যে কারনে জমে উঠছে না দুর্গাপূজার বাজার
ড: মিহির কুমার রায়: হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারিত করে মর্ত্যলোকে সারাবছর কেমন যাবে। পূজামন্ডপ ঘিরে শুরু হয় নানা যজ্ঞ ও আয়োজন, নানা বর্ণে নানা উৎসবে ভরে থাকে সমস্ত প্রাঙ্গণ। কাঁসার ঘণ্টা আর ঢাকের তালে আন্দোলিত হয়ে ওঠে পূজার সকল আয়োজন। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন (৯-১৩ অক্টোবর, ২০২৪) দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই পাঁচ দিন দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আর সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে খ্যাত। দেবীপক্ষের সমাপ্তি হয় পঞ্চদশ দিনে অর্থাৎ পূর্ণিমায়। এই পঞ্চদশ দিনটিতে বাৎসরিক লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সার্বজনীন এই দুর্গাপূজা মূলত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান হলেও বাস্তবে মহালয়া থেকে উৎসবের সূচনা ২রা অক্টোবর এবং লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি। কুমারী পূজা দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শাস্ত্রমতে ১ বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প অবিবাহিত সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যাকে পূজা করা হয়। নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড়ে দেবীর মতো সাজিয়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত হয়। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্ম প্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজার প্রচলন করেন। হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ, সতীদাহ, চিরবিধবাসহ নানা অবিচারে তখন নারীরা ছিলেন নিপীড়িত। নারীকে দেবীর আসনে সম্মানিত করার জন্যই হয়ত স্বামী বিবেকানন্দ এই পূজার প্রচলন করেন। আধ্যাত্মিক ও জাগতিক কল্যাণ সাধন এই কুমারী পূজার মূল লক্ষ্য।
আর এই উৎসবকে ঘিরে একেক দিন একেক পোশাকে দেবী দুর্গাকে বরণের আয়োজন আগে থেকেই শেষ করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সেজন্য উৎসবের আগেই দল বেঁধে কেনাকাটায় ঝাপিয়ে পড়েন তারা। তবে এবার সেই আমেজ নেই। তার কারন দেশের চলমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি যার প্রভাব পরেছে সনাতন ধর্ম অনুসারিদের মাঝে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের সরকার পরিবর্তনের প্রভাব চরমভাবে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এবার দুর্গাপূজায় ক্রেতা নেই বললে চলে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর উদ্যোক্তারা বলছেন, এবার পূজায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে। রাজধানীর জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম শপিং মলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ছাড় দিচ্ছে ৩০ শতাংশ, কেউ অর্ধেক দামে। আবার ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ক্রেতার মন জয় করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। শুধু শপিং মল নয়, অনলাইন শপেও লোভনীয় অফার দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এবার দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এমন ভাটা পড়েছে বেচা-কেনায়। রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাকের পর্যাপ্ত কালেকশন ও আয়োজন থাকলেও সে অনুযায়ী ক্রেতা নেই। ক্রেতা টানতে পোশাকের দোকানগুলো ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রাইজ’ গত ১৫ দিন ধরে তাদের সব পণ্যে ফ্ল্যাট ছাড় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বেইলি রোড শো-রুমের ম্যানেজার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন ধরে পোশাকে ছাড় চলছে। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। হয়তো সে কারণে ক্রেতা কম। কোনো কোনো দিন দেখা যাচ্ছে, হিন্দু ক্রেতাদের চেয়ে মুসলিম ক্রেতার সংখ্যা বেশি।’ ওয়েস্টার্ন পোশাক বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান ‘আর্টিসান’ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। তাদের পরিস্থিতিও একই রকম। ‘ভোগ বাই প্রিন্স’ সব সময় গর্জিয়াস পোশাক তৈরি করে থাকে। উৎসবের জন্য ক্রেতারা এই ব্রান্ডকেই পছন্দ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পোশাকে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। শো-রুমের ম্যানেজার আসিফ বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই ছাড় দিচ্ছি আমরা। কোরবানি ঈদের আগে টানা এক মাস ছাড় ছিল। ঈদের পর আবার ১২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। তখনও বেচা কেনা ভালো ছিল। এরপর গত ২০ দিন ধরে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারপরও ক্রেতা সংকট। অন্য বছরগুলোতে এমন ছাড় এত দিন রাখার দরকার হয় না। আগেই শো রুম খালি হয়ে যায়।’
সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘অঞ্জনস’। ১৫ দিন ধরে ছাড় দিয়েও আশানুরুপ ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেইলি রোড শো রুমের কর্মীরা। এছাড়াও ছাড় চলছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘বাংলার মেলা’, ‘দেশাল’, ‘রঙ বাংলাদেশ’ সহ প্রায় প্রতিটি বুটিকসে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রেতা ‘গ্লামার’ দিচ্ছে ৫০ শতাংশ ছাড়। শো রুমের কর্মী সালমা ইয়াসমিন জানান, ভারতীয় পণ্যে তারা ছাড় দিয়েছেন। কারণ, তারা এখন থেকে পাকিস্তানি পণ্য বিক্রি করবেন না বলে স্টক খালি করছেন। ছাড় শুধু রেডিমেট পোশাকেই নয়, টেইলারিংয়েও ছাড় দিতে দেখা গেছে এবার। রাজধানীর মৌচাক মার্কেট দক্ষ টেইলারের জন্য সেরা। মার্কেটের চার তলা জুড়ে শুধু টেইলার। মা টেইলারের মালিক কাদির হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর অর্ডার রেখে তা সময় মতো ডেলিভারি দিতে পারি না। বাড়তি লোক রেখে ডেলিভারি দিতে হয়। এবার একাই পোশাক বানিয়ে দিচ্ছি। ১০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি। কিন্তু কাস্টমার নেই।’ মৌচাক মার্কেটের খাজানা শাড়ির দোকানের মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে পূজা উপলক্ষ্যে এই সময় কারও সঙ্গে কথা বলার সময় থাকে না। কিন্তু এবার একদম ফাঁকা। কিছু বাঁধা কাস্টমার আছেন, উনারা সপ্তাহ খানেক আগে কিছু শাড়ি-লেহেঙ্গা কিনে নিয়ে গেছেন। এখন আর ক্রেতার দেখা নেই। শুধু মৌচাক, বেইলি রোডই নয় এমন চিত্র দেখা গেছে সবচেয়ে বড় নিউমার্কেটে, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বিশাল মার্কেটগুলোতে। বিক্রেতারা বলছেন, পুজার বাকি ১৫ দিন থাকলেও এখনো জমে ওঠেনি পূজার বাজার। গাউসিয়া মার্কেট সংলগ্ন চাঁদনী চক মেয়েদের পোশাকের জন্য জনপ্রিয় ও বড় মার্কেট। বিশেষ করে আনস্ট্রিচ কাপড়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে। চাঁদনী চকে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানিরা ঝিমাচ্ছে। যেখানে অন্য বছরগুলোতে এসময়ে দম ফেলার সময় থাকে না। ভিড় ছিল না গহনার দোকানেও। বসুন্ধরা সিটিতেও ক্রেতা সমাগম কম। ‘দেশী দশ’-এ ক্রেতার চেয়ে যেন দর্শনার্থীর সংখ্যাই দেখা গেছে বেশি। ভিড় নেই অন্য দোকানেও। শাড়ি, গহনা, জুতা সবই ফাঁকা। পোশাকের পাশাপাশি ছাড় দিতে দেখা গেছে ব্রান্ডের জুতার দোকানেও। প্রথম সারির ব্র্যান্ড ‘এপেক্স’ দিয়েছিল ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। ‘বাটা’ এখনও ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে রেখেছে। আর ‘বে’র ছাড় চলছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ওয়ারি বে’র শো-রুম ম্যানেজার ধ্রুব জানান, বেচাকেনা কম দেখে প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড় দিয়ে রেখেছে। তবে এখানে বাছাই করা কিছু পণ্যে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা গত দুই মাস ধরে জুতায় ছাড় দিয়ে রেখেছি। স্টক খালি হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
শপিং মলের পাশাপাশি অনলাইনেও পোশাকে ছাড় চলছে। অনেকেই দিচ্ছেন স্টক ক্লিয়ারেন্স ছাড়। আবার কেউ দিচ্ছেন লাইভে ছাড়। লাইভ দেখে কেউ অর্ডার করলে ইনস্ট্যান্ট ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন। আবার কেউ দিচ্ছেন ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। অ্যাঞ্জেলস বিডি নামের একটি পেইজের উদ্যোক্তা রোমানা বলেন, ‘পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ পোশাক তুলেছি। এবার মনে হয় লোকসান গুনতে হবে। অনেকেই দাম জানতে চেয়ে আর খবর নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোশাকের দামতো কিছুটা বেড়েছেই।’ কলকাতার ভাবি পেইজের উদ্যোক্তা বলেন, ‘এবার তো ব্যবসা নেই। আমরা ভারতীয় পোশাক নিয়ে কাজ করি। এবারতো ভিসা বন্ধ। একটা প্রোডাক্টও তুলতে পারিনি। দেশীয় পণ্য তুলেছি। কিন্তু ক্রেতারা চান কলকাতার পোশাক। কি যে মুশকিল! যে ইনভেস্ট করেছি তাতেও লোকসান গুনতে হবে।’ ফুটপাতের দোকানি থেকে নামি দামি শপিং মল- পূজার এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকেন সবাই। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের সংসার চলে তৈরি পোশাক, পূজার মণ্ডব সজ্জায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম বানিয়ে।
এখন আসা যাক শারদীয় দুর্গাপূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। ফুল একটি পূজার উল্লেখযোগ্য উপকরণ, যা ভিন্ন রঙের ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এবার এই দুষ্প্রাপ্য ফুলের জোগান কে দেবে? কারণ দেশের স্থানীয় পর্যায়ে যে ফুল হয় তা দিয়ে হয়ত গ্রামের পূজারী কোনভাবে সামলাতে পারবে; কিন্তু ঢাকাসহ বিভাগীয়/জেলা শহরে পূজার ফুল সরবরাহ হতো যশোরের গদখালী থেকে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বিপদগ্রস্থ হয়ে গেছে চাষিরা। এখন ফুলের জমিতে সবজি কিংবা ধানের চাষ করছে কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে। শারদীয় উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে প্রসার তা এই খাতটিকে প্রসারিত করে থাকে। যেমন- ফুল ফল, ঢাক, বাদ্য-বাজনা, কাপড় বিতরণ, অলঙ্করণ, মুদ্রণ শিল্প, ভোগ্যপণ্য, যেমন- চাল, ডাল, সবজি ক্রয়-বিক্রয়, কুমার, মৃতশিল্পী, ডেকোরেটর, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদি। আবার সামাজিক/সংস্কৃতির বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন- শিল্পীদের ভক্তিমূলক গান, লক্ষ্মী বিলাস, নৌকা বিলাস, নিমাই সন্ন্যাস, যার সঙ্গে তাদের আয় উপার্জনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম জড়িত থাকে। প্রতি বছরই এই দিনটির জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকে, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের এক ব্যাপক নিদর্শন বটে। পূজা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসে পূজামন্ডপকে ঘিরে, যা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এবারও বিঘ্নিত হতে পারে, যা মেলার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রতিমা সামগ্রীর দাম, মৃৎশিল্পীদের বায়না, পতিতালয়ের মাটির দাম (যা মূর্তি তৈরিতে ব্যবহার হয়) চরমে উঠেছে। ফলে পূজার ব্যয়ও বাড়বে, পূজারীদের আয়োজনও কমাতে হবে তাই পূজার সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের সার্বিক অর্থনীতির কাঠামোতে বিবেচনায় আনতে হবে এবং নিরূপণ করতে হবে, বিশেষত সাবির্ক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায়।
এবার অন্যাণ্য সময়ের মত আসন্ন দূর্গাপূজা আয়োজনে আরও একটি পণ্য যোগ হয়েছে যা হলো ইলিশ মাছ যা বিজয়া দশমীতে রিতি অনুসারে ব্যবহৃত হয় বিশেষত; বাঙ্গালী অধ্যুষিত বাংলাদেশ সহ পশ্চিম বঙ্গে। এখানে উল্লেখ্য যে ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং ইলিশ উৎপাদনে পৃথিবীর এক নং অবস্থানে রয়েছে যা জাতীর গর্ব। প্রতি বছর ইলিশ রপ্তাণী করে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে যার ব্যতিক্রম এ বছরও ঘটেনি যেমন সরকার এই বছর ৩০০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
যদিও দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হবে না বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা। এটাকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান বলেও অনেকে ভাবছিলেন। ভারতে ইলিশ না দেওয়ার পক্ষে এটাও বলা হয়েছিল, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও দুর্গাপূজা পালন করবে। এ অবস্থায় রপ্তানি হলে ‘দামি মাছ’টি আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে দেশে। সরকারের এমন অবস্থানের মধ্যেই অবশ্য ভারতের ব্যবসায়ীরা ইলিশ আমদানির আবেদন জানান। শেষে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানাল, এবারও ৩ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি তারা দিচ্ছে। ইলিশ ভারতে উপহার হিসেবে যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘এটা রপ্তানি করা হবে। রপ্তানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে।’ রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এখনো যায় নি। শুধু একটা সিন্ধান্ত হয়েছে। তার আগেইতো দাম বেড়ে গেছে। কাজেই রপ্তানি হলে দাম বাড়বে একথাটা ঠিক না। যেটা সরকারের বিবেচনায় আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ইলিশটা চাচ্ছে, তারাও কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ওপার (ভারত) থেকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন। সেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমরা খুব কতগুলো সহজ কথা বলে ফেলি। সবসময় মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশীর সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমাদের আলাপ আলোচনা করতে হবে। আলোচনার সেই দ্বারটা ছোট ছোট বিষয়ে বন্ধ হয়ে যাক, সেটা আমরা চাইনা।’
পাঁচ বছর ধরেই পূজার সময়টায় বিশেষত ভারতীয় বাঙালিদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইলিশ ওখানে রপ্তানি হচ্ছে। এটাকে বিগত সরকারের ‘রাজনৈতিক বিবেচনার প্রকাশ’ বলেও মনে করা হচ্ছিল। ভারতও এতে হয়ে পড়ে অভ্যস্ত। তাই ইলিশ না পাঠানোর পক্ষে যখন অবস্থান নেয় নতুন সরকার, তখন বেশ হতাশার সৃষ্টি হয়, বিশেষত পশ্চিম বঙ্গে। তবু ‘পদ্মার ইলিশ’ নিয়ে ভারতীয় বাঙালিদের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। একটু বেশি দাম দিয়েও, বিশেষত পূজার সময় সেটা কিনতে তারা প্রস্তুত। তবে ওখানে যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ আছে, তারা নিশ্চয়ই ভারতে আহরিত ইলিশ কিনতেও হিমশিম খায়। তাদের সবারই কিছুটা সুবিধা হয় বাংলাদেশ থেকে অন্তত পূজার সময় কিছু ইলিশ গেলে। তাতে উৎসবে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাটা হয়তো কমে। এবারও সেই সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। ভারতের ইলিশ আমদানিকারকেরাও সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে খুশি হবেন। বাঙ্গালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে বিজয়া দশমি পাচ দিন নিরামিশ ভোজের পর মাছের অন্নে ইলিশ মাছ না হলেই নয় যার একটি ধর্ম্মীয় বিবেচনা রয়েছে।
একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন- এই দুইয়ের কারণে কেনাকাটায় প্রভাব পড়েছে এবারের পূজার বাজারে। এদিকে, এবার পাড়া-মহল্লার কমিটিগুলো সীমিত আকারে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এত কিছুর মধ্যেও আগামী দুই সপ্তাহে রাজধানীর পূজার বাজার হয়তো জমে উঠবে সেই প্রত্যাশা রইল। উল্লেখ্য, শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রাম-নগর, ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে এই শরতের মহামিলন উৎসবে।
লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//