৪এ ইয়ার্ণ ডাইং রাকিব ভাই

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে টিম গ্রুপের এমডি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব

বিশ্বমানের জ্যাকেট উৎপাদন ও রফতানিতে নিজেদের অবস্থান আরও সূদৃঢ করতে চায় ৪এ ইয়ার্ণ ডায়িং

দেশের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় একটি নাম টিম গ্রুপ। বস্ত্র খাতে এই গ্রুপের সহযোগী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৪এ ইয়ার্ণ ডায়িং। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) প্লাটিনাম সনদ পাওয়া এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। আন্তর্জাতিক মানের জ্যাকেট তৈরি ও রফতানিতে এগিয়ে রয়েছে ৪এ ডায়িং। আগামীতে এ অবস্থান আরও সূদৃঢ করতে চায় কোম্পানিটি। সাভারের বাইপাইলে অবস্থিত কোম্পানিটিতে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা শাখা মিলিয়ে কাজ করছেন ৬৮৩৩ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ৬৯ শতাংশ।’

সম্প্রতি নিজস্ব কারখানা প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ৪এ ইয়ার্ণ ডায়িংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা টেকসই পণ্যে বিশ্বাস করি। একটা প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধ কাজ অনেক এগিয়ে দেয়। আমরা সমষ্টিগতভাবে কাজ করে থাকি। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, একটা কারখানাকে সবুজায়ন করা তার দায়িত্ব, তাহলে তার রাতে ঘুম আসার কথা না। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে সক্ষমতা অনুযায়ী বিশ্বমান বজায় রেখে এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘কারখানাগুলোতে যদি কমপ্লায়েন্স পুরোপুরি থাকে, তাহলে পরিবেশগত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে শুধু উৎপাদকের খরচ বাড়েনি, বরং এতে সংশ্লিষ্ট সব খরচ বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সাধারণের ওপর।

আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের যে দামটা বাড়ানো হয়েছে, তা আর কমানো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে একবার যে জিনিসের দাম বেড়ে যায় তা আর সহজে কমানো যায় না।

পোশাকের মান ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আগামী চার বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে চান রুগ্ন কোম্পানিকে সতেজ প্রতিষ্ঠানের রূপ দেয়ায় খ্যাত আব্দুল্লাহ হিল রাকিব।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা কিনে নিই। যদিও এটার নাম ডায়িং ‍যুক্ত আছে, কিন্তু আমরা জ্যাকেট প্রস্তুত করে থাকি। যখন আমরা মালিকানায় আসি তখন এটির অবস্থা ছিল রুগ্‌ণ প্রায়। এরপর নতুন করে সবকিছু আমাদের মতো করে গড়ে তুলি। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের এখানে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এমন কর্মী রয়েছে ২২ জন। শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হয়েছে। এভাবেই আমরা কর্মক্ষেত্রকে সবার জন্য উপযোগী করে তুলছি আর পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছি।

বিজিএমইএর এই পরিচালক বলেন, বছরে ৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে টিম গ্রুপ। বস্ত্র, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও আবাসন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে গ্রুপটি। সবকিছু সবাভাবিক থাকলে ২০২৭ সালের মধ্যে আমরা ১ বিলিয়নের বেশি পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে নাম লেখাতে পারব।

৪এ ইয়ার্ণ ডায়িংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়ে কর্মী নিয়োগ দেয় কোম্পানিটি। এখানে কর্মরত ৬ হাজার ৮৩৩ জন কর্মীর মধ্যে ৪ হাজার ৭০৭ জনই রয়েছেন নারী। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মীদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। ৪এ ইয়ার্নে রয়েছে ডে কেয়ার। নারী কর্মীরা ছোট বাচ্চা এখানে রেখে নিশ্চিন্তে কাজে যেতে পারেন। ছোট্ট এ কোমলমতি শিশুদের দেখভালের জন্য নিয়োগ আছে দুজন। এখানে শিশুদের লেখাপড়া শেখানো হয়। কোম্পানিটিতে কর্মরত সব কর্মীর জন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক হেলথ সেন্টার। ১৫টি বেডের এ হেলথ সেন্টারে রয়েছেন ২ জন ডাক্তার ও তাদের সঙ্গে নার্স। কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে যারা গর্ভবতী হন তাদের জন্য আলাদা যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের শরীরের যত্নে প্রতিদিন কর্মঘণ্টা থেকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হয়। ২০২১ সালে মোট ২৩৯ জন গর্ভবতী ছিলেন। যাদের প্রত্যেককে এমন আলাদা সেবা দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ৪এ ইয়ার্ন ডাইংয়ের কারখানা প্রাঙ্গনে রয়েছে ফেয়ার প্রাইস শপ। এখানে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে ৩০ শতাংশ ছাড়ে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্য কেনার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে যাদের কাছে কেনার জন্য নগদ অর্থ থাকে না, তারা ক্রেডিট সিস্টেমের মতো বাজার করে নিতে পারে, যা পরবর্তীতে বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//

 

 


Comment As:

Comment (0)