সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে চাই শক্তিশালী পুঁজিবাজার

মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এ উন্নতি শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য আর স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। বরং দেশের সার্বিক অর্থনীতি, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং প্রকৃত অর্থেই একটি স্থিতিশীল আর্থসামজিক অবস্থা সৃষ্টিই হবে এ উন্নয়ণের মূলমন্ত্র। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সবার আগে নজর দিতে হবে দেশের আর্থিক ভীতের ওপর। আর আর্থিক ভীত মজবুত করতে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও পুঁজিবাজারের দিকে নজর দিতে হবে। যেদেশের ব্যাংক ও পুঁজিবাজার স্বচ্ছ ও মজবুত, সেদেশের অর্থনীতি তত বেশি গতিশীল। সরকারও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।

ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জেকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ অপর বাজার চট্ট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি, দেশের পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনের প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থায়ন ও তালিকাভুক্তির জন্য স্মল ক্যাপ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷ ওটিসি মাকের্টের জন্য নতুন বাজার কাঠামো তৈরী ও আলাদা রেগুলেশন অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ওভার দি কাউন্টার বুলেটিন বোর্ড) রেগুলেশন, ২০১৭ নামে খসড়া তৈরি করে বিএসইসি’র কাছে জমা দিয়েছে৷ বিএসইসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে ওটিসি মার্কেটকে একটি স্বয়ক্রিয় অত্যাধুনিক মার্কেটে রূপান্তরিত করে নন-লিষ্টেড কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনের সুযোগ তৈরী করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্লিয়ারিং এন্ড সেটেলমেন্ট) বিধিমালা, ২০১৭ এর অধীনে ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএল এর যৌথ উদ্যোগে ক্লিয়ারিং এন্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে ‘ন্যাশনাল ক্লিয়ারিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে কোম্পানি নিবন্ধনের কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে৷  যা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়৷

জাতিসংঘের সাসটেইন্যাবল স্টক এক্সচেঞ্জের উদ্যোগে যুক্ত হতে একটি প্রতিশ্রুতি পত্রে স্বাক্ষর করেছে ডিএসই৷ এই উদ্যোগ বিশ্বের ৭৫টি স্টক এক্সচেঞ্জকে একত্রিত করেছে যারা তথ্য আদান প্রদান এবং পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতার উন্নয়নে স্টেকহোল্ডারগণের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এই সহযোগিতা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও দক্ষ ইএসজি (এনভাইরনমেন্টাল, সোস্যাল ও করপোরেট গভর্ণেন্স) প্রতিবেদন আসার সুযোগ তৈরি করবে যাতে পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারগণ উপকৃত হবেন৷

ডিএসই মোবাইল অ্যাপে বেশ কিছু সিকিউরিটি ফিচার সংযোজন করা হয়েছে৷  এই অ্যাপকে আরও বেশি ইউজারফ্রেন্ডলী করার সিদ্ধান্ত হাতে নেয়া হয়েছে৷ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পণ্যের বৈচিএতা আনয়নে নতুন প্রোডাক্ট এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড চালুর প্র্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে যা খুব শীঘ্রই চালু হবে৷

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দেশের পুঁজিবাজারের পরিধি যেমনিভাবে বাড়বে তেমনি বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জন ও পুঁজিবাজারে বিদ্যমান সংকট দূর হবে৷ আর দেশের পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হলে দেশের অর্থনীতির চিত্রও পাল্টে যাবে।

(বিনিয়োগবার্তা/০২ জুলাই ২০১৮)


Comment As:

Comment (0)