মো: ছায়েদুর রহমান ​​​​​​​

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে আলোচনায় বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট

ট্যাক্স গ্যাপ বাড়ালেই বড় কোম্পানিগুলো তালিকাভূক্ত হতে আগ্রহী হবে: মো: ছায়েদুর রহমান ​​​​​​​

লিস্টেড ও ননলিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্স গ্যাপ মাত্র ৭ শতাংশ, সেটাকে অন্তত ১৫ শতাংশ করতে পারলে ননলিস্টেড কোম্পানোগুলো পুঁজিবাজারে লিস্টেড হওয়ার জন্য আগ্রহী হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো: ছায়েদুর রহমান। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) দেশের পুঁজিবাজারে নতুন মাত্রা যোগ করবে করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট মো: ছায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, বিকল্প বিনিয়োগের প্লাটফর্ম হিসেবে ইতোমধ্যে ডিএসইতে এটিবি চালু হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও বন্ড লেনদেনের মাধ্যমে নতুন প্লাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছে। অচিরেই আরও কিছু কোম্পানি নতুন এই বোর্ডে যুক্ত হবে। আরও কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান এই প্লাটফর্মে নিয়মিত লেনদেন শুরু করলেই এতে চঞ্চলতা সৃষ্টি হবে। আর এভাবেই নতুন এই বোর্ডটি বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সম্প্রতি রাজধানীর দিলকুশায় নিজ কার্যালয়ে বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ছায়েদুর রহমান।

ধারাবাহিক আলোচনায় বিনিয়োগবার্তাকে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাজার এখন যে জায়গায় আছে সেটি থাকবে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে বিভিন্ন রকম আলোচনা-সমালোচনা মানুষের মধ্যে কিছুট দ্বিধা-দ্বন্দ তৈরি করছে। আসলে নতুন বছরে এটি কেটে যাবে, নতুন বছরে এগুলো থাকবে না। নতুন বছরে বাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসা শুরু হবে। এরআগে এসএমই মার্কেট চালূ হয়েছে। সেখান থেকে গতবছর বিনিয়োগকারীরা ভাল রিটার্ণ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে এটিবি প্লাটফর্ম চালু হয়েছে। কিছিুদিন গেলে এটিও প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট বলেন, তবে বাজারকে দীর্ঘমেয়াদী গতিশীল করার জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু করণীয় আছে। আমরা এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। মেইনলি আমরা চাচ্ছি- বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলো যেন ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজারের বাইরে থাকে। একইসঙ্গে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি যেন এক্সপোজারের বাইরে থাকে। ইন্টারমেডিয়েটারি যারা আছে তাদেরতো নিজস্ব কোনো অর্থের সোর্স নাই। তাদের ব্যাংক থেকে ইজি ফাইন্যান্সিংয়ের সুযোগ করে দিতে হবে, তাহলে বাজারে অর্থের যোগান বাড়বে। অন্যদিকে আমরা ট্যাক্স পলিসির ব্যাপারেও বলছি। লভ্যাংশের উপরে সর্বোচ্চ হারে ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে, আবার সেই লভ্যাংশ যখন তারা ইনভেস্ট করে তখনও তারা সারচার্জ নিচ্ছে! এভাবে মাল্টিপল ট্যাক্স নিলে কেউ কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করবে না। আর আর্থিক খাতে যদি বিনিয়োগকারী তৈরি না হয়, তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না। এই বিষয়টাকে বিবেচনায় নিয়ে ট্যাক্স পলিসি করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে আলাদা প্রস্তাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, লিস্টেড এবং ননলিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্স রেট পার্থক্য আছে কেবল ৭ দশমিক ৫ পারসেন্ট। এটি অন্তত ১৫ পার্সেন্ট করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। তাতে করে সরকারের ট্যাক্স বাড়বে, কমবে না।

বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট জানান, লিস্টেড এবং ননলিস্টেড কোম্পানি ট্যাক্স গ্যাপ মাত্র ৭ শতাংশ, সেটাকে ১৫ শতাংশ করতে হবে। আর তাহলেই ননলিস্টেড কোম্পানোগুলো লিস্টেড হওয়ার জন্য আগ্রহী হবে।

বিষয়গুলো চিন্তা করলে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে একটা সা্সটেইনেবল পর্যায়ে থাকবে বলে আমরা মনে করি।

পুঁজিবাজারের নতুন নতুন প্রোডাক্টগুলোর ব্র্যান্ডিং বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে যদি পলিসিগুলো ফিক্সআপ করে দেওয়া হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারাই ব্র্যান্ডিং করবে। স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও ব্র্যান্ডিং হবে, মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকেও হবে, গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে হবে- স্বাভাবিকভাবেই মার্কেটিংগুলো হবে।

বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি ভালমানের বাজারের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারের কোনো বিকল্প নাই। তাই আমরা মনে করি বিনিয়োগ শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় রূপান্তর করা দরকার। স্কুল-কলেজ লেভেল থেকেই বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন। শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য নয়, বিনিয়োগ শিক্ষাটা হলো জীবনের আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য। আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য জীবনের সবপর্যায়েই বিনিয়োগ শিক্ষাটা কাজ করে থাকে। সে জন্য আমি মনে করি এটাকে একদম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিনত করা দরকার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে বিনিয়োগ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলে, স্কুল কলেজ থেকেই ছেলে-মেয়েরা বিনিয়োগ শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সেটা আমাদের সার্বিক অর্থনীতিতে কিন্তু একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এটিবি মার্কেট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সকলেই জানি যে নতুন বছরের শুরুতেই এটিবি চালু হয়েছে। এটি একটা নতুন প্লাটফর্ম, এখানে কিছু শেয়ার বা বন্ড লেনদেন হওয়ার সুযোগ হবে। যেসব কোম্পানির শেয়ার লিস্টেড হতে পারছে না, সেগুলো এখানে লিস্টেড হলে তার জরুরী প্রয়োজনে অর্থের যোগান বাড়ানোর সুযোগ হবে, শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সে অর্থের যোগান পেতে পারে। এক্ষেত্রে মূল মার্কেটের সাথে কনফ্লিক্ট হওয়ার কিছু নাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে দেখা যাবে বায়ার এব্ং সেলারের মধ্যে কমিউনিকেশন করে আন্ডারস্ট্র্যান্ডিং করে এখানে বেশির ভাগ লেনদেন হবে।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)