শেয়ারবাজারে মন্দা কাটাতে বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন
বিগত বছরটিতে ধারাবাহিক দরপতনের বৃত্তে আটকা পড়েছিল দেশের শেয়ারবাজার। সেই সঙ্গে লেনদেনেও মারাত্নক খরা দেখা দিয়েছে। বছরের শেষ দিকে পুঁজিবাজারে লেনদেন ২০০ কোটির ঘরে নেমে গিয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য বড় রকমের অশনি সংকেত!
বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেরই শেয়ারবাজার শক্তিশালী। যে দেশের শেয়ারবাজার দূর্বল সে দেশ কখনোই উন্নতির শিখরে উঠে দাড়াতে পারে না। মোটকথা শেয়ারবাজারকে পিছনে রেখে উন্নত দেশ গঠন করা সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় অনেক দেশের জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান ৪০-৫০ শতাংশ, কখনোবা তারও বেশি। আর আমাদের জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান অনেক কম। কখনো কখনো এই অবদান কিছুটা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা স্থায়ী হয় না। বিভিন্ন কারনে কিছুদিন পরই তা আবার মন্দাবস্থায নেমে আসে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোে দৌড়ঝাঁপ করলেও আমলাতান্ত্রিক বা নীতিনির্ধারনী মহলের উদাসীনতার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে তারা। তাই শেয়ারবাজারের চলমান মন্দা কাটানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে। শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
নতুন বছরে যাতে মন্দা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারে পুঁজিবাজার, সে বিষয়ে আর দেরি না করে এখনই পদক্ষেপ গ্রহন দরকার। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে না পারলে চলমান সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এতে শুধু পুঁজিবাজার নয়, গোটা অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে!
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোরও এ ক্ষেত্রে দায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা ঠিকমতো ব্যবসা পরিচালনা করছে কি না, সেখানেও কঠোর দায়বদ্ধতা তৈরি হওয়া দরকার। এটি নিশ্চিত করতে পারলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের উৎসাহ পাবেন।
এরসঙ্গে বিনিয়োগসংক্রান্ত শিক্ষারও প্রসার জরুরি। তৃনমূলে বিনিয়োগ শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতে দক্ষ লোকবল সৃষ্টি করা যেতে পারে। সেজন্য জাতীয় পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএসইসি সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং সকলেই এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। ফলে শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এটি অত্যন্ত ভাল একটি উদ্যেগ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তবে একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত আর সেটি হলো- দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে ঠিক এই সময়টাতে শেয়ারবাজার কেন নীচের দিকে যাচ্ছে! শেয়ারবাজারে আসলে কি তারল্য সংকট, না কি কৃত্রিম কোনো বিষয়াদি রয়েছে- তাও খুঁজে বের করা উচিত!
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//