এইচএসবিসি

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত এইচএসবিসির

ডেস্ক রিপোর্ট: এবার নতুন জ্বালানি তেল ও গ্যাস প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এইচএসবিসি। হালনাগাদ করা জলবায়ু কৌশলের আওতায় এ পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংকটি।  এপির খবরে বলা হয়, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বজুড়ে জোর প্রচেষ্টা চলছে। পরিবেশবিদরা সরকার ও আর্থিক খাতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় নানামুখী উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে এইচএসবিসি।

খবরে বলা হয়, পরিবেশবিদরা এইচএসবিসির এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংকটির এ পদক্ষেপ অন্যান্য প্রধান ব্যাংককেও একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যাংকটির প্রতি আরো বেশি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

এইচএসবিসি জানিয়েছে, ব্যাংকটি বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন চালিয়ে যাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ক্রমহ্রাসমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ পদক্ষেপের পরিবর্তন আনা হবে। ব্যাংকটি জ্বালানি খাতের গ্রাহকদের অর্থ ও পরামর্শক পরিষেবা দেয়া অব্যাহত রাখবে। তবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তরে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাও মূল্যায়ন করা হবে।

পরিবেশবাদী দাতব্য প্রতিষ্ঠান শেয়ারঅ্যাকশনের জিন মার্টিন বলেন, এইচএসবিসির এ পদক্ষেপ নিট জিরো কার্বন নিঃসরণ প্রতিশ্রুতির একটি অংশ। এটি পুরো ব্যাংক খাতের জন্য দিকনির্দেশনামূলক পদক্ষেপও। অবশ্য ব্যাংকটির পুরনো প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হতাশার। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান জ্বালানি তেল ও গ্যাস প্রকল্প সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। সুতরাং সেখানে অর্থায়ন করবে ব্যাংকটি। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানিতে পুরোপুরি অর্থায়ন বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

এইচএসবিসির এ পদক্ষেপকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরাও।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ক্লাইমেট সোশ্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্কের পরিচালক টিমন্স রবার্টস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যাংক খাত অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণে বড় ব্যাংক যখন জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেয়, তখন সেটা অনেক বড় একটি ঘটনা। যদিও এ ধরনের প্রতিশ্রুতির পেছনে প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়টি কাজ করে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কিনা তা ট্র্যাক করতে সতর্ক থাকতে হবে।

রেইনফরেস্ট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের জলবায়ু ও জ্বালানি বিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক অদিতি সেন বলেন, প্রতি বছর জীবাশ্ম জ্বালানি তহবিল নিয়ে আমাদের গবেষণায় উঠে আসে, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বড় অপরাধী। যদিও এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিশ্রুতি খুবই ক্ষীণ। এটি আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বৃহত্তম ব্যাংক গত বছর চিহ্নিত সব জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থায়নের এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, এখন এইচএসবিসি জলবায়ু নিয়ে বড় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি প্রমাণ করে মার্কিন ব্যাংকগুলোও এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় একটি ভূমিকা পালন করে। এ অবস্থা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরেও প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।

গত বছর একটি প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছিল, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে অবিলম্বে জ্বালানি তেল ও গ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। রেইনফরেস্ট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ছয় বছরে বিশ্বের ৬০টি বৃহত্তম ব্যাংকের জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত অর্থায়নের পরিমাণ ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এসব প্রকল্পে ২০২১ সালেই ৭৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ সতর্ক করেছিল, ব্যাংক খাত প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এইচএসবিসিসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংককে জলবায়ু প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)