারন চিত্র। এই সকল বিষয়গুলো প্রশাসনিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে;

 

ষষ্ঠতঃ স্বাস্থ সেবা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাও স্বাস্থ্য প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় জাতীয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন ডেঙ্গুর মত বিষয়গুলো যখন ব্যাপক ভাবে দেখা দেয় তখন এরি নিয়ন্ত্রন অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাড়ায় যার ফলশ্রুতিতে জন জীবন বিপন্ন হয় যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রায়শই ঘটছে। তার একটি সমাধান খুজে বের করা দরকার;

 

সপ্তমতঃ স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে প্রায়শই সমালোচনা শুনা যায়, যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ৪-২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা উপকরন (ঔষধ, যন্ত্রপাতি, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) ও স্বাস্থ্য গবেষনা/প্রশিক্ষনের খরচ মেটাতে হয়। তার মধ্যে আবার ডেঙ্গু জনিত রোগ, বন্যা জনিত রোগ, মৌসুমি রোগ ইত্যাদি মোকাবেলার জন্য তেমন কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। তা হলে স্বাস্থ্য সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত ফি (যদিও সরকারি হাসপাতালে কম) এর টাকা কি বাজেটের ঘাটতি পূরনে সহয়তা করে না? এখানে উল্লেথ্য যে সম্প্রতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ৪.২ শতাংশ যদিও গত বছর এই বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ শতাংশ (টাকার অংকে ২৩ হাজার ৩শত ৮৩ কোটি), এর আগের বছরে (২০১৭-১৮) বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬শত কোটি টাকা (মোট বরাদ্দ ৫.২ শতাংশ) অর্থাৎ বিগত নয় (৯) বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিল ২০১০-১১ অর্থ বছরের যা মোট বাজেটের ৫.৬৮ শতাংশ। আমরা যদি স্বাস্থ্য বাজেটকে দেশের ১৭ কোটি জন সংখ্যার মধ্যে ভাগ করি তা হলে মাথা পিছু বাৎসরিক ব্যয় দড়ায় ১৫১৩ টাকা এবং তা প্রতি মাসে পরে ১২৭ টাকা।

 

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মাথা পিছু বরাদ্দ ১৮.০১ ডলার যা ভারতে ৬২ ডলার, নেপালে ৩৯ ডলার, ভিয়েতনামে ১১১ ডলার, মালদ্বীপে ৭২০ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ১০০০ ডলার। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ৫০ বছরের পথ পরিক্রমায় মাত্র ২১ বছর স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল এবং অনেক প্রতিকূলতা স্বত্বেও দেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জন বিশেষ প্রশংসনীয়। যেমন টিকাদান কর্মসুচির ব্যাপক সফলতা, সংক্রামক রোগ নির্মূল ও নিয়ন্ত্রন, পয়ঃনিস্কাসন ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি। বাংলাদেশ সরকার চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যার পুষ্টি বিষয়ক উন্নয়ন কর্মসুচি (২০১৭-২২) বাস্তবায়ন করছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫শত ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যার কম্পোনেন্টগুলো হলো সংক্রামক অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মানব সম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে ১২,১২৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে যেগুলো গ্রামাঞ্চলে প্রশংসনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিনামূল্যে। তার পরও কথা থেকে যায় যে, বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তার বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতেই চলে যায়। তাই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই বর্তমানে প্রস্তাবিত বাজেট বৃদ্ধিকরন যুক্তিযুক্ত বলে প্রতিয়মান হয়। আমাদের স্বাস্থ্য নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে যা হবে মানবিক, নৈতিক, ব্যয়সাশ্রয়ী ও সমাজমুখী, যদিও কাজটি কঠিন, তবুও সম্ভব। আর ডেঙ্গু রোগের মত রোগ যাতে বার বার মানুষকে ভোগাতে না পাড়ে তার জন্য গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

 

লেখক: গবেষক ও শিক্ষক, সিটি ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)