যে কারণে এটিবি অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ
দীর্ঘদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালূ করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক জারিকৃত এ বিষয়ক নোটিফিকেশনটি ২০২০ সালের ১২ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে এই বোর্ড চালু করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরও প্রায় আড়াই বছর পর ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড) রেগুলেশন্স -২০২২’ এর গেজেট প্রকাশিত হয়। আর আনুসঙ্গিক সকল প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বহুল প্রতিক্ষিত এই বোর্ডের যাত্রা শুরু হয়।
দেশের পুঁজিবাজারে সদ্য চালু হওয়া অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) শুধু পুঁজিবাজারের জন্য নয়; বরং সামগ্রিকভাবে আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি সহায়ক উদ্যোগ। আমাদের দেশে এটি নতুন ধারণা হলেও পৃথিবীর বড় বড় অর্থনীতির দেশে অনেক আগে থেকেই এরকম বিকল্প বিনিয়োগের জন্য প্ল্যাটফর্ম প্রচলিত। ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে লগ্নিকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য এটিবি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই প্ল্যাটফর্মটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে কাগজবিহীন লেনদেন করার জন্য স্থাপিত হয়েছে। এটিবির সব চাইতে সুবিধাজনক দিক হচ্ছে- যেসকল কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি অথবা কোনো কারণে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারেনি- তারা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি, মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ২৫৫৭টি। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৬৫৪টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত।
এতদিন তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির জন্য পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের জন্য মানি মার্কেট কিংবা অন্যান্য উৎস থেকে বিভিন্ন মেয়াদে ও উচ্চ সুদে তহবিল সংগ্রহ ব্যতীত কোন বিকল্প ছিল না। এখন এটিবির মাধ্যমে তারা চাইলে তাদের যে সিকিউরিটিজ আছে সেই সিকিউরিটিজ নির্ধারিত রেগুলেটরি কাঠামোর মধ্যে ট্রান্সফার করতে পারবে।
এই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ, ব্যাক সিকিউরিটিজ এবং ওপেন ইনড মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদলেরও সুবিধা রাখা হয়েছে। এছাড়া যদি কোনো কোম্পানি বা কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে এক্সিট নিতে চায়, সেজন্য এটিবির রেগুলেশনে তারও সুযোগ রাখা হয়েছে।
ফলে এখন এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে তালিকাবিহীন কিংবা তালিকা থেকে বাদ যাওয়া যেকোন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিদের কাছ থেকে মূলধন যোগাড় করতে পারবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীরা সহজ এক্সিটের সুযোগও পাবে।
তাই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডটাকে যদি একটি ভাইব্রেন্ট বোর্ড্ হিসাবে এন্টারপ্রিনিয়ার বা বিনিয়োগকারীদের কাছে এস্টাবলিশ করা যায় তাহলে এই বোর্ডের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্ট্রাটেজিক বিনিয়োগ আসার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হবে। আর এতে শুধু দেশের পুঁজিবাজার নয়, বরং সার্বিক অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//