GP x PIB_Online Safety (002)

সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণ দিবে গ্রামীণফোন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রায় ২৩ লাখ প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ নারী ও তরুণ সরাসরি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুবিধা লাভ করবে।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সিএএমপিই’র নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী; গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান; চীফ কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও), হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোসসহ অন্যরা। 

২০২১ সালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড - এ চারটি দেশে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায়, প্রায় ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশি তরুণ অনলাইনে সহিংসতাকে অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে; তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নিজেরাই অনলাইনে সহিংসতার শিকার৷ করোনা মহামারি চলাকালে অনলাইন সহিংসতার হার ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। 
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক কিশোরী ও যুব নারীদের মধ্যে সহিংসতার ভয় নিয়ে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৫৬.৬ শতাংশ কিশোরী বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এমন আপত্তিকর মন্তব্য পেয়েছে। এছাড়া, মোট ৭৮.৩ শতাংশ কিশোরী ও নারীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং মানসিকভাবে ট্রমায় ভোগার পেছনে অনলাইন হয়রানি দায়ী। ফলশ্রুতিতে, অনেকেই ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দেন, হীনমন্যতায় ভোগেন এবং অপর ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলেন।

এই সমস্যগুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নরওয়ে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও টেলিনর ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ’ (এসডিএসজিওয়াই) প্রকল্পের মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্পটি তরুণদের, বিশেষ করে কিশোরীদের তথ্য-অনুসন্ধান জ্ঞান, যোগাযোগ, শিষ্টাচার, ডিজিটাল দক্ষতা, অনলাইন নিরাপত্তা এবং অনলাইন স্পেসে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল আচরণ অর্জনে সহায়তা করার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর ‘ডিজিটাইজেন’ হিসেবে গড়ে তুলবে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আড়াই বছরের মধ্যে ডিজিটাল জ্ঞান, দক্ষতা, সহনশীলতা ও নিরাপদ অনলাইন পরিবেশে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে ২৩,৫০,০০০ কিশোরী ও তরুণীদের, যাদের বেশিরভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। 

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “কানেক্টিভিটি পার্টনার ও রেসপনসিবল বিজনেস সিটিজেন হিসেবে ডিজিটাল স্বাক্ষরতার মাধ্যমে কমিউনিটির ক্ষমতায়ন ও অনলাইনে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন। আমরা ২০১৪ সাল থেকে অনলাইনে নানা প্রতিকূলতা প্রতিরোধে শিশুদের সচেতন করে তুলতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তরুণদের আপস্কিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। দেশকে ডিজিটাল করে গড়ে তোলার সাথে তাল মিলিয়ে, একদম প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী সহ সকল স্তরের নাগরিকের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দ্রুতগতিতে ডিজিটাইজেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। টেকসই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সকল নাগরিক যেনো নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে; পাশাপাশি, তারা যেনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটাতে পারেন সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। তথ্য ব্যবহারের সুযোগ বাড়াতে এবং সবাই যেনো তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারেন এজন্য দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সাথে গ্রামীণফোনের এ পার্টনারশিপ আমাদের প্রতিশ্রুতিরই অংশ।”

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, “আমাদের দেশের তরুণরা আমাদের শক্তি; তারা আমাদের কাজের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আমরা শিশু ও তরুণদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে একটি সমতার সমাজ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে তারাই হবে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। আর এ কারণেই তাদের প্রয়োজন ডিজিটাল জ্ঞান, প্রয়োজনীয় টুলস ও দক্ষতা; যার মধ্য দিয়ে তারা সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে ক্ষতিকর ধারণা ও ক্ষমতার অসম সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি, বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি; তবে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। এ অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এই পার্টনারশিপ একটি চমৎকার উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সিএএমপিই’র নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, “কেবলমাত্র অনগ্রসর বা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীই নয়, এখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও রয়েছেন। আমরা যারা ট্রান্সজেন্ডার, চা-শ্রমিক, বিশেষভাবে সক্ষম শিশু বা এরকম জনগোষ্ঠীর চাহিদা চিহ্নিত করতে কাজ করছি, তাদের জন্য গ্রামীণফোন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এই অংশীদারিত্ব একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)