ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের সমন্বিত অর্থায়নে বিকশিত হোক শিল্প খাত

অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা বজায় রেখে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত করতে হলে শিল্পায়নের গতি ব্যাপক মাত্রায় বাড়াতে হবে। এ জন্য বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমান ব্যাংকনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দিয়ে কার্যকরভাবে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এজন্য উন্নত দেশগুলোর আদলে পুঁজিবাজারকে মূলধন যোগানের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি অর্থায়নে বন্ড বা ডিবেঞ্চার ইস্যুর মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহে পুঁজিবাজারে সহায়ক নীতি ও পরিবেশ জরুরি।

মূলধন যোগানে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিবাচক সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের খেলাপী সংস্কৃতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা কঠোর করা গেলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি কমে আসবে। বাড়বে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের প্রবণতা।

ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনায় কঠোর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করে কোম্পানির আর্থিক হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরসি) কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। এই আইনের আওতায় গঠিত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে রাখতে হবে কঠোর ভূমিকা। এই কাউন্সিল আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বিদ্যমান দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে পারলে বৃহৎ কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারমুখী হবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের চেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহ দেখায়। এই ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। বড় কোম্পানির জন্য ঋণ সহজলভ্য না করে ব্যাংকিং খাতকে সম্ভাবনাময় ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এতে দেশে শিল্প বিকাশের পথ তৈরি হবে। এসব উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ নিয়ে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ধীরে ধীরে বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এ পর্যায়ে তাদের মূলধনের যোগান দেবে পুঁজিবাজার। এভাবে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের পরিকল্পিত ও সমন্বিত অর্থায়ণে বিকশিত হবে শিল্প খাত।

(বিনিয়োগবার্তা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)


Comment As:

Comment (0)