আব্দুল মোমেন

আমজনতার জন্য কোনটি জরুরী: গুড গভর্নেন্স না সো-কল্ড ডেমোক্রেসি

আব্দুল মোমেন: ২০০১ সালে ঢাকা বিদ্যালয়ের এস এম হলে উঠার প্রথম দিনেই হলের প্রেসিডেন্ট টগর ভাই ও বুয়েটের মুকিত এর টেন্ডারবাজীর কারণে সংঘর্ষ হয় যার ফলে ক্রসফায়ারে মেধাবী ছাত্রী সনি নিহত হন- যার কারনে শঙ্কার মধ্য দিয়ে প্রথম রাত অতিবাহিত হয়।

মতের অমিল থাকায়, পরীক্ষার আগের রাতে ছাত্রদলের ক্যাডাররা আবাসিক রুম থেকে বের করে দেন। মিছিলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যোগদান করতে হতো। মিছিল শেষে ক্যাফেটারিয়াতে লাঞ্চ করালেও বিল দেওয়া হতো না। তা দেখে অনেক খারাপ লাগত।

স্বচক্ষে দেখেছি বিসিএস পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে। নির্দিষ্ট মহলের দেওয়া লিস্টের লোকজনকে কোনরকম পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হতো।

ফালুর নির্বাচনে আর্মি ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভোট চুরি হতে দেখেছি। গিয়াস আল মামুন ও গংদের দৌরাত্ম দেখেছি। পরবর্তীতে সরকার বদল হলেও দুইটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হতে দেখেছি।

ছাত্রলীগ ক্যাডার কর্তৃক অভিজিতের হত্যাকান্ড সম্পর্কে সবারই জানা। ঠিকাদারি করতে গিয়ে সম্রাট ও জি কে শামীমের টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট বাণিজ্য খুব কাছ থেকে দেখেছি। বর্তমান সংকটে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে, সরকারের পরিবর্তন হলেই দেশ পালটায়ে যাবে!! আসলে কি তাই হবে?

আসলে সত্য কথা হচ্ছে, BNP ও BAL হচ্ছে, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ অর্থাৎ একটা চোর আরেকটা ডাকাত!!

বড়দের নাম মুখে আনতে হয় না...এজন্য মাঝারি কিছু লোকজনের রেফারেন্স দিলাম।

এবার আসুন মূল কথায়-

পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি সম্পদ হচ্ছে, মানবসম্পদ। এটা সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দিয়েছেন। সেই সাথে দিয়েছেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত ভূখণ্ড যেটা বিশ্বের অনেক স্থানেই দেখতে পাবেন না।

এতকিছুর পরেও কেন আমরা বিদেশের মাটিতে গোলামী করি?

এর একমাত্র কারণ গুড গভর্নেন্সের অভাব।

গোটা বিশ্বকে আজ অর্থনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে চায়না ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সত্তরের দশকে চায়নাতে দুর্ভিক্ষে কয়েক মিলিয়ন মানুষ মারা যায় খাদ্যের অভাবে। সেখান থেকে তারা ইউটার্ন করেন এবং তাদের বর্তমান অবস্থান কোথায় তা দেখতেই পাচ্ছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ যথাক্রমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেলেও তাদের অবস্থান ও আমাদের অবস্থান কোথায়- তা গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন।

অনেকেই বলেন, দুবাইতে তেল আছে এজন্য তারা ধনী! আসলে কথাটা কিন্তু সত্য নয়। তাদের মূল ইনকাম কোথা থেকে আসে?  গুগলে লিখে সার্চ দেন- পেয়ে যাবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকাল লোকজন মাত্র ১০ শতাংশ। দেশটি পরিচালিত হয় বিদেশি মানব সম্পদ দ্বারা।

চায়না ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক লক্ষ কিলোমিটার ড্রাইভ করেছি।

বিশ্বাস করুন, কোনদিনও দেখি নাই গাড়ির বহর নিয়ে কাউকে হুইসেল বাজিয়ে রাস্তায় চলতে। যা আমাদের দেশে হর-হামেশাই হয়ে থাকে। এটা ভালো বিনিয়োগকারীরা পজেটিভলি নেন না। ফলে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেন এবং অধিকতর গতিশীল কোনো দেশে মাইগ্রেট করেন।

এবার এক ঝলকে দেখে নেই, কেন বিনিয়োগকারীরা আমাদের মরুদ্যানে না গিয়ে দুবাইয়ের মরুভূমিতে আসেন?

এর অন্যতম কারণ, এখানে মূলত ওয়ান স্টপ বিজনেস সার্ভিস পাওয়া যায়।

অর্থাৎ আপনি এক ঘন্টার মধ্যে ১০০% মালিকানায় বিজনেস লাইসেন্স, দুদিনের মধ্যে মেডিকেল ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট, তিনদিনের মধ্যে স্টিকারযুক্ত রেসিডেন্স ভিসা, পাঁচ দিনের মধ্যে এমিরেটস আইডি, সাত দিনের মধ্যে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট করতে পারবেন এক আমব্রেলার নিচে এবং কোনো রকমের ঘুষ ও টিপস ছাড়াই!

এছাড়া এখানে আছে দুবাই কোর্ট, ভেইকল টেস্টিং সেন্টার, নোটারি পাবলিক, আমের ও তহসিল অফিস।

সেই সাথে পাবেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ওজু ও নামাজের স্থান, চকমকা ও শুকনো টয়লেট, ফ্রি পার্কিং, সেলফ সার্ভিস বুথ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মহিলাদের আলাদা প্রিভিলেজ।

শিশুদের জন্য খেলার স্থান এবং ক্যাফে।

রিসেপশন ও কাস্টমার কেয়ারে পাবেন, ইউনিফর্ম পরিহিত দক্ষ, স্মার্ট ও অত্যন্ত বিনয়ী অফিসার।

উক্ত অফিসের চতুর্পাশে আছে কয়েক হাজার ইন্ডাস্ট্রি, ওয়্যারহাউস, ড্রাইভিং সেন্টার, রিসোর্ট, আবাসিক ভবন ও ডুপ্লেক্স বাড়ি।

এই জায়গাটা কিন্তু দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে একেবারে মরুভূমির মাঝখানে।

চমৎকার রাস্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন দুবাইয়ের শাসক।

যার ফলে সারা বিশ্বের উদ্যোক্তারা আসেন এখানে বিনিয়োগ করতে।

বাংলাদেশে অনাবাদি এবং অনেক পরিত্যক্ত জায়গা আছে, যেখানে আমাদের নীতি নির্ধারকরা চাইলে আরো ২৫ বছর আগে এরকম ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করতে পারতেন। ফলে আমরা ২৫ বছর এগিয়ে থাকতাম।

আজ দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, মানুষের বেকারত্ব বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি কমছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে।

হ্যাঁ, বলতে পারেন রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে এটা হয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- দুবাইতে কেন এসব প্রবলেম হচ্ছে না?

এখানে দেরহামের দাম কমে নাই অর্থাৎ ডলারের দাম বাড়ে নাই।

সুতরাং সস্তা কথা বলে লাভ নাই।

দুবাই যদি বিদেশি ম্যানপাওয়ার দিয়ে পয়সা কামিয়ে গ্লোবালি অনৈতিকভাবে লিড দিতে পারে তাহলে আমাদেরও পারা উচিত।

কারণ, আমাদের নিজস্ব জনশক্তি আছে।

মনে রাখবেন, চায়না এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের মতো সো কল্ড ডেমোক্রেসি নাই কিন্তু গুড গভর্নেন্স আছে।

একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে:

শুধুমাত্র দুবাইতে যে পরিমাণ গাড়ি চলে- তা সারা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।

দক্ষ CEO এর তত্ত্বাবধানে, পরিচালিত হয় বলে এখানে মিস ম্যানেজমেন্ট হয় না।

তদ্রুপ, বাংলাদেশে লোক সংখ্যা অনেক বেশি হলেও সেটাকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারলে, এই জনগণ অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হবে।

লেখক: দুবাই প্রবাসী উদ্যোক্তা ও বিজনেস এ্যাডভাইজার।


Comment As:

Comment (0)