শুধু ডিসক্লোজার ব্যাসিসে আইপিও অনুমোদন নয়
দেশের পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণে অধিকহারে ভাল কোম্পানির প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেওয়া উচিত। এতে বাজারের পরিধি বাড়ে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুধু ডিসক্লোজার ব্যাসিসে এ আইপিও অনুমোদন দেওয়া কি আসলে যৌক্তিক?
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শুধুমাত্র ডিসক্লোজার ব্যাসিসে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়ে থাকে। আর স্টক এক্সচেঞ্জগুলো শুধুমাত্র কোম্পানির দেয়া কাগজপত্রের উপরই নির্ভরশীল। এসব বিষয়ে বিএসইসি সম্প্রতি অনেক আইন কানুন সংশোধন ও সংযোজন করেছে, আরও করা হচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটিতে লোকবল সংকটের কারণে সকল বিষয় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা ব্যাংক লোন পরিশোধে বেশিরভাগ কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে অর্থ উত্তোলন করে থাকে। আইপিও’তে আসার আগে কোনো কোনো কোম্পানির প্রসপেক্টাসে মুনাফা,ইপিএস ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হলেও দুই তিন বছর গেলেই সেগুলোর আসল রহস্য উন্মোচিত হয়। প্রফিট কম দেখানো, ডিভিডেন্ড না দেয়া, পরিচালকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়াসহ নানা সমস্যায় আবর্তিত হয় কোম্পানিগুলো।
এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কোম্পানির পরিচালক খারাপ অবস্থায় রয়েছে এমন উদাহরণ সচারচর নেই। তালিকাভুক্ত এমনও অনেক কোম্পানি রয়েছে, যেসবের পরিচালকরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজ মালিকানাধিন অন্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে এবং তারা লাভবান হচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছর তারা লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড বঞ্চিত করছে। তাদের কাছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মানেই লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। ক’দিন পর দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ঋণ আদালতে মামলা হয়েছে, পত্রিকায় বিশাল বড় নিলাম বিজ্ঞপ্তি চলে এসেছে।
কিন্তু এগুলো দেখার দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকলেও নানা কারণে তারা সববিষয় নজরদারিতে আনতে পারছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু ডিসক্লোজার ব্যাসিসে আইপিও অনুমোদন দেয়া সবক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয়। আইপিও অনুমোদনের আগে বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি দলের সরাসরি ফ্যাক্টরী পরিদর্শন করা সময়ের দাবি। একইসঙ্গে কোম্পানির দেয়া তথ্য অনুসন্ধানের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন দেয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
এছাড়া ফিনান্সিয়াল রিটোটিং অ্যাক্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
(বিনিয়োগবার্তা/ ০৯ মে ২০১৮)