received_695322494900954

সম্পাদকীয়

রেলে যাত্রী হয়রানী বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী

নিরাপদ ও সাচ্ছন্দপূর্ণভাবে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রেলপথ সবসময়ই জনপ্রিয়। কিন্তু যথাযত ব্যবস্থাপনা ও অসাধূ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দৌড়াত্বের কারনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি এখনও আলোর মুখ দেখছে না। যথাযত পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে ঘাটতির অভাবে কোনোভাবেই যেনো লোকসান থেকে বের হতে পারছে না রেলওয়ে। যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন ও আধুকায়নতো নয়-ই উল্টো নানাভাবে হয়রানী করে সরকারকে বিপুল পরিমান রাজস্ব বঞ্চিত করছে রেলের একশ্রেণীর অসাধূ চক্র।

কিন্তু কেন এমনটি হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে? প্রতিবেশি দেশগুলোতেওতো রেল অত্যন্ত জনপ্রিয় যানবাহন। বিশ্বের অনান্য উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় ও লাভজনক খাত হিসেবে চালু রয়েছে রেলপথ। তারাতো ঠিকই লাভ করছে, সেবার মানও বাড়াচ্ছে।

টিকেট বা সিট না থাকার সমস্যা, টিকেট কালোবাজারি, পর্যাপ্ত টিকেটিং বুথ না থাকা কিংবা অসাধু কর্মকর্তাদের দৌড়াত্নতা নানা কারনেরই দেশের রেলওয়েতে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘক্ষন লাইনে দাড়িয়ে থেকে টিকিট মাস্টারের কাছে গেলে বলে দিচ্ছেন সিট নাই!! আবার স্ট্যান্ডিং টিকিটও নাই। তাহলে রেলে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা কিভাবে টিকিট করবেন? ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে টিকিট নেওয়াতো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই মধ্যমপন্থীদের টাকা দিয়ে ট্রেনে চড়তে হয়। এরপর আবার মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট বা চিরুনী অভিযানের নামে জনগনকে হয়রানী করে টাকা আদায় করছেন রেলের আরও একশ্রেনীর কর্মকর্তারা। এসময় তারা পুলিশ-টুলিশ নিয়ে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে যার্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। প্রায়শই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে রেখে এমন কাজ করে চলেছে তারা। মাঝে মধ্যে যাত্রীদের সাথে তাদের আপত্তিজনক আচরণও লক্ষ্য করা যায়। রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যাত্রীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে মারামারিরও উপক্রম হয়।

সম্প্রতি এ ধরনের একটি বিষয় লেখকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কমলাপুর থেকে মাহানগর গোধূলী ট্রেনে চিরুনী অভিযানে  রেলের তথাকথিত কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সঙ্গে নিয়ে এ অভিযানে নেমেছেন। টিকিট না থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন। অসহায় যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে জরিমানা দিচ্ছেন। না দিলে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে এবং আজেবাজে কথা বলে গালমন্দ দেওয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে সিটে বসে থাকা এক যাত্রীর ঈগুতে লাগায় তিনি ওই কর্মকর্তার কথার প্রতিবাদ করেন। আর তখনই শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। অবস্থা এমন যে আরেকটু হলে মারামারি পর্যন্ত হয়ে যেতো!! পরে রেল পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মাঝখানে প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তার কেরামতিতে এক স্টেশনে রেল থামিয়ে রাখা হয় প্রায় ঘন্টাখানেক।

কিন্তু এটি কি কোনো সমাধান হলো? এভাবে কি রেল লাভজনক হবে? এভাবে কি করে রেলসেবার মান বাড়বে? বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও প্রকৃতপক্ষে কোনো সমাধান পাচ্ছেন না অসহায় যাত্রীরা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্লাটফর্মে তাৎক্ষনিক টিকেটের ব্যবস্থা, কিছুটা কমদামে স্ট্যান্ডিং টিকিট, সিটের সঙ্গে সংঘতি রেখে কোটাভিত্তিক স্ট্যান্ডিং টিকিট সিস্টেম, নিয়মিত যাত্রীদের জন্য মাসিক কিংবা বাৎসরিক টিকিটের ব্যবস্থা, অনলাইন বা অফলাইনে সবসময় টিকিট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং অসাধু কর্মকর্তাদের দৌড়াত্ব কমিয়ে আনাসহ সেবার মান বাড়াতে পারলেই কেবল লাভজনক খাত হতে পারে রেলওয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো নিয়ে অনতি বিলম্বে ভাবা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)