undefined

ভারতীয় রাজনীতি ও পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচন ফলাফলঃ একটি বিশ্লেষণ

ড: মিহির কুমার রায়: ভারতীয় রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গ একটি বিবেচ্য বিষয়, যা প্রমান পাওয়া যায় সম্প্রতি সমাপ্ত উত্তেজনাকর বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে, যেখানে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস এবার যত ভোট পেয়েছে বিগত কোন নির্বাচনেই সে পরিমাণ ভোট পায়নি। ভোটের ফলাফলে দেখা যায় যে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টি আসনে বিজয়ী তৃণমূল কংগ্রেস আর ২০২১ সালে এসে ৪৭.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১৩ টি আসনে জয়ী হয়ে বিজয়ের ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রেখেছে। বিপরীতে বিজেপি ২০১৬ সালের নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পেলেও এবারের নির্বাচনে ৭৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে ৩৮.১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিগত নির্বাচনের তুলনায় তৃণমূলের মাত্র দু’টো আসন বাড়লেও বিজেপির অর্জন ৭৪টি বাড়তি আসন। আরও ৬৫টি আসনে বিজেপি প্রার্থীরা খুব সামান্য ব্যবধানেই হেরেছেন। এবার কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র যেন সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছিল মমতাকে হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দখল নিতে। নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর ১৫ বার এখানে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ৬২ বার এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাই হিন্দুত্ববাদ তথা সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রসারণে এবারের পশ্চিম বাংলার নির্বাচন মোদি-অমিত শাহদের জন্য ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার মানসে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড সংখ্যক বার পশ্চিম বাংলা সফর করেছেন মোদি। কেন্দ্রীয় সরকার সার্বিক প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে ভোটারদের উপর। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টোই। 

তুলনামূলক এই বিশ্লেষণে কি বলা যাবে সাম্প্রদাযিকতা হেরেছে? ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী কংগ্রেস আর অসাম্প্রদায়িক বাম দলগুলো মিলে ২০১৬ সালে ৭৬ টি আসন পেলেও এবারে তাদের অর্জন শূন্য। চূড়ান্ত বিচারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের নিরঙ্কুশ রায় পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জী অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা একদিকে যেমন স্থিতিশীলতার পক্ষে থেকেছে, অন্যদিকে তারা সাম্প্রদায়িকতাকেও রুখে দিয়েছে। ফলে আসল ম্যাজিক দেখালেন মমতাই। আর বিজেপি উড়ে গেল বাঙালীর ঝড়ে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই ভোট হয়েছে ভারতের আরও চারটি রাজ্যে, কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরেও গণমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কারণ এবারের নির্বাচনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বনাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত প্রায় দুই মাস ম্যারাথন ভোটগ্রহণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এ সময়ে পায়ে আঘাত পেয়ে হুইল চেয়ারে ঘুরে প্রচারণা চালান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিজয়ের বরমাল্য তার কণ্ঠেই এলো, দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসনে মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ের পেছনে অনেক কারণই রয়েছে। তবে মমতার দেয়াল লিখন ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ কথাটির মধ্যে ‘বহিরাগত’দের পশ্চিমবঙ্গে স্থান না দেয়ার স্পষ্ট বার্তা ছিল। এ দফা অন্তত বাংলার মেয়েরই বিজয় নিশ্চিত হলো। আবার কভিড-১৯ সঙ্কটের অভিযোগ যাচ্ছে নির্বাচনের ঘাড়েও। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের কারণে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়েছে এবং মোদি ও অমিত শাহ এই মহামারীর চেয়ে নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি, যা নাগরিকরা এটিকে ভালভাবে নেয়নি যার প্রভাব  পড়েছে ভোটের ফলে। প্রতিটি সফরেই একদিকে ধর্মীয় আবরণ আর অন্যদিকে ক্ষমতার চাণক্যকে ব্যবহার করে জনতাকে কাছে টানার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। ভারতীয় এনআরসি বাস্তবায়নে প্রধান বাধা মমতাকে সরিয়ে বিজেপিকে বিধান সভার নেতৃত্বে আনতে মরিয়া বিজেপি কি পশ্চিমবঙ্গ হেরে গেছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস কি সত্যি জিতে গেছে? মমতার বিজয় কি সাম্প্রদাযিকতার বিরুদ্ধে ধর্ম নিরপেক্ষতার বিজয়? গবেষকগন বলছে আসনের হিসেবে বিজেপি হারলেও তাদের অর্জন আকাশছোঁয়া। এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস আর বামদলের দৃশ্যপটের বাইরে চলে যাওয়া আর বিজেপির আকাশচুম্বী অর্জন, ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসাম্প্রদায়িক বাংলার জন্য নিতান্তই অশনি সংকেত। তাহলে পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে জিতলো কে? সাম্প্রদায়িকতা নাকি অসাম্প্রদায়িকতা? যুগ যুগ ধরেই বংশ পরম্পরায় অসমীয়া হয়েও বিজেপির তথাকথিত এনআরসি আর নাগরিক পঞ্জির নামে অসম প্রদেশে ১৯ লক্ষ বাঙলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী আজ নাগরিকত্ব তথা পরিচয় সংকটে নিপতিত। মমতার নেতৃত্বে তীব্র প্রতিরোধের মুখে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের এনআরসি না করতে পারলেও জেপি নাডডা, অমিত শাহ আর মোদিদের জাতীয় কর্ম পরিকল্পনায় এখনো এটি প্রাধিকারের শীর্ষে। বাঙালি তথা মুসলিম বাঙালিদের রাষ্ট্রহীন করার এই হীন প্রচেষ্টাটি পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা বুঝতে পেরেছেন ভোটের ফলাফলেই যার স্পষ্ট প্রমাণ মিলে। তাই তো আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ভোট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে বলেছে, ‘সংখ্যালঘুরা একাট্টা হয়েই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে’।

অতি সম্প্রতি প্রথম আলোর কলকাতার প্রতিনিধি শুভজিত বাগচির লেখা প্রবন্ধ ‘যে কারনে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদের উন্থান ঘটিয়েছে’ তে উল্লেখিত হয়েছে যে তৃনমুল নেত্রীর অতি সংখ্যালঘু প্রীতি যাদের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ এবং বাকি উল্টোদিকে সংখ্যা গুরু হিন্দুভোটারের সংখ্যা ৭৩ শতাংশ রয়েছে। এর প্রতিফলন ঘটেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ৪২ টি আসনের মধ্যে  ১৮টি আসন পেয়েছিল, যা মমতাকে এক বিশাল চিন্তায় ফেলে দিল কারন এর দুবছর পরেই অনুষ্ঠিত হবে বিধান সভার নির্বাচন, যা সম্প্রতি হয়ে গেল। মমতা রাতারাতি তার নীতি থেকে সড়ে এসে হিন্দু পুরোহিতদের ভাতা চালু, মুসলিম ছাত্রদের বৃত্তি  দেয়া, বিধান সভায় মুসলিম প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা। অপরদিকে নরেন্দ্র মোদি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয় বিজেপি অবশ্যি নির্বাচনে জিততে চায়, যা একটি উপলক্ষ মাত্র, তার লক্ষ্য, সমাজের ভিত্তি হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় তথা হিন্দু জাতীয়তাবাদ। সেই অর্থে বিজেপি একটি দক্ষিণপন্থী বিপ্লবি দল যার হিন্দুত্ববাদী চরিত্রের বিস্তার ঘটল  পশ্চিমবঙ্গে যার প্রমান ২০১৯ এর লোকসভার নির্বাচনের ফলাফল। তারপর বিজেপি ধীরে ধীরে  মুসলমানদের নিয়ে হিন্দুদের মাঝে ভীতি ছড়াতে থাকল এই বলে যে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের সংখ্যা হিন্দুদের থেকে বেড়ে যাওয়ার এবং দেশটি পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত হবে। সোশ্যাল মিডিয়া আর গণমাধ্যমের তথ্যে এটি স্পষ্ট এবারের পশ্চিম বাংলার নির্বাচন বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বেশ নাড়া দিয়েছে। কারন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক বিরুপ মন্তব্য করেছে, যার উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সঠিক ভাবে দিয়েছেন। জনাব নরেন্দ্র মোদির রাজনীতি আরও গভীরে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে গত ২৬, ২৭ মার্চ দু'দিনব্যাপী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুটি মন্দির দর্শন এবং সেখানে পূজা, প্রার্থনা ও বক্তৃতা করেন। হিন্দু পুরাণমতে ৫১ শক্তিপীঠের একটি বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের কালী মন্দিরে তার গমন করার বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গণ্য করা যেতে পারে। তবে একই দিন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরে গমন করা নিছক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অবকাশ নেই এবং তারপর দেশে ফিরে বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় নরেন্দ্র মোদির দেওয়া বক্তৃতা বিশ্নেষণ করলে বিষয়টি অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায়। এসব বক্তৃতায় মোদি মতুয়াদের প্রধান তীর্থস্থান ওড়াকান্দি ভ্রমণের কাহিনিসহ তিনি মতুয়াবাদের ভক্ত বলে প্রচার করেন। কারণ ভারতের রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, মতুয়া সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মগুরুরা ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর থেকেই সেখানে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় এই মতুয়াদের অধিকাংশ ভোট বামফ্রন্ট বা তৃণমূল কংগ্রেসে গেলেও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মতুয়া মহাসংঘ বিভক্ত হয়ে যায় এবং ভোটের হিসাবেও পরিবর্তন আসে। যার ফলে মতুয়া অধ্যুষিত দুটি লোকসভা আসন বিজেপির হাতে চলে যায়। তাই এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আসবে বলে আশা করে ছিল রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের মতে, গত ২৭ মার্চ শুরু হওয়া পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মতুয়া ভোটারদের মন জয় করতেই ওড়াকান্দি ভ্রমণের গুরুত্ব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত মোদি-শাহের এত সম্পর্কে পিছে ফেলে আবার বাঙ্গালীত্বেও সরকারি পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায়  এসেছে সত্যি কিন্তু মমতা নিজেই পূর্ব মেদীনিপুরের নন্দীগ্রাম আসনে বিজেপি প্রার্থি শভেন্দু অধিক্রীর কাছে বারশতের কিছু ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। কিন্তু দল হিসাবে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করেছে ৪৪ জন মন্ত্রী সভার সদস্য নিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য। নবেল বিজয়ী বাঙ্গালী অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন দিল্লী বাংলা জয় করতে চায় যা বাস্তবে আর সফলকাম হয়নি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল কারণ মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাকে উপনির্বাচনে জয়ের বৈতরণী পার হতেই হবে। সেই উপনির্বাচনে জয়ের শেষ দিনক্ষণ আগামী ৫ নভেম্বর। যার ইতিমধ্যে চার মাস পার হয়ে গেছে। হাতে বাকি আছে দুই মাস। এই পরিস্তিতি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নানান জল্পনা কল্পনা কে পরবর্তি মুখ্যমন্ত্রী হবে আর তখনই সুখবর পেলেন মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচন কমিশন শুধু মমতার জন্য একটি উপনির্বাচনের জন্যই দিনক্ষণ ধার্য করেছে। মমতা কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন, আর সেই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৩ অক্টোবর। অর্থাৎ ৫ নভেম্বরের ডেডলাইনের অনেক আগেই মমতা বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে যতই তর্কবিতর্ক হোক, ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের জন্য অত্যন্ত স্বস্তির ঘটনা। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক অনিশ্চিত বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব নির্বাচনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন যে, অতি শীঘ্রই অন্তত একটি উপনির্বাচন না হলে পশ্চিমবঙ্গে ‘সাংবিধানিক সংকট’ তৈরি হবে। যদিও এই সাংবিধানিক সংকটের কথা অনেকেই মানতে চান না, এটি হতে পারে দলের ভিতরে সঙ্কট। বিজেপির নেতারা কিছুতেই চাইছিলেন না এখনই উপনির্বাচন হোক। অন্তত পক্ষে ৫ নভেম্বরের আগে। কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশন দলনিরপেক্ষ ভূমিকা সব সময়ই পালন করে থাকে। এবারও তার প্রমাণ মিলল। সংসদীয় গণতন্ত্রের হিসাবে ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয় বেশি। ঠিক সেখানেই প্রয়োজন পড়ে একটি নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল ও কার্যকরী নির্বাচন কমিশনের। প্রকৃতপক্ষে, একটি দেশের গণতন্ত্রের শক্তির অন্যতম প্রধান দিক হলো দেশটির নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা। ভারতে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হলেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেন। নির্বাচন কমিশনের হাতে অবাধ্য বা অমান্যকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের শাস্তির ক্ষমতা, বদলি করে দেওয়ার শক্তি থাকে এবং কমিশন সেটা পালনও করে থাকে।

২০২১ সালে এই কেন্দ্র ছেড়ে মমতা জেদবশত শুভেন্দুর বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে এবং অল্প ব্যবধানে হেরে যান। আর ভবানীপুরে এবার দাঁড়িয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিজেপি প্রার্থীকে যথারীতি বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। অর্থ্যাৎ ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের যা ট্রেন্ড, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১১ থেকেই এখানে অন্তত ২৫ হাজার ভোটে জিতেছে তৃণমূল প্রার্থী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আর প্রার্থী যেহেতু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সুতরাং এখন থেকেই ফলাফল স্পষ্ট দেখছেন অনেকেই। সে যাই হউক না কেন এ উপমহাদেশে ভূ-রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে আফগানিস্থানে তালেবানের ক্ষমতা গ্রহন নিয়ে এবং যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ, তাই সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের উপর কমবেশী হলেও প্রভাব ফেলে থাকে। তাই অসাম্প্রদায়িক শক্তির জয় হয়েছে সেটাই বড় কথা যা বাংলার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি  ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)