এক পয়সাও কর দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ১৮ কোম্পানি
বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: ওবামাকেয়ারের একটা হেস্তনেস্ত করে ফেলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস এখন অন্যান্য বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের জটিল কর আইন। সম্প্রতি আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই বড় বড় কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেয়ার একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটি নিয়ে নতুন করে ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ইনস্টিটিউট ফর ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসি (আইটিইপি) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার বৃহত্তম ১৮টি করপোরেশন ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারকে এক পয়সাও আয়কর দেয়নি।
কর দেয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে: জেনারেল ইলেক্ট্রনিক, ইন্টারন্যাশনাল পেপার, প্রাইসলেস গ্রুপ এবং প্যাসিফিক গ্যাস অ্যান্ড ইলেকট্রিক।
যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট করের হিসাবটা বেশ জটিল। কর আর মুনাফার হিসাবের মধ্যেই আছে ঘাপলা। অবশ্য জেনারেল ইলেক্ট্রনিক বলছে, এই প্রতিবেদনে বড় রকমের ত্রুটি আছে এবং এটি বিভ্রান্তিকর। তারা আরো বলেছে, গত দশকে তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ৩ হাজার ২৯০ কোটি ডলার নগদ আয়কর দিয়েছে।
আইটিইপি এবং তার সহযোগী সংগঠন সিটিজেন ফর ট্যাক্স জাস্টিস (সিটিজে) মিলে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। ব্লগসাইট স্যাম্পল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছে, তারা শিরোনাম দিয়েছে, “কর আদায় ও স্বচ্ছতায় শীর্ষস্থানে আছেন বার্নি স্যান্ডার্স।” তারা বলেছে, সিটিজের করপোরেট কর বিশ্লেষণ নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়েই করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘বৈধভাবে কর এড়ানো’ বাক্যটি ব্যবহারের মাধ্যমে ‘বৈধ’ শব্দটির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তার মানে হলো, বড় বড় কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে কারো আপত্তি থাকলে কোম্পানি বা কোম্পানির অসাধারণ দক্ষতা সম্পন্ন কর আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের দোষ দেয়ার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অভিযোগ থাকলে এর জন্য দায়ী করতে হবে কংগ্রেসকে, কারণ কংগ্রেসই এমন কর আইন করেছে যে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই কোটি কোটি ডলার আয়কর ফাঁকি দেয়া যাচ্ছে।
কর ফাঁকি দেয়া ১৮টি কোম্পানিকে আরেকটু বিস্তৃত আকারে বিচার করার কথা বলেছে আইটিইপি। যেমন: তাদের করপোরেট কর যা দেখানো হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা অনেক বেশি। এখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য: আমেরিকার করপোরেট কর হার দুনিয়ার মধ্যে সবচে বেশি। ‘দ্য থার্টি ফাইভ পারসেন্ট করপোরেট ট্যাক্স মিথ’ শিরোনামে প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা হিসেবে ২৫৮টি কোম্পানি ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রত্যেকেই লাভে ছিল। তাদের গড় কর হার ছিল ২১.২ শতাংশ।
বর্তমানে এই বিষয়টি সবাই মানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে যদিও করপোরেট কর হার সর্বোচ্চ কিন্তু এর গড় হার অস্বাভাবিক বেশি হয় না কারণ এর মধ্যে অনেকভাবে কমিয়ে আনার উপায় থাকে। সুতরাং নতুন প্রতিবেদনটি ১৯৮০ সালে কর আইন করার পর থেকে যে অবস্থা চলে আসছে তার ব্যতিক্রম কিছু দেখায়নি।
এ বিষয়ে সবাই একমত যে, যুক্তরাষ্ট্রের কর ব্যবস্থা খুবই জটিল এবং সেকেলে। এ কারণেই ট্রাম্পও এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য কোম্পানিগুলোও এই ব্যবস্থা আরো সরল ও আধুনিক করার দাবি জানিয়ে আসছে। যেমন: জেনারেল ইলেক্ট্রনিক বলছে, আমাদের আরো বেশি কর দিতে হলেও আইনটি সহজ করা হোক।
কর হার ৩৫ শতাংশ না হলেও সর্বোচ্চ হারের বিষয়টি এখানে কোম্পানিগেুলোর করপোরেট কর হার হিসাবের ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয়। কারণ এই হিসাবটা দেখানো হয় শেষ প্রান্তিকে এসে, গড়ের ওপর নয়। এখন সর্বশেষ আপনি যে টাকা কামাই করলেন সরকার যদি সেটির ওপর ৩৫ শতাংশ কর নেয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সারা বছর প্রচুর মুনাফা করলেও শেষ সময় এসে আপনি কম মুনাফা করবেন। অর্থনীতিবিদ অ্যালান কোল এই কথাটিই বলছেন। তার মতে, এভাবে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যবসা করতে নিররুৎসাহিত না করে বরং কর হার কমিয়ে দিলেই হয়।
ওই প্রতিবেদনে বিদেশে বিনিয়োগের ফলে অর্জিত মুনাফার ওপর কেন্দ্রীয় করের পার্থক্য বিলোপের জন্য কংগ্রেসকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমানে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি টাকা বিদেশে পড়ে আছে কারণ কোম্পানিগুলো দেশে এসে দ্বিতীয়বার কর দিতে নারাজ।
এটি না করলে মার্কিন কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত কর থেকে মুক্তি পেতে তাদের সদর দফতর বিদেশে স্থানান্তর করতে উৎসাহিত হবে- বলেন অর্থনীতিবিদ কোল।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
(আরআর/১৪ই মার্চ ২০১৭)