একান্ত আলোচনায় বিআইসিএমএ’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার

পুঁজিবাজারের সকল পক্ষকে বিনিয়োগ শিক্ষার আওতায় আনতে নিরলস কাজ করছে বিআইসিএম

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে বিনিয়োগ শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) নিরলস কাজ করে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার।

তিনি বলেন, একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজারের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী। আর তাই বিনিয়োগকারীসহ বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি আমরা। এলক্ষ্যে সরকারের সাথে একাত্ন হয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারলে অচিরেই দেশের পুঁজিবাজারে একটি শিক্ষিত ও সচেতন জেনারেশন উপহার দিতে পারবো। আর এটি হলে পুঁজিবাজারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না বলে আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এমন সম্ভাবনার কথা বলছিলেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিনিয়োগবার্তা সম্পাদক শামীম আল মাসুদ। আর সহযোগিতায় ছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টালটির ম্যানেজার (মার্কেটিং এন্ড কমিউনিকেশন)  দেওয়ান ফজলে এলাহী।

প্রানবন্ত আলোচনায় ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, দেশের উন্নয়নের সাথে প্রাইভেট সেক্টরেরও ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন। প্রাইভেট সেক্টরের ডে্ভেলপমেন্টের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যে অর্থসংস্থান সেটা মূলত আসবে পুঁজিবাজার থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়, পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন না নিয়ে ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা বেশি। একটি কথা সবারই বুঝা উচিত যে, সরকারি-বেসরকারি প্রজেক্টগুলোর অর্থায়ন হতে হয় দীর্ঘমেয়াদী। ব্যাংকের যে অর্থায়ন সেটার টাইমিং আর প্রকল্পের টাইমিং-একসাথে ম্যাচ করা কঠিন হয়ে যায়। আর এ কারণে ব্যাংকগুলোও সমস্যায় পড়ে যায়। তাই দীর্ঘমেয়াদী পুঁজি যদি দরকার হয়, তবে ক্যাপিটাল মার্কেটের কোনো বিকল্প নাই।

এখন প্রশ্ন আসে- দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উপর আমরা কতটা ডিপেন্ড করতে পারি? যদি আমাদের একটা ভালো-ডিপেন্ডেবল পুঁজিবাজার আগেই থাকতো তাহলে কিন্তু ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য আমরা তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। তাহলে পদ্মা সেতু করার সময় আমাদের আরও সুবিধা হতো। তখনতো এ ধরনের প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য আমরা একটা বন্ড ইস্যু করতে পারি নাই! কেন পারি নাই? কারন, আমাদের পুঁজিবাজারে বন্ডের মত প্রোডাক্ট অনুপস্থিত ছিল। বন্ড কিন্তু কমপারেটিভলি কম ঝুকিপূর্ন্। দীর্ঘমেয়াদী অর্থ সংস্থানের জন্য বন্ড একটা ভালো সোর্স। বন্ডের মাধ্যমে ফাইন্যান্সিং অত্যন্ত ভালো একটি পদ্ধতি। কিন্তু সেই জিনিসতো আমরা পারলাম না! কেন পারলাম না? কারণ, আমাদের পুঁজিবাজারটা এখন পর্যন্ত ইক্যুইটিনির্ভর। সুতরাং আমাদের পুঁজিবাজারের প্রোডাক্টগুলোর ডাইভারসিটি বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, এত ইক্যুইটিনির্ভর প্রোডাক্ট হলে চলবে না। আমাদের পুঁজিবাজারে রিটেইল ইনভেস্টর বেশি, আমাদের মতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। সুতরাং এ জন্য দেখা যায় যে, বিভিন্ন কারনে মার্কেটের আপস এন্ড ডাউন যখন হয়- রিটেইল ইনভেস্টররা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। আর যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বেশি থাকবে তখন তারা চাপটা সামলে নিতে পারে সহজেই। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাতো লং টার্মের জন্য ইনভেস্ট করে। সুতরাং আপস এন্ড ডাউনের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেটাতে তারা ইফেক্টেড কম হয়। এই জায়গাগুলোকে আমাদের এমফাসাইজ করতে হবে। একটা ভাল, সাসটেইনেবল পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদেরকে আরও কাজ করতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারে আস্থার যে ঘাটতিটা আছে- সেটা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যা কিছু করা প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে। এ জন্য আমাদের দরকার হলো পুঁজিবাজারের সাথে সম্পর্কিত যে পক্ষগুলো আছে, তাদেরকে সত্যিকারের এডুকেশনটা দিতে হবে এবং এটার কোন বিকল্প নেই।

বিআইসএম’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বলেন, তাহলে এখন প্রশ্ন আসে- পুঁজিবাজারের সাথে সম্পর্কিত পক্ষগুলো কারা?

স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অবশ্যই আছে বিনিয়োগকারীরা। আবার বিনিয়োগকারীর মধ্যে আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও রিটেইল ইনভেস্টর। আবার এই ট্রেডগুলো যারা এক্সিকিউট করে তাদের একটা পক্ষ আছে, একইসঙ্গে এই ট্রেডগুলো যারা ফেসিলিটেট করে সেই পক্ষগুলো আছে, ব্রোকার হাউজগুলো আছে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আছে, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো আছে, মিউচুয়াল ফান্ডের গ্রুপ আছে। এসব মিলিয়েই আমাদের পুঁজিবাজার। তাদের প্রত্যেকটা পক্ষ যেন যার যার জায়গা থেকে কাজগুলো যেন সঠিকভাবে করতে পারে, তার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় শিক্ষা। আর তাই তাদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারের অর্থায়নে চলে। আর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এটার তদারকি করে। বিআইসিএম যেহেতু কোম্পানি আইন দ্বারা গঠিত সুতরাং এটার একটা বোর্ড্ আছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন বিএসইসির সম্মানিত চেয়ারম্যান। আর বিআইসিএমের একাডেমিক কার্যক্রমগুলো মনিটর হয় এবটি একাডেমিক কমিটির তত্বাবধানে। দি হেড অব দ্যাট একাডেমিক কমিটি হলেন বিএসইসির একজন কমিশনার। এই লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছে যে, একটা পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে পক্ষগুলো আছে সেই বিভিন্ন পক্ষের জন্য প্রয়োজনীয় যে শিক্ষাটা সেই শিক্ষাটা প্রদান করার জন্য যা যা করণীয় সেটা তারা করবে।

তাহলে কি জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম তারা প্রোভাইড করছে?

যেমন- জন্মলগ্ন থেকেই বিআইসিএম ফ্রি ইনভেস্টরস এডুকেশন প্রোগ্রাম শুরু করেছে, যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। শুরু থেকে এটা সপ্তাহে ২দিন চলতো- সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এখনও বিভিন্নভাবে আমরা এ প্রোগ্রামটি চালিয়ে যাচ্ছি। এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের আমরা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করি ও সার্টিফিকেট দেই। এই ফ্রি ইনভেস্টরস এডুকেশন প্রোগ্রামের বাইরেও আমরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষদেরকে অনেক সাবসিডাইজ রেটে বা বিনামূল্যে ট্রেনিং দিয়ে থকি। যেমন- আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্যদেরকে ফিন্যান্সিয়াল জার্নালিজমের ওপর একটা তিন মাসব্যাপি ট্রেনিং দিয়েছি ফ্রি অব কস্ট। জার্নালিস্টরাতো একটা বড় অংশীদারি গ্রুপ। যারা তাদের লেখনির মাধ্যমে সবাইকে পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানাবে, পৃথিবীকে জানাবে। সুতরাং তাদেরতো সেই ক্যাপিটাল মার্কেটের শিক্ষাটা থাকা লাগবে, আমরা সেটা করছি। এছাড়া আমরা বিভিন্ন সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম করে আসছি। এই সার্টিফিকেট প্রোগ্রামগুলো হলো নীড বেইজড- আমাদের মার্কেটের নীড বেইজড, যেখানে যেখানে নলেজ গ্যাপ আছে সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করে আমরা সেটি করে আসছি। যেমন- ‘সুকুক’ যখন আসলো, আমরা সুকুকের ওপর ট্রেনিং প্রোভাইড করেছি, যখন বন্ড আসলো আমরা বন্ডের ওপর প্রোভাইড করেছি, মিউচুয়াল ফান্ড আসলো আমরা তাও করে আসছি। মোটকথা যখন যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে সেটার ওপরই আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। এছাড়াও বেসিক কিছু ইস্যুতো আছেই মার্কেটে- ইক্যুইটি ভ্যালুয়েশন, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, টেকনিক্যাল এনালাইসিস, ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস, সিকিউরিটিজ বিষয়ক আইন-কানুন, কমপ্লাইনেন্স এন্ড সুপারভিশন অব ক্যাপিটাল মার্কেট, করপোরেট গভার্নেন্স, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন মানি মার্কেট, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন ক্যাপিটাল মার্কেট, ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট এনালাইসিস, ফিনটেকসহ অনেক বিষয়ের ওপর আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এছাড়া আপকামিং যত ইস্যু আমাদের মার্কেটের জন্য দরকার যেমন- সামনে আমরা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এর ওপর ট্রেনিং শুরু করবো, এক্সচেঞ্জ ক্রেডিট ফান্ড, ইটিএফ এর ওপর করবো, আমরা গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজের ওপর করবো। মোটকথা মার্কেটের জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা সবকিছুই করবো। তার মানে হলো মার্কেটের নলেজ নীডটাকে আইডেন্টিফাই করে আমরা কোর্স করাচ্ছি। এছাড়া আমরা শীঘ্রই একটা ট্রেনিং নীড এ্যানালাইসিস সার্ভে করবো। আমরা সেই অনুযায়ী প্রোগ্রাম ডিভাইস করবো।

ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, আমাদের একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ক্যাপিটাল মার্কেট (পিজিডিসিএম) নামে একটা ডিপ্লোমা কোর্স আছে যেটা ৯ মাসব্যাপি ক্লাস চলে। সেখানে ক্যাপিটাল মার্কেটের সাথে সম্পর্কিত ইন্সটিটিউশনগুলোতে কর্মরত এবং এর বাইরেও এ মার্কেটের প্রতি যারা আগ্রহী তারা এই কোর্সটি করছেন। এটি আগে ছিল ১ বছরের এখন এটি তারা তা ৯ মাসেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের এখানে ২ বছর মেয়াদী একটা খুব হাই গ্রেডের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। যেটা আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধিভূক্তির মাধ্যমে প্রোভাইড করছি। সেটা হলো- মাস্টার্স অব এ্যাপ্লাইড ফাইন্যান্স এন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট। এটা ‍খুবই উন্নতমানের সিলেবাস দিয়ে করানো হচ্ছে যেটা ইউনিভার্সিটিতে রিগোরাস প্রসেস অতিক্রম করে এটার এ্যাপ্রুভালটা এসেছে- আমরা সেটা চালিয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে আমরা গবেষণার কাজ করছি এবং আমরা রেগুলার রিসার্স সেমিনারের আয়োজন করছি। আমরা সামনে আরও নতুন কিছু করার জন্য রিসার্স করতে যাচ্ছি। এছাড়া আমাদের একটা জার্নাল আছে- একাডেমিক জার্নাল। আমরা অলরেডি গতবছর ডিসেম্বরে প্রথম সংখ্যা ‘বার্থ সেন্টিনারি অব বঙ্গবন্ধু এবং গোল্ডেন জুবিলি অব বাংলাদেশ’ -এইটাকে স্মরণ করে ফার্স্ট ইস্যু চালু করেছি। আমরা রিসার্সবেইজড একটা গবেষণা করেও এর মধ্যে প্রকাশ করেছি এবং আরও কিছু গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। গত বছর আমরা একটা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স করেছি। কোভিডের ভিতরে ‘সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং এবং ইনভেস্টমেন্টের’ ওপর খুব ভাল ও উন্নতমানের একটা অনুষ্ঠান করেছি, যেখানে আমাদের ৪৪টি বাইরের অর্গানাইজেশন থেকে রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল, আগামী বছরও আমাদের এ ধরনের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা লাগবে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলবো- আপনারা আসুন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে  বিনিয়োগ বিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো গ্রহন করে তবেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিন। এতে আপনাদের পুঁজি যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি দক্ষতার সাথে নিজস্ব বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করতে পারবেন। সকলের  সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষিত-সচেতন বিনিয়োগকারীর সংমিশ্রণে আমরা একটি  বিনিয়োগবান্ধব ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে পারবো বলে আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)