অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে পুঁজিবাজারের যথাযথ পরিচর্যা করুন

অতীতের সব ইতিহাস ছাড়িয়ে সামনের দিনগুলো পুজিবাজারের জন্য হতে পারে স্বর্ণসময়। বিনিয়োগকারীদের পুজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়ার ফলে বাজারের লেনদেন ও সূচক এবছর যে পর্যায়ে রয়েছে, আগামী বছরে তাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে; যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের মতো স্থিতিশীল থাকে। কারন পুঁজিবাজারের মত নাজুক জায়গায় রাজনৈতিক যেকোন পরিবর্তনই বিনিয়োগকারীদের ভীতু করে ফেলে।

২০১৭ সাল পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে থাকার প্রধান কারন হতে পারে ব্যাংকের সুধের হার কমে যাওয়া। কম ইন্টারেস্ট রেটের কারনে অনেকেই বাজারের দিকে লেনদেনে চলে আসতে পারে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাও কমে এসেছে। আবাসনসহ অন্য খাতে বিনিয়োগের চিত্রও খুব লাভজনক নয়।

এছাড়া পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী হওয়ার অন্যতম কারন হতে পারে ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য। এতে বিনিয়োগকারীদের সাথে সামনে এগিয়ে আসতে পারে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জ- ডব্লিউএফই-এর পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পুঁজিবাজার কমপ্লায়েন্সের বিভিন্ন শর্ত পূরণের পর ডিএসইকে এ সদস্যপদ দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি। ডিমিউচুয়ালাইজড হওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জের এ সংস্থাটির প্রাথমিক সদস্যপদ পেয়েছে ডিএসই। এজন্য ডিএসইকে অতীতের ব্যর্থতা ও সফলতা তুলে ধরতে হয়েছে।

তাই পরবর্তীতে তাদের শর্ত পরিপালন হলে পূর্ণ সদস্যপদ পাবে ডিএসই। আর ২০১৭ সালেই  ডব্লিউএফইর পর্যবেক্ষণ শেষে এ সদস্যপদের কার্যকারিতা হবে। যা হবে ডিএসইর ইতিহাসের বড় অর্জন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সংস্থা ডিএসই এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত পূরণ করে আইএসওর সনদও পেয়েছে।

এদিকে অনেক বিনিয়োগকারী ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে নতুন পরিকল্পনা তৈরী করছেন; যাতে বাজারের ধ্বস পরবর্তী সময়ের পর অনেক পরিপক্ক একটি বাজার পাওয়ার আশা করা যায়। উভয স্টক এক্সচেঞ্জই ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত পূরনের জন্য কাজ করবে। এরই মধ্যে ডিএসইর স্টাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী পাওয়ার জন্য বছাই প্রক্রিয়া চলছে। তাই ২০১৭ সালকে কেন্দ্র করে ডিএসইও সিএসই উভযেরই রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এখন শুধু অপেক্ষা সরকারের সাম্প্রতিক অগ্রগতির সাথে পুজিবাজারকে টেনে তোলার ভূমিকার। তাহলে এই পুজিবাজারই বংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সহযোগিতা করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বেসরকারী খাতের উন্নয়ন এবং বড় বড় অবকাঠামো নির্মানের টাকার যোগান দেওয়ার অন্যতম স্থান হতে পারে পুঁজিবাজার। তেমনিভাবে বড় শিল্পগ্রুপ, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার মাধ্যমে এই বাজারের গভীরতা অনেক বাড়ানো যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারে তালিকাভূক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কেন এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ণ করা যাচ্ছে না, তা খুঁজে বের করার সময় এসেছে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনতে সর্বোচ্চ তদারকি করাও প্রয়োজন। প্রয়োজনে আইনকানুন বা বিধিবিধান পরিবর্তন করে হলেও এদেরকে বাজারে আনুন। এক্ষত্রে কোনো ধরনের প্রীতি থাকলে চলবে না। এসব বিষয় নিয়ে নীতিনির্ধারনী মহল কার্যকর উদ্যোগ নিবেন বলে আমরা আশা রাখছি। যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার তথা কোটি মানুষের ভাগ্য বদলের চিত্রই হতে পারে সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব। এছাড়া দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে স্বাধীণতাকে পরিপূর্ণ অর্থবহ বলা যায় না। তাই দেশের জিডিপিতে যেন পুঁজিবাজার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে, পুঁজিবাজারের পথ ধরে যেন অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

(বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা/ ১৭ এপ্রিল ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)