আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে রূপগঞ্জ রণক্ষেত্র, টিয়ারসেল-গুলি, আহত ৪০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, বিনিয়োগবার্তা: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস (২৬ মার্চ) পালনের অনুষ্ঠানে যোগদানকে কেন্দ্র করে রবিবার আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে প্রায় ৪০-৫০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। সংঘর্ষে পুলিশ-পথচারীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় প্রবেশ করায় যেকোনো সময় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
দুপুরে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় ঘটে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষ্যে মুড়াপাড়া স্টেডিয়াম মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সেখানে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। বিশেষ অতিথি ছিলেন তারাব পৌর সভার মেয়র মিসেস হাছিনা গাজী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুইয়া, এসিল্যান্ড সাইদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আল-আমিন দুলাল প্রমুখ।
অপরদিকে, ইছাখালী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জায়েদ আলীসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মুড়াপাড়া স্টেডিয়াম মাঠের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস অনুষ্ঠানে যোগদান করতে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সমর্থকরা আসছিলেন। এ সময় ইছাখালী এলাকায় জায়েদ আলীসহ তার লোকজনের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম রফিকের সমর্থকদের একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে কয়েকজনকে মারধর করা হয়।
দুপুর ২টার দিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় গাড়ি ভাংচুর ও মারধরের সংবাদ পেয়ে রফিকুল ইসলাম রফিক ও তার সমর্থকসহ বহিরাগতরা সশস্ত্র অবস্থায় ইছাখালী এলাকায় আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত জায়েদ আলীসহ তার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজনসহ পথচারীরাও ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। প্রায় ঘন্টাব্যপী সংঘর্ষে পথচারী, পুলিশসহ সংঘর্ষে লিপ্ত উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হন। এ সময় পুরো এলাকাজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
মিলাদ মাহফিলে থাকা প্রায় ৫ শতাধিক চেয়ার ভাংচুর করে রান্না করা খাবার নষ্ট করে ফেলা হয়। ভাংচুর করা হয় মাইকসহ সাউন্ডবক্সও।
আহতদের মধ্যে ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন, জোস্না বেগম, আরজুদা, হাসি, ফেরদৌসি, পুলিশ সদস্য শেখ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, আলাউদ্দিন, দিক বিজয়, দ্বীন ইসলাম, রিফাত, নুর আলম, জামাল বাদশা, শাহাদাত, রবিউল ইসলাম, ফয়সাল, জোবায়ের, শাকিব, আবিদ, মোহাম্মদ আলী, আবুল হোসেন, রুবেল, আওলাদের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম, রুবেল, ফয়সাল, আওলাদ ও দিক বিজয়কে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দুই গ্রুপের মুখোমুখী অবস্থানের সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুইয়ার একটি গাড়ি বহর ঘটনাস্থল হয়ে কাঞ্চনের দিকে চলে যায়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (গ অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় পক্ষকে লক্ষ্য করে ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে।
এদিকে, বিকেলে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর প্রতিবাদে ইছাখালী এলাকায় অবস্থান নিয়ে জায়েদ আলীসহ তার লোকজন প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় বহিরাগত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অপরদিকে, নাওড়া এলাকায় পাল্টা প্রতিবাদ করেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। ওই প্রতিবাদ সভায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদানে বাধা প্রদানকারীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (গ অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইছাখালী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
(এমএ/এসএএম/ ২৭ মার্চ ২০১৭)