করোনাকালে পোল্ট্রিশিল্প

নতুন বইয়ের আনন্দে শিক্ষার্থীরা মাতুয়ারা

ড: মিহির কুমার রায়: নতুন বছরটি অনেক দিক দিয়ে স্বরণীয় হয়ে থাকবে বিশেষত: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যেখানে পৌষের কুয়াশার মধ্যেও সারাদেশের প্রার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যাস্ত রয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে নতুন বছরে নতুন বই নতুন হাসিমুখ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে যেখানে তারা এমনিতেই নতুন কিছু পেলে, দেখলে আনন্দ পায়। শিক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বই। আর সেই বই যদি বিনামূল্যে নতুন হয় তাহলে  তো কথাই নেই। বছরের প্রথম দিন তাদের মধ্যে একটা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে। তার সাথে যোগ হয়েছে হাতে পাওয়া নতুন বই। একসাথে একদিনে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো সহজ কথা নয়। সেই কঠিন কাজটিই করেছে বর্তমান সরকার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগামী দিনের পথ  চলায় বই উৎসবকে কেন্দ্র করেই দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শিক্ষার মূল ধারায় যুক্ত হয়েছে। নতুন বইয়ের সঙ্গে স্কুল  ড্রেস, উপবৃত্তি ও মিড ডে মিলের মতো উৎসাহব্যঞ্জক সুযোগ-সুবিধা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একান্তই নিজস্ব ধ্যান ধারণার বহি:প্রকাশ। একটি শিশুও অশিক্ষিত থাকবে না, থাকবে না না খেয়ে, শিক্ষিত হয়ে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে, স্মার্ট সোনার বাংলা তৈরি করবে ইত্যাদি এই জননীরই কথা। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশের আগামী প্রজন্মকে সেভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা। এ বছরও আয়োজনের কোনো কমতি দেখা যায়নি। কাগজের কাঁচামাল, ডলার ও বিদ্যুত সংকটের প্রতিকূলতা কাটিয়ে নতুন দিনে, নতুন বই বিতরন সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

হিসাব মতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বই উৎসবে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম ও সমমান শ্রেণির ৩  কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে বই দেওয়া শুরু হয়েছে। বিতরণ করা হবে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি বই। এর মধ্যে শিক্ষক সহায়িকা থাকবে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি। বই উৎসবে ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন, প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন, ইবতেদায়ির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ কোটি চার লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন, দাখিলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন, ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন, কারিগরির (ট্রেড) ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৫২ জন, দাখিল ভোকেশনালের ৬ হাজার ১৫ জন ও ব্রেইল পদ্ধতির ৭২৪ জন; এই মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী পাবে নতুন বই। এসব বই দিতে সরকারের বছরপ্রতি খরচ হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার আনন্দ অনুভব করতে পারেন শিক্ষকরা। যে বিপুল আগ্রহ নিয়ে ওরা নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করে তার তুলনা যেন আর কিছুতেই  হয় না। এই আনন্দের, উৎসাহের সত্যিই কোন তুলনা করা যায় না। সন্তান যখন নতুন বই নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফেরে তখন সেই খুশি স্পর্শ করে তার অভিভাবককে। হাসি ফোটে তার মুখেও। বার্ষিক পরীক্ষার পর থেকেই দেশের কোটি  কোটি কচিমুখ অপেক্ষা করে থাকে নতুন বইয়ের জন্য।

বই উৎসব বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সফল উদ্যোগ। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ষষ্ঠ থেকে দশম  শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এটি পাঠ্যপুস্তক উৎসব বা বই দিবস নামেও পরিচিত। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট কমাতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছর সরকার ২৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক প্রদানের উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি এটি প্রথম উদ্বোধন করা  হয়। একদিনে বিপুল সংখ্যক বই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ২০১০  সাল থেকে ২০২২ (বিগত শিক্ষা বর্ষ) সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মোট ৪৩৫ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার ৪১ শিক্ষার্থীদের মধ্যে  বিতরণ করা হয়েছে বই। ফলে ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি যেখানে ছিল ৬১ ভাগ, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতভাগে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বই ছাপানো থেকে শুরু করে বই বিতরণ পর্যন্ত পুরো কাজটি করে থাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি।
 
বছরের প্রথম দিন নানা রঙের বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিশুরা আনন্দে তাদের দুই হাতে রঙিন বইগুলো ঊর্ধ্বে তুলে ধরে শিক্ষা বিষয়ক নানা রকম স্লোগান যেমন- ‘নতুন বছর নতুন দিন, নতুন বইয়ে হোক রঙিন’, ‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে ফুলের মতো ফুটবো, বর্ণমালার গরব নিয়ে আকাশ জুড়ে উঠব’- ইত্যাদি গাইতে গাইতে আনন্দ উল্লাসে বরণ করে নেয় নতুন শিক্ষা বর্ষের ‘বই উৎসব’। টানা তেরো বছর ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিগত করোনা ভাইরাস মহামারির কারণেও থেমে  ছিল না এই কার্যক্রম। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বই। শিক্ষায় বাংলাদেশের এই মহতী  উদ্যোগ ইউনেস্কো সহ সারা বিশ্বে আজ প্রশংসিত। বই বিতরণে প্রচলিত প্রাথমিক, প্রাক-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক (বাংলা ও  ইংরেজি ভার্সন) স্কুলের বাইরে রয়েছে এবতেদায়ি, দাখিল, শিক্ষক নির্দেশিকা এবং কারিগরি (ট্রেড বই), ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) পাঠ্যপুস্তক। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে কাঁচামাল ও ডলার সংকট ছাড়াও নানা রকম ভুল ত্রুটি অসঙ্গতি হতে পারে। মুদ্রণ বিভ্রাট, পাতা এলোমেলো থাকা, ছাপার মান খারাপ, বানান ও মুদ্রণ  ভুল ইত্যাদি অভিযোগ এসেছে বিগত সময়েও। তবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভুল তথ্য, কোনো কবিতাংশ কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে অসঙ্গতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। মুদ্রণের আগে এই বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। আরও খবর আসছে মফস্বলে অনেক স্কুল প্রধান শিক্ষকগন টাকার বিনিময়ে ছাত্রদের হাতে বই তোলে দিচ্ছে যা কাম্য নয়।
 
তারপরও বছরের প্রথম দিনে উৎসবের মাধ্যমে কোটি কোটি বই বিতরণ বর্তমান সরকারের  এক বিশাল অর্জন। প্রাথমিকের  সব শিক্ষার্থী আজ উপবৃত্তি পায়। প্রতি মাসে তাদের উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়। এটাও কম বড় অর্জন নয়। আমাদের দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি নিয়ে আমরা আজ গর্বিত। বিনামূল্যে বই বিতরণের মধ্যে দিয়ে যে বিশাল উৎসবের সূচনা হয়েছে তা এক সময় আরও বহুদূর ছাড়িয়ে যাবে। সময়ের সাথে সাথে বই বিতরণ কর্মসূচিও আরও এগিয়ে যাবে। দেশে শতভাগ শিক্ষিত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বই বিতরণ কর্মসূচির ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে আনন্দও বৃদ্ধি পাবে। দেশের ধনী-দরিদ্র প্রত্যেকের সন্তান এক সাথে  নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরছে এ দৃশ্য অভূতপূর্ব। সংকট আছে, সংকট থাকবে, ভুলভ্রান্তি হলে সমালোচনাও হবে, কিন্তু থেমে  যাওয়া চলবে না। আগামী প্রজন্ম নিষ্পাপ শিশুদের মুখের অনাবিল হাসির দিকে তাকিয়ে ডলার সংকটের অজুহাতে চাল-ডাল-তেল সহ নিত্যপণ্য দ্রব্যের ন্যায় শিক্ষার মতো পবিত্র কাজে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে। সকল সংকট  ও বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণের এই মহা উৎসব যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। 

অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের শিক্ষা খাতেও উন্নয়ন হয়েছে। সে হিসাবে সরকার বর্তমান অর্থবছরে শিক্ষা খাতে  মোট ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের করেছে যা জিডিপির ১.৭ শতাংশ। ইউনেস্কোর মতে কোন দেশের জিডিপির ৬  শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা দরকার। বিশ্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২৩ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর প্রতি বছর বার্ষিক সূচক প্রকাশ করে, যেখানে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে চিহ্নিত করে। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে সিঙ্গাপুর। বিশ্বের ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে সেরা ২০ দেশের র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে। এই তালিকায় এবার ১৪ ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ এবং ২০২৩ সালের সূচকে ৫৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট স্কোর পেয়ে  ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রথম সারির দেশসমূহ সবচেয়ে বেশি সময়  ও অর্থ ব্যয় করে শিক্ষায়, তাদের শিক্ষাদানের পদ্ধতিও আধুনিক ও উন্নতমানের। শিক্ষা প্রদান কেবল প্রাপককে আলোকিত করে না, বরং শিক্ষক, বাবা-মা, বন্ধুর মতো শিক্ষাদাতাকেও সমৃদ্ধ করে। ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা গ্রন্থে শিক্ষার  গুরুত্ব নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন বলেন, (ক) পড়তে পারা, লিখতে পারা এবং হিসাব করতে পারা- এই  তিনটি সামর্থ্য আমাদের জীবনের মান নির্ধারণে অত্যন্ত জোরালো প্রভাব ফেলে। এগুলোর সাহায্যে আমরা কতগুলো মৌলিক সক্ষমতা অর্জন করি পৃথিবীকে বোঝা, একটি ওয়াকিবহাল জীবন যাপন করা, অন্যদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারা এবং সাধারণভাবে আমাদের চার পাশের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে অবহিত থাকা; (খ) আমাদের  অর্থনৈতিক সুযোগ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারটাও আমাদের শিক্ষাগত অর্জন ও দক্ষতার ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। লিখিত তথ্য  পড়তে পারা এবং সংখ্যার হিসাব রাখা আজকের দিনে এমনকি সাধারণ কাজেও একান্ত আবশ্যক হয়ে উঠেছে। দিনে দিনে উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রগুলো বিশেষ দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠার ফলে এটা আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে  (গ) নিরক্ষরতা মানুষের রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে রাখে এবং সরাসরি নিরাপত্তাহীনতাকে বাড়িয়ে তোলে। এখানেই  স্কুল-শিক্ষার গুরুত্ব, সেই শিক্ষার সুযোগের অভাব থেকেই নিরক্ষরতার মতো সমস্যার জন্ম, যে সমস্যা আসলে এক  ধরনের বন্দি দশা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে পথ অনুসরন করে চলেছে তা ড: সেনের বক্তব্যের সাথে সঙ্গতি পূর্ণ।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবীদ।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম?/


Comment As:

Comment (0)