বিনিয়োগবার্তা সম্পাদক

অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান সূদৃঢ করতে নীতিসহায়তা জরুরি

দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। সম্প্রতি এনবিআরের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বিএমবিএ।

পুঁজিবাজারকে গতিশীল করে সার্বিক অর্থনীতিতে এ বাজারের অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে ৯টি বিষয় বিবেচনার জন্য এনবিআরকে প্রস্তাব দেয়া হয়।

এর মধ্যে ডিভিডেন্ডের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি করপোরেট কর পরিশোধের পর ডিভিডেন্ড প্রদান করে। সেই ডিভিডেন্ড থেকে আবার উচ্চহারে কর কর্তন দ্বৈত করের সামিল। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিভিডেন্ড গ্রহণের প্রতি অনীহা। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ডিভিডেন্ডের কর প্রত্যাহার করা জরুরি।

এছড়া তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের পার্থক্য বাড়াতে হবে। বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়, কর কমাতে বলছি না, কেবল তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হারের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করছি।

তাহলে বৃহৎ বা ভালো প্রতিষ্ঠানসমূহ তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হবে এবং বাজারের আকৃতি গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে দশমিক শতাংশ হারের ব্যবধান উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করতে পারছে না।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো বিএমবিএর চিঠিতে ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিভিন্ন প্রকার প্রতিকূলতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এবিষয়ে কোনো কোনো সময় আংশিক / খন্ড পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাতে সাময়িক কিছুটা ইতিবাচক অবস্থা দেখা গেলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার ধারাবাহিক নিম্নধারায় চলে যায় এবং হতাশার তৈরি হয়। এমন নেতিবাচক অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্ণর দায়িত্ব গ্রহণ করে দ্রুত গতিতে কিছু পুরাতন সমস্যার সমাধান করা হয়, যার ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আশার সঞ্চার হয় এবং ধীরেধীরে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ের মধ্যে গভর্ণর যে উদ্যোগ ও সমর্থন পুঁজিবাজারের জন্য দিয়েছেন তার জন্য বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।

এসময় চিঠিতে খন্ডিত আকারের বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেওয়ার চেয়ে ৬ টি বিষয়াদি তুলে ধরে সেগুলো সমাধানের সুপারিশ করেছে বিএমবিএ।

সুপাশিগুলো হলো: সকল প্রকার বন্ড ও ডিবেঞ্চার পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা, মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা, পুঁজিবাজার বিনিয়োগে নিজ সাবসিডিয়ারিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে single borrower exposure relax করা, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিলে ২% সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হয়, অথচ অন্য সকল ঋণের ক্ষেত্রে ১% সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হয়। তাই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হয় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি ধরা হয়। তাই এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা পূর্বক অন্যান্য ঋণের মতো সাধারণ সঞ্চিতি ১% ধরা হলে বাজারে অর্থের যোগান বাড়তে সাহায্য করবে। এছাড়া সমন্বিত পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসাব (Consolidated Capital Market Exposure) reporting স্থগিত করা প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের আকার বৃদ্ধিতে এটি প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে বিএমবিএ। আর ভালো প্রতিষ্ঠান বা যারা ভালো ব্যবসা করেন তারা সহজে যেকোন পরিমান ঋণ পায়, তাই তাহারা জামানত দিয়ে সহজেই ঋণ পেয়ে যায় বলে পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করেনা। বড়/ ভালো মানের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত না হলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে না। তাই তাদের ঋণ/মূলধন/ব্যবসার আকৃতির উপর তালিকাভুক্তির একটি কাঠামো নির্ধারণ করা যেতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব বিষয়াদি সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন মাত্রা পেতে পারে, যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক গতি আরও তরান্বিত করা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে। তাই বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবেই বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আর এগুলো বাস্তবায়ণ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়বে বলেও মনে করেন তারা।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//

 


Comment As:

Comment (0)