করোনাকালীন সাইবার হামলায় শীর্ষ ঝুঁকিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা

মোহাম্মদ আরিফুর রহমান: সন্দেহ নেই করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি বেশ চাপে আছে। এরফলে ব্যবসায়ীরাসহ প্রায় সকল শ্রেণীর পেশাজীবি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশে অনুমান করা হয়, এটি ২০২০ সালের জিডিপিকে জানুয়ারীর ২০২০ সালের প্রাক-কোভিড-২০১৯ অনুমানের তুলনায় প্রায় ৬.৫০ শতাংশ পয়েন্ট কম থাকবে।

ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ব্যাংক সেক্টরেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে করোনাভাইরাসের  প্রার্দুভাবের কারনে ব্যাংকে অনলাইন পেমেন্টের গুরুত্ব এবং চাহিদা  দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকরা সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রচেষ্টার কারনেই অনলাইন ব্যাংকিং এর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অপরদিকে বিভিন্ন দেশের অনেক সংস্থা এ মহামারী পরিস্থিতিতে তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে, যেমন গুগল।

প্রার্দুভাবের শুরুর দিক থেকেই ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভাইজার বোর্ডের চেয়ারম্যান আন্দ্রে এনরিয়া ব্যাংক কর্মকর্তারদের সাধারণ দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং ঝুকিঁ বিবেচনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা বলে যাচ্ছেন। সাথে সাথে তিনি সাইবার সিকিউরিটির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে যাচ্ছেন।

সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকির আওতায় ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়ই থাকে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যাংকগুলো হ্যাকারদের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা গড়ে তুলেছে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক সাইবার ক্রাইম এবং প্রযুক্তি ঘাটতিটিকে আজকাল ব্যাংকিং শিল্পের জন্য শীর্ষ ঝুঁকি বলে অভিহিত করেছে।

সম্প্রতি, এফবিআইসহ মার্কিন সরকারী সংস্থা উত্তর কোরিয়ার সাইবার-সন্ত্রাসবাদী দল ‘বিগল বয়েজ’ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল বানিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সতর্ক করছেন। তারা বলেছেন যে, হ্যাকারদের বৃহত্তম লক্ষ্য এখন ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা খাত।

সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি সাধারণত উচ্চতর হয়। তাই ব্যাংকের সকল আইটি সিস্টেমগুলির পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রচেষ্টা লক্ষে ওয়েব-ফিল্টারিং, ফায়ারওয়াল এবং তথ্যের এনক্রিপশন প্রভৃতি নিশ্চিত করা জরুরী।

বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং ব্লগ থেকে প্রাপ্ত ই-মেইল যা ব্যাংকের সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বিরাট হুমকির কারণ হতে পারে। এ মহামারীর সময় প্রতারকরা ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছে এমনভাবে ‘ফিশিং’ ইমেল বা বার্তা পাঠাচ্ছে (যেমন COVID-19 বিষয়ক সতর্ক বার্তা) ম্যাসেজগুলি দেখে মনে হতে পারে ব্যাংক থেকে এসেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের একাউন্টগুলো হ্যাকিং করে তাদের/ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে এমনকি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির সম্ভাবনা থাকে।

কিছুদিন আগে একটি ছক্র বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জেনারেল ম্যানেজারের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার ইমেলগুলিতে ভুয়া চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে ‘বাংলাদেশ অডিট গোয়েন্দা ইউনিট’ নামে একটি বিভাগকে উল্লেখ করে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। এটিতে ক্লিক করার জন্য একটি লিঙ্ক রয়েছে। যদি কেউ সেই লিঙ্কটিতে বা ইমেলটিতে প্রেরিত চিঠিটি ক্লিক করে থাকে তবে তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে এই নামে কোনও বিভাগ আসলে নেই এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সবাইকে এ ব্যাপারে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং তথ্য ও সেবা পাওয়ার জন্য  বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন থাকলেও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ওয়েব ব্রাউজার, যা প্রায় সকল কম্পিউটার এ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্সটল্ড থাকে। বিভিন্ন ধরনের ওয়েব ব্রাউজার থাকলেও বহুল ব্যবহৃত ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্রোম(গুগল) মজিলা ফায়ারফক্স, অপেরা, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ইত্যাদি। তাই ওয়েব ব্রাউজার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদে ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূঅতি জরুরী। কম্পিউটার এর অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যে ওয়েব ব্রাউজার গতানুগতিকভাবে দেয়া থাকে অথবা যে ওয়েব ব্রাউজার ইনস্টল করা হয়, সাধারণত তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থাকে না।

যদি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যাংকের গ্রাহকরা ও এমনকি ব্যাংকাররা সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক পর্যাপ্ত ও সঠিক জ্ঞান না রাখে তাহলে খুব সহজেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ম্যালওয়্যার বা অন্যান্য ক্ষতিকর প্রোগ্রাম, ব্যবহারকারীর অগোচরে ব্যাংকের কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়ারে এ অনুপ্রবেশ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা ব্যাংকের কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়ারে এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হতে পারে।

[চলবে…………………….]

লেখক: ব্যাংকার।

 

 


Comment As:

Comment (0)