আগামী বাজেট অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিতকরনে কি ভূমিকা রাখবে
ড: মিহির কুমার রায়: মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট যা প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলনে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এটি দেশের জিডিপির ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে এটি ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এ হিসেবে আগামী অর্থবছর বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। আসন্ন এ বাজেটে প্রাধান্য পাচ্ছে কর্মসংন্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়া হবে ভোক্তার হাতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেতন-ভাতায় সরকারের ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ ব্যয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এদিকে আমদানি যে গতিতে বাড়ছে, রফতানির গতি সে তুলনায় শ্লথ। এর মধ্যে আবার রেমিট্যান্সে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। এতে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আট মাসের ব্যবধানে ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে রিজার্ভ। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ডলার খরচ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়গুলো সাজানো হয়েছে। আগামী বাজেটে কভিড-১৯ ছাড়াও বিশ্ব মূল্যস্ফীতির প্রভাব কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৯ জুন মহান সংসদে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন যা হবে এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম এবং বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম ও অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট।
আগামী বাজেটের রূপরেখায় চলতি অর্থ বছরের তুলনায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় এ খাতে ব্যয় ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাড়ছে। সে অনুপাতে বাড়ছে না বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ। এক্ষেত্রে চলতি বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরের প্রাক্কলিত বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, চলতি বাজেটে যা রয়েছে ১লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সরকারের দেশী-বিদেশী ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, চলতি বাজেটে যা রয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
আগামী অর্থ বছরে জিডিপির আকার বেড়ে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা হবে বলে আশা করছে সরকার। সে অনুযায়ী প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী অর্থ বছরের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য মাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থ বছরে মোট বিনিয়োগ আসবে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ বলে ধারণা করছে সরকার। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও সরকারি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থবছর এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা আগামী অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকার এডিপি প্রাক্কলন করছেন। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, আগামী বাজেটে দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে। বিশেষ করে নতুন করে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দিতে দেশের আরও ১০০ উপজেলার নাম চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কর্মসূচী চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এ আশঙ্কায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে। তবে ব্যাপকভাবে ডলারের ব্যবহার কমাতে অপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিদ্যুত, সার ও এলএনজিতে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে আগামী বাজেটে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান সক্ষমতার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগামী অর্থ বছরে মোট আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে মোট আয় বাড়ছে ১১ শতাংশ। মোট আয়ের মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থ বছর এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া আছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ১২ শতাংশ বাড়ছে। এছাড়া আগামী বাজেটে মোট আয়ের মধ্যে নন-এনবিআর থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত রাজস্ব ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে ২৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রাথমিক প্রাক্কলন করেছে মন্ত্রণালয়। তবে চূড়ান্ত বাজেটে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সার, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে এবং তা সমন্বয় করা না হলে বাজেটে এই ব্যয় আরও বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে কোন উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়। দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা দিয়ে ভর্তুকি দেয়া হয়। তবে আইএমএফ মতে, ভর্তুকির টাকা কমানো গেলে সরকার তা অন্য উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে পারে। তবে সরকার বলছে, ভর্তুকির পরিমাণ না বাড়ালে কৃষি পণ্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে কৃষি, রফতানিসহ বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে ৪৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ। বাজেটে এটি দেখানো হয়েছে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ হিসেবে। গত অর্থ বছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০- এর বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় গত ৩ নভেম্বর দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার এবং এবার সরকার চাচ্ছে ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও সারের দাম বাড়াতে। সরকারের যুক্তি হলো, এই তিন পণ্যের দাম সমন্বয় বা বৃদ্ধি করা না হলে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, যার পরিমাণ হতে পারে জিডিপির ২ শতাংশ। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছর বিদ্যুত খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, সারে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে, আর এলএনজিতে ভর্তুকি প্রয়োজন হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত কৃষকদের ওপর বাড়তি চাপের কথা বিবেচনা করে সারের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার, তারপরও চলতি অর্থবছরই আরও বাড়তি ৪৫ হাজার কোটি টাকা লাগার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্মসংস্থান বাড়াতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। এতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। ফলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে বরং করের আওতা বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মহামারী থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। কর বাড়াতে হলে আগে হয়রানি বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ৪২তম পরামর্শক সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানিমুক্ত থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। আমদানিকৃত কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আয়কর ও মূসকের আওতা বাড়ানো, সব রফতানি খাতকে সমান সুবিধা দেয়া, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি জোরদার করা, টার্নওভার কর ফিরিয়ে আনা, বিদ্যমান ভ্যাট আইন সংশোধন করার প্রস্তাবও এসেছে।
বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। করোনা অভিঘাতের মধ্যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং আগামীতে এধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষমতা অর্জনে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে। বাংলাদেশ ফার্স্ট রিকভারি অ্যান্ড রেজিল্যান্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) সিরিজের আওতায় এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সিরিজে দুই কিস্তিতে মোট ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা। চলতি ২০২১-২২ এবং আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সহায়তা হিসেবে এ অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আর্থিক উদ্দীপনায় সহায়তা এবং আগামীর ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ডিপিসি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের এ ঋণে সুদের হার ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ হিসেবে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ যুক্ত হবে। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হলো প্রতি বছর দেখা যায় প্রথমে বাজেটের যে আকার ধরা হয় সংশোধিত বাজেটে তা অনেকটা কমানো হয়। তারপরও প্রকৃত ব্যয় সংশোধিত বাজেটের চেয়েও কম হয়। কাজেই বাজেটের যে আকার ধরা হয় সেটা অর্থহীন। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু প্রণোদনা বাড়ানো ও ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বাড়ানোটা এড়ানো যেত। তবে সরকার বেশ কিছু জনবল নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে, আবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট রয়েছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই বড় ভর্তুকির চাপে পড়তে হয়েছে সরকারকে। আগামী অর্থ বছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব থাকছে।
আগামী বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাড়তি ভর্তুকির চাহিদা। চলতি বাজেটে শুধু ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে সেটা বেড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতামত হলো আসন্ন বাজেটের আর্থিক কাঠামো প্রস্তুত করা অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় কষ্টকর। কারণ ব্যয়ের বড় দুটি অংশ যাবে ভর্তুকি প্রণোদনা ও সুদ পরিশোধে। এ দুই খাতে প্রায় ৫৭ শতাংশ ব্যয় হবে। এর সঙ্গে বেতন-ভাতাসহ সরকারের অন্যান্য পরিচালন ব্যয় যোগ করলে সেটা ৯০ শতাংশের ওপরে চলে যাবে। তাই উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম করার জন্য অর্থ খুব কমই থাকবে। এটিই এবারের বাজেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
লেখক: উন্নয়ন গবেষক ও অর্থনীতিবিদ।