Saiful Islam Pipon

শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তরের কারণ, প্রভাব ও বিনিয়োগকারীর সম্ভাব্য সুরক্ষা

সাইফুল ইসলাম পিপন: বাংলাদেশ পুঁজিবাজার সাম্প্রতিক সময়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো প্রতিনিয়ত শেয়ারকে জেড গ্রুপে স্থানান্তর। শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তরিত হলে এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্বস্তি ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তর বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি মিশ্র নেতিবাচক মনোভাব লক্ষণীয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) আইন-১৯৮৭ এবং লিস্টিং রেগুলেশন-২০১৫ অনুযায়ী, কোন শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তর করা হবে- যদি কোনো কোম্পানি পরপর দুই বা তার অধিক বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা ও বিতরণে ব্যর্থ হয়, যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকে বা নিয়মিত লেনদেন না হয়, যদি অডিট প্রতিবেদনে গুরুতর ত্রুটি বা স্বচ্ছতার অভাব দেখা দেয়, যদি কোম্পানির পেইড-আপ ক্যাপিটাল বা রিজার্ভ বাজারের নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানিকে জেড গ্রুপে স্থানান্তরের আগে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিবরণ প্রকাশ করবে এবং জেড গ্রুপে স্থানান্তরের তারিখ জানাবে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশিত হবে।

শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তরের ফলে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারী উভয়ের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়ে। প্রধানতঃ শেয়ারগুলোর লেনদেন সীমিত হয়ে যায় তথা শেয়ারের চাহিদা কমে যায়, ফলে শেয়ারের তাৎক্ষণিকভাবে দরপতন হয় এবং বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়াও লিকুইডিটি সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা সহজে শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির ভয়ে বাজারের উপর আস্থা হারায়। তাছাড়া, নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসতে ভয় পায়।

আন্তর্জাতিক বাজারেও জেড গ্রুপের মতো ব্যবস্থাপনা দেখা যায়। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE) নিয়মিত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোকে ডেলিস্টিং করা হয়। অন্যদিকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE) ক্যাটাগরি ডাউন গ্রেডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে, যা বাজারে শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় করণীয় প্রস্তাবনাঃ শেয়ার জেড গ্রুপে স্থানান্তরিত হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। যেমন ক) বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি- বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ফ্রি সার্বজনীন প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা এবং পুঁজিবাজার সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো। খ) কোম্পানির উপর কঠোর নজরদারি- স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর উচিৎ কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী আরো নিয়মিতকরণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা এবং অডিট রিপোর্টে কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ। গ) বিনিয়োগ সুরক্ষা তহবিল গঠন- সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কমাতে একটি সুরক্ষা তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যা জেড গ্রুপে স্থানান্তরিত শেয়ারগুলোর ক্ষতি পূরণে এই তহবিল থেকে সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। ঘ) কোম্পানির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু করা- জেড গ্রুপে থাকা কোম্পানিগুলোকে উন্নত করতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করা উচিৎ এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নজরদারী প্রয়োজন।

জেড গ্রুপে শেয়ার স্থানান্তর পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্ক সংকেত। বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বাজার নিয়ন্ত্রণে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ এবং কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তারা আস্থার সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

লেখক: পুঁজিবাজার বিশ্লেষক।  

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)